ফটিকছড়ির ভূজপুর আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ভূজপুর গুচ্ছ গ্রাম (আশ্রয়ন প্রকল্প)নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মানের জন্য ইতোমধ্যে পাশের টিলা কেটে মাটি ভরাট করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারী মাসে প্রকল্পটির সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
তবে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় জানালেন অর্থ বরাদ্দ দেরিতে পাওয়ায় কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সব ধরনের নির্মান সামগ্রীর গুনগত মান ঠিক আছে বলেও দাবী করে তিনি বলেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সূত্র জানায়, উপজেলার পশ্চিম ভূজপুর বারেকের ঘোনা এলাকায় ২০০ শতক জমিতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ঘর তৈরীর জন্য ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রনালয় ৫৪ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেন ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে। সেখানে ভূমিহীনদের জন্য ৪০টি ঘর তৈরি করার কথা। প্রকল্প ব্যয় নির্ধারন করা হয়েছে ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৫শত টাকা।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখনো পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। যে সব ঘর নির্মান করা হচ্ছে তাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্মমানের নির্মান সামগ্রী। ঘর তৈরির কাজে ব্যবহৃত পিলার(খুঁটি)গুলো খুবই নিম্মমানের। ছাউনির কাজে ব্যবহৃত টিন এবং বেড়ার গুনগত মানও খুবই নিম্ম। ঘরের ছালার যে ব্যাসার্ধ তাতে বর্ষা মৌসুমে অল্প বৃষ্টি বা ঝড়ো বাতাসে ঘরের ভিতরের অংশ ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া উঁচু জমিতে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা অনুসরন করা হয়নি। বন্যা কবলিত নীচু ধানি জমিতে তৈরি করা হচ্ছে এসব বসতঘর। প্রকল্প এলাকার তিন পাশে টিলা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হতে পারে এসব বসতবাড়ি। এ ছাড়া গুচ্ছগ্রামটিতে যে সব পরিবারকে পূর্নবাসন করা হবে তাদের যাতায়াতের জন্য নেই কোন উপযোগি সড়ক ও ব্রিজ ।
ইতোমধ্যে টিলা কেটে যেসব মাটি জমিতে দেয়া হয়েছে গত বর্ষায় পাহাড়ি ¯্রােতে মাটি সরে গেছে। এছাড়া এ জমিতে এর আগে যারা চাষাবাদ করত তাদেরকেও দেয়া হয়নি কোন ক্ষতিপূরন। ভূজপুর ইউনিয়ন সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থান এ গুচ্ছগ্রামের। আসা যাওয়ার পথে কাঁচা রাস্তায় বেশ কয়েকটি ছোট ছড়া রয়েছে যেখানে কোন কালভার্ট নেই। স্থানীয়রা এসব স্থানে বাঁশের সাঁকো আর ব্রিজ বানিয়ে চলাচল করছে। এদিকে প্রকল্পের শুরুতেই পরিবেশ ও ভূমি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে অবাধে পাহাড় কেটে মাটি ভরাট করা হয়েছে। ভূমিহীন গরীব কৃষকের চাষাবাদের জমি কেড়ে নেওয়াসহ ৫৪ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য আত্মস্বাদের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় কৃষক শামসুল হক (৪২) বলেন, ভূজপুর ইউপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হামিদ মেম্বার স্ক্যাবেটর আর ২০-২৫ জন শ্রমিক দিয়ে টিলা গুলো কেটে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করেছে। বর্ষা কালে বৃষ্টি হলে টিলা গুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন (২২) জানান, শুষ্ক মৌসুম যেমন তেমন, বর্ষা মৌসুমে এখানে সাধারণ মানুষের আসার প্রশ্নই আসেনা। বর্ষার সময় কৃষকরা বন্য হিং¯্র পশুর আক্রমনের ভয়ে আসে দল বেঁধে। এখানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প করার নামে টিলা কেটে টিলার চিলায় গরীবের ধানী জমি গুলো নষ্ট করা হচ্ছে। গুচ্ছগ্রামটিতে যেতে হলে কমপক্ষে ৫-৭টি ব্রীজ বা কালভার্ট দরকার । এলাকায় পানি ও বিদ্যুৎ নাই। এসব অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বিষয় গুলো নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করার জন্য বলেন। টিলা কাটার বিষয় অস্বীকার করে ভূজপুর ইউপি’র সাবেক সদস্য আবদুল হামিদ বলেন, মাটি ভরাটের জন্য ৫৪টন গম বরাদ্ধ হয়েছিল। সেগুলো বিক্রি করে টিলার পাশ গুলো কেটে সমান করা হয়েছে মাত্র। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। আমি দায়িত্বে থাকার সময় প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এখন সেদিকে গেলে লোকে মন্ধ কথা বলে। বাকি কাজ গুলো ফটিকছড়ির ইউএনও এবং পিআইও দেখছেন। প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, সেখানে টিলা কেটে জমি ভরাটের কোন নির্দেশনা নেই। বাইরে থেকে মাটি এনে ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, আমাদের কার্যালয় থেকে পাহাড় কাটার কোনো ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, অর্থ বরাদ্দ যথা সময়ে না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। টিলা কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, কোথাও মাটি না পাওয়ায় টিলার অংশ বিশেষ কাটা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে। তবে খুব দ্রুত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।