• April 17, 2025

মানিকছড়িতে ভূমির রেকর্ডীয় মালিকের নাম নিয়ে বিভ্রাট : দখল নিয়ে উত্তেজনা দু’পক্ষের

স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলাধীন ২০৮নং মানিকছড়ি মৌজার ৪৩৯ নং হোল্ডিং এর রেকর্ডীয় মালিক আব্দুল রব, পিতা- চান্দু মিয়া। মানিকছড়ি উপজেলা ভূমি অফিসের জমাবন্দি বহির রেকর্ডপত্র অনুসারে ২০৮নং মানিকছড়ি মৌজার ভলিয়ম নং-৩(খ), পাতা নং-২০ এ তার নামে ১নং চৌহদ্দিতে ০.২৫ শতক এবং ২নং চৌহদ্দিতে ৪.৭৫ শতক (চার একর পঁচাত্তর শতক) অর্থাৎ সবমিলিয়ে তার নামে ৫ একর তৃতীয় শ্রেণীর ভূমি রেকর্ডভূক্ত রয়েছে। যার সরকারি বন্দোবস্তি মামলা নম্বর- ২৭৮৬/৮০-৮১।

২০৮নং মানিকছড়ি মৌজা প্রধানের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উক্ত ভূমির রেকর্ডীয় মালিকের নামের রাজস্ব খাজনা বরাবরই পরিশোধ করে আসছেন একই এলাকার মোঃ মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তি। মোঃ মানিক মিয়ার দাবী, তিনি আব্দুল রবের ঔরসজাত সন্তান। তার দাবীর সমর্থনে জন্মনিবন্ধন সনদ, জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, জমির রেজিষ্ট্রেশন দলিল সহ অন্যান্য কাগজপত্রে তার পিতার নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে আব্দুর রব। গ্রহণযোগ্য কিছু কাগজপত্রে তার পিতার নাম- মৃত: আব্দুর রব এবং মাতার নাম- মৃত: হাসিনা বেগম উল্লেখ থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে মোঃ মানিক মিয়ার পিতার নাম- পেয়ার আহম্মদ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও হালনাগাদ এনআইডি ডাটাবেজে মোঃ মানিক মিয়ার পিতার নাম- পেয়ার আহম্মদ লিপিবদ্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু বিপত্তি বাধে মোঃ মানিক মিয়ার জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র, জায়গা জমির কাগজপত্রে তার পিতার নাম- আব্দুর রব কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তার পিতার নাম- পেয়ার আহম্মদ কেন? গত এক সপ্তাহ যাবত এ বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় চলছে সর্বত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১নং মানিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের মৃত্যু নিবন্ধন রেজিষ্টার অনুসারে আব্দুর রব (পেয়ার), পিতার নাম- মৃত: ছাদু মিয়া বিগত ০২.০৪.১৯৯৮ ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : নিবন্ধন বহি নং-০১, নিবন্ধন তারিখ- ১৩.০২.২০০৮, নিবন্ধন নং- ০০৩০০,
ব্যক্তিগত পরিচিতি নং- ১৯৯৮৪৬৩৬৭৬৩০০৩০০।

স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন- মোঃ মানিক মিয়ার পিতার প্রকৃত নাম- পেয়ার আহম্মদ নাকি আব্দুর রব? সেই বিষয়ে পাওয়া যাচ্ছে না স্পষ্ট কোনো দালিলিক প্রমাণ কিংবা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা, যার ফলে বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা ও ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

আব্দুল রবের উক্ত রেকর্ডীয় ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। মোঃ মানিক মিয়া আব্দুল রবের উত্তরাধিকার সূত্রে উক্ত সম্পত্তির বর্তমান মালিক দাবি করলেও সম্পত্তির মূল্য অধিক হওয়ায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সম্প্রতি উক্ত ভূমিতে তড়িঘড়ি করে স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে জবর দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে মানিকছড়ি শিবিরের বাসিন্দা স্থানীয় জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি, তার পিতা আব্দুল মালেক রেকর্ডিং মালিক আব্দুল রবের নিকট থেকে ওই সম্পত্তি ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু বিতর্কিত ওই ভূমিতে তার (জাকির হোসেন)-এর মালিকানার ব্যাখ্যা চাওয়া হলে প্রদর্শন করতে পারেননি গ্রহণযোগ্য কোনো দলিল দস্তাবেজ, তার মুখ থেকে একেক সময় উত্তর আসে একেক রকম। যা সম্পূর্ণ বাস্তবতাবর্জিত।

অপরদিকে ওই ভূমির রেকর্ডিং মালিকের ওয়ারিশ হিসাবে মোঃ মানিক মিয়া প্রদর্শন করতে পারেননি রেকর্ডিং মালিক মৃত: আব্দুল রবের ওয়ারিশান সনদপত্র।

আবার মোঃ মানিক মিয়ার ভাইদের জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতার নামের স্থলে পেয়ার আহম্মদ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে গেলে স্থানীয় কিছু লোকজন মোঃ মানিক মিয়া, মৃত: আব্দুল রবের অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের রেকর্ডিং সম্পত্তি আত্মসাতের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন এবং তার পিতার নাম পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন কমিশনে তদবির চালাচ্ছেন বলে দাবি করলেও তার স্বপক্ষে পাওয়া যায়নি উপযুক্ত প্রমাণ পত্র।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের উক্ত রেকর্ডিয় সম্পত্তি আত্মসাতকারীদের কবল থেকে রক্ষা এবং ওই সম্পত্তির সত্যিকারের মালিকানা নির্ধারণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও মানিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ সচেতন মহল। অন্যথায় বিতর্কিত ওই ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ’কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে সংঘর্ষ।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post