মহান ১০মাঘ: লাখো ভক্তের মিলন মেলা মাইজভান্ডারে
এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: লাখো ভক্ত-আশেক-অনুরক্তরা মিলন মেলায় মিলিত হয়েছে মাইজভান্ডারে। কারণ আজ ১০ মাঘ বাংলার জমিনে মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক ও আধ্যাতিœক সরাপতের প্রতিষ্টাতা গাউছুল আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল¬াহ মাইজভান্ডারী (ক.) ১১২তম বার্ষিক ওরশ শরীফ। এ উপলক্ষ্যে গত রবিবার থেকে শুরু হয়েছে ওরশের আনুষ্টানিকতা। এই ওরশ শরীফে দেশ-বিদেশের লাখো ভক্তের সমাগম ঘঠেছে বিগত ৩-৪ দিন পূর্ব থেকে। আজ রাত ১২.০১ মিনিটে স্ব-স্ব মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীনেদের আখেরী মুনাজাত করবেন শাহসুফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), শাহসূফী ডা: সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) সৈয়দ মোহাম্মদ হ্সাান মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের প্রধান ওরশ উপলক্ষ্যে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, দরবারে গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিল, গাউছিয়া হক মঞ্জিল, রহমানীয়া মঞ্জিল, মঈনীয়া মঞ্জিল কোরআন খতম, খতমে গাউছিয়া, খতমে খাজেগান, মিলাদ মাহফিল, হালকায়ে জিকির, ছেমা মাহফিল, বিশেষ মুনাজাদ ও সকল মাজার গুলোকে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করেছে। এ উপলক্ষ্যে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও ফটিকছড়ি থানা পূলিশ ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষায় থানা পুলিশ-র্যাব-আনসার ও দুই সহস্রাদিক বিশেষ সেচ্ছা সেবক বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে।
দরবারে-গাউছিয়া আহমদিয়া মনজিলের শাহাজাদা ডাঃ সৈয়দ হোসেইন সাইফ নিহাদুল ইসলাম মাইজভান্ডারী জানান, গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর ১১২তম ওরশ উপলক্ষ্যে তিনি যেই ঝাঁন্ডা নিয়ে হাসরের ময়দানে প্রবেশ করবেন বলে জানান দিয়েছিলেন বিভিন্ন কালামে, সেই নামানুসারে ”লেওয়া-ই-আহমদী” নামক একটি মুখ্যপত্রের মোড়ক উম্মোচন করা হয়েছে সোমবার বাজে আছর। আর সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.)র জীবনী, শান-মান সম্ভলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
গাউছিয়া আহমদীয়া মনজিল (শাহ এমদাদীয়া)’র নায়েবে সাজ্জাদানশীন সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভান্ডারী বলেন, বংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বার্মা, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও ধর্ম প্রাণ মুসলমানরা মাইজভান্ডার শরীফে আসবেন। আমরা পুরো ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যে, যেমন- প্রতি ক্যাম্পে-ক্যাম্পে প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা, ধর্মীয় রীতি-নীতি মেনে ওরশ শরীফ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মাইজভান্ডার ওরশের পটভূমি:
সৈয়দ হামিদ উদ্দীন গৌড়ী ১৫৭৫ সালে ইসলাম প্রচার মানসে চট্টগ্রামে আগমন করে পটিয়া থানার কাঞ্চননগরে বসতি স্থাপন করেন। তারই বংশধর মাওলানা সৈয়দ মতিউল¬াহর সৈয়দ মতিউল¬াহর পবিত্র ঔরসে ১৮২৬ সালে, হিজরী ১২৪৪, ১২৩৩ বাংলা ১লা মাঘ, বুধবার জোহরের সময় হযরত শাহ সুফী সৈয়দ আহমদ উল¬াহ মাইজভান্ডারী (কঃ) জন্ম গ্রহন করেন। ১২৬০ হিজরিতে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতা গমন, ১২৬৮ হিজরিতে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করেন এবং হাদিস, তাফসির, ফেকাহ ইত্যাদি শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। ১২৬৯ হিজরিতে যশোর জেলায় কাজী (বিচারক) পদে যোগদান করেন। ১২৭০ হিজরিতে সেই কাজী পদ থেকে পদত্যাগ করে কলকাতার মুন্সি বু-আলী মাদ্রাসায় প্রধান মোদাররেস পদে যোগদান করেন। তার পীর গাউছুল আজম মহিউদ্দীন আবদুল কাদের জীলানীর (রহ.) বংশধর শেখ সৈয়দ আবু শাহমা মুহাম্মদ ছালেহ আল কাদেরী লাহোরী (রহ.) এর নিদের্শে ১৮৫৭ সালে নিজ গ্রাম মাইজভান্ডারে ফিরে আসেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার কামালিয়তের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ঐশী-প্রেম পিপাসু সাধক ও দোয়া প্রত্যাশীদের ভিড়ে এই সাধকের পবিত্র বাসগৃহ আধ্যাত্মিক দরবারে পরিণত হয়। লোকসমাজে পরিচিতি পায় মাইজভান্ডার দরবার শরিফ হিসেবে। তিনি একমাত্র বাঙ্গালী সূফী সাধক। যিনি বাংলার জমিনে স্বতন্ত্র এক তরিকা প্রতিষ্টা করেন। যার নাম মাইজভান্ডারী তরিকা। ৭৯ বছর বয়সে ১৯০৬ ক্রিস্টাব্দে ১০ মাঘ সোমবার রাতে ইহধাম ত্যাগ করেন এ মহান সুফি সাধক। তার ওফাত দিবস উপলক্ষে প্রতি বছর ৮, ৯ ও ১০ মাঘ ৩ দিনব্যাপী ওরশ শরিফ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ আশেক-ভক্তের সমাগম ঘটে।