ফটিকছড়ির এমপি নজিবুল বশরসহ চট্টগ্রামের ৫ এমপি’র সম্পদ বেড়ে ৫ গুণ
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: ফটিকছড়ির এমপি নজিবুল বশরসহ চট্টগ্রামের পাঁচ এমপি’র সম্পদ বেড়েছে ৫ গুণ। গত পাঁচ বছরে এ পরিমাণ সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনের মহাজোটের এসব এমপিদেরও । গত ২৮ নভেম্বর বুধবার মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামা থেকে তাদের ও তাদের উপর নিভর্রশীল ব্যক্তিদের সম্পত্তির পরিমাণ পাওয়া গেছে। হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্যমতে ৫ বছরে নজিবুল বশরের আয় বেড়েছে ৫ গুণ। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবারও মহাজোট থেকে ফটিকছড়ি আসনে নিবার্চন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় পাঁচ গুণ আয় বেড়েছে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির। বতর্মানে তার বাষির্ক আয় ৩৬ লাখ ৪৯ হাজার। ২০১৪ সালের আগে যা ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যানের গত ৫ বছরে স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ না বাড়লেও অস্থাবর সম্পত্তির আথির্ক মূল্য বেড়েছে। সাংসদ হিসেবে গত পাঁচ বছরে তিনি ভাতা পেয়েছেন ২৪ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, গতবার নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির পেশা ছিল পরামশর্ক। এখন তিনি পরামশের্কর পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন। বতর্মানে তার স্ত্রী ও দুই পুত্রের অস্থাবর সম্পত্তির আথির্ক মূল্য ২ কোটি ৬৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আগে তার কোনো স্থায়ী আমানত (এফডিআর) না থাকলেও বতর্মানে ১৫ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে। গত নিবার্চনের আগে স্ত্রী ও ছেলেদের নামে গাড়ি না থাকলেও বতর্মানে তাদের গাড়ি আছে। অবশ্য নজিবুল বশরের দাবি, গাড়ি আগে যা ছিল এখনো তা আছে।
২০১৪ সালের আগে নজিবুল বশর ও তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ঋণ ছিল ২৮ লাখ ১৩ হাজার ২৩৬ টাকা। এখন স্ত্রী ও দুই ছেলের নামে ব্যাংক ঋণ আছে ৩৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগে নজিবুল বশরের নগদ টাকা ছিল ৪ লাখ ৩৪ হাজার, এখন আছে ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। নির্বাচিত হওয়ার আগে তার পুত্রের ব্যবসার মূলধন ছিল ৪২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ লাখ ১৪ হাজার টাকায়।
হলফনামার তথ্য প্রসঙ্গে নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারির মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তার ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন শাহ বলেন, ‘উনার (এমপি’র) সব বৈধ আয়। কীভাবে আয় হয়েছে তার বিস্তারিত সব তথ্য হলফনামায় জমা দেয়া আছে। কোনো কিছু গোপন করেননি। সবকিছুর আয়কর দেয়া হয়েছে। তার নামে কোনো ঋণ না থাকলেও ছেলেদের ঋণ আছে।’
১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির হয়ে নিবার্চন করেছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আনোয়ারের কাছে হেরে যান। ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন না করলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নিবার্চনে মহাজোটের শরীক দল হিসেবে তরিকত ফেডারেশন হয়ে নৌকা প্রতীকে নিবার্চন করে সাংসদ নির্বাচিত হন।
হলফনামায় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, হেঁয়াকো-ফটিকছড়ি সড়কের উন্নয়নে ২৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান আছে। হাটহাজারী-ফটিকছড়ি সড়ক প্রশস্তকরণে ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে। সম্প্রতি এই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন হয়। এখনো কাজ শুরু হয়নি।
এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আসন থেকে ২০১৪ সালে প্রথমবার সংসদ সদস্য হয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই সময়ে কোটিপতি বনে গেছেন তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরী। তিনি পেশায় গৃহিণী। নগরীর হালিশহর-পাহাড়তলী আসনের এমপি ডা. আফছারুল আমীন ও তার স্ত্রীর পাঁচ বছরের ব্যবধানে নগদ ও ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। ২০১৪ সালে এ দম্পতির হাতে নগদ ও ব্যাংকে ছিল এক কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬০২ টাকা। এখন এর পরিমাণ চার কোটি ৯৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে পাঁচ বছর আগে প্রথম এমপি হওয়া সীতাকুণ্ডের দিদারুল আলমের বার্ষিক আয় ৮৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭০১ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে তিন কোটি ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫৭ টাকা। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১৭টি থেকে বেড়ে হয়েছে ২৩টি।
আয়ের কোনো উৎস না থাকলেও বাঁশখালির এমপি মোস্তাফিজের স্ত্রী পাঁচতলা একটি ভবনের মালিক। ১০ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় লাখ টাকা, দুই লাখ টাকার স্বর্ণ ও লক্ষাধিক টাকার আসবাবপত্র রয়েছে তার নামে। এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের রয়েছে ৪৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ১০ লাখ টাকা। ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি টয়োটা প্রাডো জিপ ও ১ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার নিজ নামে দেখিয়েছেন এমপি মোস্তাফিজ। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে তার নামে চার একর কৃষিজমি ও ঢাকায় তিন কাঠা জমি রয়েছে। তিনি এবার হলফনামায় তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২০ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা।
১০ বছর আগের নবম সংসদ নির্বাচনের সময় এমপি আফছারুলের কাছে নগদ ছিল ১৮ হাজার ১ টাকা। তার স্ত্রীর কাছে ছিল ৩ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৫ টাকা। কিন্তু এবার জমা দেওয়া হলফনামায় এমপি আফছারুল নিজের কাছে চার কোটি ৮ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকার পাশাপাশি স্ত্রীর কাছে দেখিয়েছেন ৮৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা। ১০ বছরের ব্যবধানে এই দম্পতির নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১১৯ গুণ। তবে পাঁচ বছর আগের তুলনায় এই দম্পতির নগদ টাকা বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ। ২০১৪ সালে নগদ ও ব্যাংকে এক কোটি ৪৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬০২ টাকা ছিল। তবে আফছারুলের স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে মোট সম্পত্তি রয়েছে পাঁচ কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার ৪৩ এবং তার স্ত্রীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে রয়েছে দুই কোটি আট লাখ ৯৩ হাজার ২৭ টাকা।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম পাঁচ বছর আগে তার আয় দেখিয়েছিলেন ৮৩ লাখ ৭৪ হাজার ৭০১ টাকা। এখন তার আয় বেড়ে হয়েছে তিন কোটি ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫৭ টাকা। তবে চারটি ব্যাংকে ১৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে তাঁর। আর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্রুপ ঋণ রয়েছে ৯৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এবার তিনি অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন ২০ কোটি ৫৮ লাখ ২২ হাজা