মানিকছড়িতে ন্যাশানাল সার্ভিসে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
আবদুল মান্নান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ঘরে ঘরে চাকরী। ফলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির’ মাধ্যমে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে শিক্ষিত যুব-যুবতীদের বেকারত্বের অবসান ঘটাতে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ মাস ব্যাপি উপজেলার তিনটি প্রশিক্ষণ কন্দ্রে ২২৪ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আর এসব প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে রির্সোস পারসন হিসেবে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, শিক্ষক এবং বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। কিন্তু প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ ভাতা পাননি প্রশিক্ষকরা। অন্যদিকে মনিটরিং অফিসার নিজেই প্রশিক্ষক হিসেবে বিল দাবী করছেন লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, তিনি ১৮৬টি ক্লাশ নিয়েছেন এবং একই সময়ে দু’কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রশিক্ষণ শেষে যোগদানপত্র পেয়ে ঠিক কতজন কর্মস্থলে যোগদান করেছেন সেটিও গোপন রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা অনিয়ম ও তথ্য গোপন রাখায় জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ঘরে ঘরে চাকরীর অংশ হিসেবে যুব মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালনায়‘ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের’ মাধ্যমে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ মাস ব্যাপি উপজেলার শিক্ষিত যুব-যুবতীদের মধ্য থেকে আবেদনের মাধ্যমে ২২৪ জন প্রশিক্ষণার্থী ৩টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহন শেষে ২০৪জন প্রশিক্ষণার্থী যোগদান পত্র পেয়েছেন। তবে যোগদানপত্র পাওয়ার এক মাস সময় অতিবাহিত হলেও কতজন যোগদান করেছেন সেটি এবং যোগদানকৃত অনেকে অন্যত্র চাকরী করার বিষয়টি গোপন রেখেছেন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। যোগদানকৃতরা ১ডিসেম্বর-২০১৭ থেকে ৩০ নভেম্বর-২০১৯সাল পর্যন্ত দু’বছর মেয়াদে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এসব প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণকালীণ দৈনিক ২শত টাকা হিসেবে মাসে ৬ হাজার টাকা প্রাপ্য হবেন। আর এসব প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষকসহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গরা রির্সোস পারসন হিবেসে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর মনিটরিং কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. শহীদুল্লাহ। কিন্তু তিনি মনিটরিং এর সুযোগে নিজেকে প্রশিক্ষক দেখিয়ে বিল করেছেন লাখ টাকা। যা বিধিবর্হিভূত। অন্যদিকে এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত প্রশিক্ষকরা তাঁদের সম্মানী পায়নি। ইতোমধ্যে একজন প্রশিক্ষক (ডাইনছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) মারা গেছেন!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. আহ্সান উদ্দীন মুরাদ নিখূঁতভাবে যাবতীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করার কারণে সদস্য সচিব মো. শহীদুল্লাহ্ নিজের অনিয়ম জায়েজ করতে প্রশিক্ষকদের বিল উত্তোলনে সময় ক্ষেপন করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শহীদুল্লাহ জানান, আমি ছুটিতে আছি, প্রশিক্ষকদের ভাতার বিষয়টি লাইনে আছে, কতজন যোগদান করেছেন সেটি এ মূহুর্ত্বে জানা নেই। নিয়ম মেনেই আমি প্রশিক্ষক ও মনিটরিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. আতিউল ইসলাম বলেন, রির্সোস পারসনদেরকে সুযোগ না দিয়ে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নিজে প্রশিক্ষক হওয়া এবং একই সময়ে দু’কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেখিয়ে ভাতা উত্তোলনের চেষ্ঠা সবই অবৈধ ও বেআইনি। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আহসান উদদীন মুরাদ যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অস্বাভাবিক ক্লাশ নেওয়া এবং ছলচাতুরী বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তাঁর বিল ব্যতিত অন্য প্রশিক্ষকদের বিল প্রদানের জন্য তাকে দু’সপ্তাহ আগে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার অনিয়মের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। কোনক্রমেই অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।