মানিকছড়ি মহামুনি ঐতিহ্যবাহী ১৩৫তম বৌদ্ধ মেলা ‘সম্প্রীতির’ এক অনন্য দৃষ্ঠান্ত
আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি: মংরাজার আবাসস্থল পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির ঐতিহ্যবাহী মহামুনি টিলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৩৫তম বৌদ্ধ মেলা।মূলত মারমা জনগোষ্টির আয়োজনে এ মেলা বাস্তবায়ন হলেও সেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড় পেরিয়ে সমতল থেকেও হাজার হাজার মানুষের পদভারে মূখরিত হয় এ জনপদ। নানা ধর্ম-বর্ণের শিশু-কিশোর,নর-নারী,বৃদ্ধ-বনিতারা পহেলা বৈশাখে ‘স্বাগতম বাংলা নববর্ষ, এসো হে বৈশাখ এসো এসো”…..। এসব শ্লোগান লেখা ক্যাফ,প্লে-কার্ড মাথায় দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মেলায় ঘুরে বেড়ানো,নগরদোলায় চড়াসহ নানা আনন্দে দিনটি উদযাপন করে থাকেন। এছাড়াও প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে ভক্তরা দিন ব্যাপি পূজা,পর্বনায় ব্যস্ত থাকেন। নানা শ্রেণি-পেশার লোক সমাগমে মেলা প্রাঙ্গন হয় মানুষের মহামিলন স্থল।
পার্বত্যাঞ্চলের মংরাজার ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের তৎকালীণ রাজা নিপ্রু সাইন(রাজত্বকাল ১৮৮৪-১৯২৯) রাজত্বকালের শুরুতে মানিকছড়ি রাজপ্রসাদের অদূরে নদীর অপরপাড়ে টিলার উপর প্রতিষ্ঠা করেন‘মহামুনি বৌদ্ধ মন্দির। আর এ মন্দিরে ধাতু নির্মিত বিশাল বৌদ্ধমুর্তি স্থাপনও করেন। যা বার্মা থেকে আনা ভগবান বুদ্ধের মুর্তি আজ কালের সাক্ষী হিসেবে বৌদ্ধ ধর্মমতে চৈত্র সংক্রান্তিতে বসে এ মেলা। আজ ১৪২৬ বঙ্গাব্দে ১৩৫তম বছরে পদাপর্ণ করেছে মেলা। প্রতি বছরের ন্যায় এবার মেলাকে ঘিরে মানিকছড়িতে মেলা উদযাপন কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তাসহ ব্যাপক আয়োজন। প্রচন্ড তাপদাহ স্বত্তেও এ মেলায় পার্বত্য খাগড়াছড়ির প্রতিটি উপজেলাসহ রাঙ্গামাটি,বান্দরবান ও চট্টগ্রাম থেকেও নানা বর্ণ ও শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে মেলার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।
সবুজ গাছ-গাছালিতে ভরা মানিকছড়ি নদীরকূল ঘেঁষে চারিদিকে সমতল সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত নয়নাবিরাম পাহাড়ের উপর প্রতিষ্টিত এ মন্দিরে দিন দিন লোকসমাগম বাড়লেও কমছে পাহাড়ের পরিধি। সেখানে অপরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে গাছ-গাছালি! ফলে ভবিষ্যতে মেলায় লোকসমাগম করা কঠিন হয়ে পড়বে। জায়গা সংকটের কারণে মেলা প্রাঙ্গন ছেড়ে দোকান-পাট বসছে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে এবং মহামুনি বাসস্টেশনে। ফলে ঐতিহ্যবাহী মেলার সৌন্দর্য্য কিছুটা মলিন হতে চলেছে।
আজ ১৪ এপ্রিল-১৯ কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণে ভদ্র লোকদের প্রবেশ ছিল সত্যিই কঠিন। কারণ এ প্রজন্মের তরুণ-তরুণী,শিশু-কিশোররা বাঁধভাঙ্গা আনন্দে সারাক্ষণ ছিল মোশগুল। তিল ধারণের ঠাই ছিল না ওলি-গলিতে। ভাগ্যিস্ পাহাড়ে অসংখ্য বটবৃক্ষ থাকায় রৌদ্রের প্রখরতায় অনাকাঙ্গিত কোন ঘটেনি। মেলায় উপজাতি জনগোষ্টির রীতি অনুযায়ী বিভিন্ন খেলাধূলাসহ প্রচলিত সকল পণ্য সামগ্রী নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন ছোট-বড় সহস্রাধিক ব্যবসায়ী। নগরদোলা,পালকি,ছাক্কিখেলার স্টলগুলোতে যুবকদের ছিল উপচেপড়া ভীড়। এসব স্টল থেকে বেশ লাভবান হয়েছে মৌসুমী আয়োযকরা। তবে প্রচন্ড রৌদ্র থাকায় তরমুজ,ডাব ও শরবতের দোকানে ছিল বেসামাল অবস্থা। এত লোকসমাগম স্বত্তেও প্রশাসন ও মেলা উদযাপন কমিটির কড়া নজরধারীর কারণে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ১৩৫তম মেলা সম্পন্ন হয়েছে। মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা কার্বারী এসোসিয়েশনের সভাপতি উদ্রাসাই কার্বারী শান্ত ও সু-শৃংখল পরিবেশে মেলা সম্পন্ন হওয়ায় সকল স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।