নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাপ্তাইয়ে বাঁশ পাচার চলছে, বাঁশ শিল্প হুমকির মুখে
শান্তি রঞ্জন চাকমা, কাপ্তাই : জুন, জুলাই ও আগষ্ট তিন মাস সকল প্রকার বাঁশ আহরণ, কর্তন ও বিপনণ বন্ধে বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাচার চলছে। বন্ধ মৌসুমে কাপ্তাইয়ে বাঁশ ঝাড় উজার থেমে নেই। বাঁশের কচি মাথা (বাঁশ কড়ুল) সবজি হিসেবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে। সাত-আট টি কচি বাঁশ থেকে এক কেজি সবজি ৩০-৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। একটি পরিপক্ক বাঁশ বিক্রি করলে কমপক্ষে ৩০-৫০ টাকা বিক্রি হয়। বন্ধ মৌসুমে বাঁশের দাম বেশী থাকায় সরকারী ও নিজস্ব বনায়ন থেকে আহরন ও বিক্রি করা হচ্ছে। বংশ বিস্তারের মৌসুমেও সরকারী নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না।
কাপ্তাই উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার কারিগর বানিজ্যিক ও সৌখিন পেশা হিসেবে বেতের আসবাবপত্র তৈরী করেন। বাঁশের তৈরী বিভিন্ন প্রকারের আসবাবপত্র রাইখালী বাজার, কাড়িগরপাড়া, বড়ইছড়ি বাজার, কাপ্তাই জেডিঘাট, চিৎমরম বাজারে হাটের দিন বিক্রি করে। ওয়াগ্গা, চিৎমরম, কাপ্তাই, রাইখালী ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে শতশত উপজাতীয় পরিবার নিজেরা ব্যবহারের জন্য বাঁশের আসবাবপত্র তৈরী করেন।
রাইখালী ইউনিয়নের মংসাই মারমা বলেন, বাঁশ একটি উপকারী উপকরণ। তাঁর প্রায় এক একর জায়গায় বাঁশ বাগান রয়েছে। প্রতিবছর ৫০-৬০ হাজার টাকার বাঁশ বিক্রি করেন। গত কয়েক বছর আগে বাঁশের মড়ক, ফুল আসা ও ইদুর বন্যার কারনে লক্ষ লক্ষ বাঁশ নষ্ট হয়। চিৎমরম বড়পাড়ার গৃহবধু ক্যাংমা মারমা জানান, বাঁশ বেতের তৈরী উপকরণ স্থানীয়দের মাঝে খুবই জনপ্রিয়। বাঁশের মাচাং ঘর, ছাউনি, বেড়া, দোলনা, জুড়ি, লাই, তুরুম, বাঁশি, যোগাযোগ কাজে সাঁকো, সেতু, কৃষি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে বাঁশের ব্যবহার হয়।
রাইখালীর বিষু তংচংগ্যা বলেন, গৃহস্থলী কাজের জন্যে বাঁশ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। উৎসব, পালা, পার্বণে বসার উপকরণে ছিল বাঁশের তৈরি চাটাই। উপজেলার দূর্গম এলাকার অধিকাংশ মানুষ ছন বাঁশের নির্মিত বাড়িতে বসবাস করে। বেড়া, জানালা বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর জলবায়ু আবহাওয়া পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো পরিবেশ বান্ধব “পাহাড়ী ঘর”।
ওয়াগ্গা ইউনিয়নের সমীরন তংচগ্যা বলেন, একসময় এশিয়ার বিখ্যাত কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড (কেপিএম) কাগজ উৎপাদনের মুল উপকরণ ছিল বাঁশ। স্থানীয় পাহাড়ে উৎপাদিত বাঁশ দিয়ে উন্নত মানের টেকসই কাগজ উৎপাদন হত। এ অঞ্চলে বাঁশ ব্যবসা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জোরালো ভূমিকা রেখেছিল। হাজার হাজার মানুষ বাঁশ ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।
রাইখালী ইউনিয়নে সাবেক এক ইউপি সদস্য সৌখিনতা বসত বাঁশ দিয়ে কারুশিল্পর কাজ করেন। নিজের তৈরী আসবাবপত্র ব্যবহার ও বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি করেন। ইউপি সদস্য জানান, বাঁশ বাগান ধ্বংসের কারণে বাঁশের তৈরি কারুকাজ কমে গেছে। যার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ বয়সে তিনি নিজের এমন একটা বাঁশের কারুকাজ অভিজ্ঞতাকে এখনো হাতে ধরে রেখেছেন।