পানছড়িতে সাংবাদিক অলির উপর দুর্বৃত্তের হামলা
স্টাফ রিপোর্টার: পানছড়ি প্রেসক্লাব সেক্রেটারি ও দৈনিক আজকের পত্রিকা উপজেলা প্রতিনিধি রাশেদুজ্জামান অলিকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। সোমবার ৪ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে দশ ঘটিকায় পানছড়ি-লোগাং সড়কের মগপাড়া নামক স্থানে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। মাথায় ১২টি সেলাই নিয়ে বর্তমানে পানছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি রাশেদুজ্জামান অলি জ্ঞান ফেরার পর মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর সকালে জানান, সকাল ৯ ঘটিকায় তিনি তার অসুস্থ মেয়ের জন্য কবিরাজি ওষুধ আনতে মোটর বাইকে একাই লোগাং বাজারে যান। ওষুধ নিয়ে ফেরার পথে মগপাড়ায় পৌঁছালে সামনে একটি ট্রাকের থেমে থেমে যাচ্ছিল। সরু সড়ক হওয়ায় এবং বিপরীত পাশ থেকে একটি ইজি বাইক আসায় তিনি ওভারপাস করতে পারছিলেন না। ট্রাকটি থেমে থাকায় তিনিও বাইক থামান। একটু পরে তিনি ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে মোটরসাইকেল সহ নিচে পড়ে যান। তারপর আর কিছুই মনে নেই। সড়কের একপাশে রক্তাক্ত অলিকে দেখতে পেয়ে ওবায়দুল হক আবাদ স্থানীয় এক নেতা ঐ রাস্তায় ভিড় দেখে মুমুর্ষ অবস্থায় পরে থাকা আহত সাংবাদিক অলিকে সিএনজি করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
উদ্ধারকারী আবাদ জানান,, সিএনজি করে আসার পথে সড়কে তিনি একটা জটলা দেখে গাড়ি থামান। এরপর রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকা ব্যক্তিকে উল্টিয়ে চিনতে পারেন এবং হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে তিনি শুনেছেন অটো রিকশার সাথে এক্সিডেন হয়েছে। সরজমিনে পানছড়ি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহত অলির মাথার পিছনে সেলাই করা, গাড়ে জখম ও ফুলা, মুখের বিভিন্ন অংশ কিছুটা ছোলানো। এছাড়া ওনার আর কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। হাসপাতালের বাইরেই ছিল তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল। মোটরসাইকেলটি পুরাপুরি অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। লোকমুখে শোনা যায় সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান অলি ইজি বাইকের সাথে সংঘর্ষে আহত হন। আর কাউকে বলতে শোনা যায়, ট্রাকের সাথে তার মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এসব কথা যারাই বলাবলি করছেন তারা কেউই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নন। বরং তারা লোক মোখে এসব জেনেছেন।
মোটরসাইকেলটির সার্বিক অবস্থা এবং আহত অলির শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আপাতত দৃষ্টিতে এটিকে বাইক দুর্ঘটনা বলে বিশ্বাস করছেন না তার শুভাকাঙ্ক্ষী ও নিকট আত্মীয়রা। ঘটনাস্থলে অক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকা তার মোটরসাইকেল, সানগ্লাস ও আরও কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেলেও মাথার হেলমেট এবং জনশ্রুতির ইজি বাইকের কোন হদিস পাওয়া যায় নি। এমনকি ইজি বাইকের কোন চালক কিংবা যাত্রীও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে নি। বিছানায় যন্ত্রণায় কাতর অলি জানান, গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত অজ্ঞাতে কিছু লোক তার বাড়ির বাহিরের গেইট সজোরে ধাক্কাতে শুরু করে। ভয়ে কেউ তারা বাড়ির বাইরে আসেন নি। সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান অলি ইতিপূর্বেও ২০০৭, ২০১০ ও ২০১৮ সালে সংবাদ সংগ্রহের সময় হামলার শিকার হন। এরপরও তিনি সাহসিকতার সাথে সঠিক সংবাদ প্রকাশে অটুট থাকেন। সর্বশেষ খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগে ও বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এলাকায় না থেকেও তাকে মামলার আসামী করা হয়। যদিও রাশেদুজ্জামান অলি কোন প্রকার রাজনীতির সাথে জড়িত নন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তার সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও স্থানীয় দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে সমাজে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিতি বিদ্যমান। সাংবাদিক রাশেদুজ্জামান অলির উপর বারবার এমন আক্রমণের ঘটনা ও গতকালের হত্যাচেষ্টাকে বাইক দুর্ঘটনা বলে অপপ্রচার করায় ইতিমধ্যে সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।