রামগড়ে ভূমি বেদখলের অভিযোগ
রামগড় প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির রামগড়ের দুটি প্রত্যন্ত এলাকায় বাঙ্গালীদের নামে সরকারিভাবে বন্দোবস্তী দেয়া প্রায় ৬০ একর টিলা ভূমি দখল করে বসতি স্থাপন করছে কতিপয় উপজাতিয়রা। বাঙ্গালীরা তাদের এসব দখল হয়ে যাওয়া জায়গা পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোন প্রতিকার না পওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) প্রসীত গ্রুপের সদস্যরা পরিকল্পিতভাবে অন্যত্র থেকে পাহাড়ি পরিবারগুলোকে এনে বাঙ্গালীদের ওইসব জায়গায় বসতি তৈরী করে দিচ্ছে। জানা যায়, উপজেলার রামগড় ইউনিয়নের ২২৯ নম্বর রামগড় মৌজার তৈচাগাড়া ও থানা চন্দ্র পাড়া এলাকায় ১৩টি বাঙ্গালী পরিবারের প্রায় ৬০ একর রেকর্ডিয় টিলা ভূমির গাছপালা কেটে কাচাঘর নির্মাণ করে কতিপয় উপজাতি বসতি গড়ে তুলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি উপজাতী পরিবার ঘর তৈরী করে সেখানে বসবাস শুরু করেছে। ইউপিডিএফের প্রসীত গ্রুপের সদস্যরা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসব উপজাতীয় পরিবারগুলোকে এনে বাঙ্গালীদের জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছে।
উত্তর লামকু পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দের রহমান জানান, তৈচাগাড়া পাড়ায় তার নামে রেকর্ডিয় ৮৭৮ নম্বর হোল্ডিংয়ে সাড়ে ৩ একর এবং ২২৮ খতিয়ানে দুই একর জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি কতিপয় উপজাতি ওই জায়গার গাছপালা কেটে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। বাধা দিলে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা তাকে হুমকী দেয়। তিনি বলেন, তৈচাগাড়া এলাকায় একইভাবে নজিরটিলার ফরিদ মিয়ার ২৩৭ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, সোনাইআগা গ্রামের নুরুল হকের ৭৪৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, আবু সায়েদের ৫ একর, হানিপ মজুমদারের ৯২৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, আবুল হোসেনের থানা চন্দ্র পাড়া এলাকায় ২০৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, আব্দুল মালেকের ৫ একর, কালাডেবার নুরুল ইসলামের ৫ একর, বলিপাড়ার আবু আহম্মদের ৯৪ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, আহম্মদ উল্লাহর ৭৬ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর, হেদায়েত হোসেনের ৮৬১ নম্বর হোল্ডিংয়ের ৫ একর ও সোনাইপুলের মো. শাহ আলমের ৫ একর টিলা ভূমি উপজাতীয়রা দখল করে নিয়েছে। সোনাই আগার আব্দুল মান্নান বলেন, প্রায় ৫০টি উপজাতী পরিবার তাদের এ রেকর্ডিয় জায়গার উপর বসতি স্থাপন করে দখল করে নিয়েছে। তিনি আরও জানান, ইউপিডিএফের সদস্যরা লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে এসব উপজাতি পরিবারগুলোকে এনে ঘর বানিয়ে বসিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আশির দশকে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে ঘরবাড়ি ফেলে তারা গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেন।
১নং রামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা শাহা আলম মজুমদার বাঙ্গালীদের রেকর্ডিয় জায়গা দখল করে উপজাতিরা বসতি স্থাপনের অভিযোগের সত্যত্যা স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে বাঙ্গালী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের জায়গা পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে প্রশাসনিকভাবে এপর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় বাঙ্গালীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল মামুন মিয়া বলেন, বাঙ্গালীদের জায়গায় উপজাতীদের বসতি গড়ার কোন তথ্য বা অভিযোগ পাননি। তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগেও একই ভূমিগুলো ইউপিডিএফ দখল করার চেষ্টা করলে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় তা পূনরুদ্ধার করা হলেও বর্তমানে প্রশাসন নির্বিকার।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ রামগড় শাখার আহবায়ক মো: সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রামগড়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করার পায়ঁতারা করছে ইউপিডিএফ, তাছাড়া ভূমি বেদখলের বিষয়ে এখানকার সর্বোচ্চ প্রশাসন ও অবগত রয়েছেন কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এখানেও যদি সোনামিয়াটিলার মতো পরিবেশ কেউ সৃষ্টি করতে চায় তবে তার ফল শুভ হবে না। অবিলম্বে এসব বেদখল হয়ে যাওয়া ভূমি উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি অন্যথায় রামগড়ের পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনসাধারনকে সাথে নিয়ে কঠিন আন্দোলনও গড়ে তোলার হুশিয়ারি জানান তিনি।