স্টাফ রিপোর্টার: বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায় লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়ি ইউনিয়নে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে। অবশেষে জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরে আসে সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে গুইমারা উপজেলায় অস্থীতিশীল পরিস্থিতি এবং ৩জন নিহতের ঘটনায় গোয়েন্দা রিপোর্টে বর্মাছড়ি থেকে ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা অংশ নিয়ে রক্তাক্ত সংঘাতের মতো বড় ধরণের ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ ওঠার পর সরকার সেখানে নিরাপত্তা জোড়দার করতে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প স্থাপন করে। এর পর থেকেই বিহারের জায়গা দাবি করে সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার দাবি ওঠে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা চট্টগ্রাম জিওসি’র বরাবরে একটি স্মারকলিপি দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ অক্টোবর সোমবার বর্মাছড়ি এলাকায় বৈঠকে বসে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। এসময় বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।
সর্তা বিট বন কর্মকর্তা মো: মাইনউদ্দিন দাবি করেন উক্ত জায়গাটি বনবিভাগের সংরক্ষিত এলাকা। লক্ষ্মীছড়ির অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারি কমিশনার ভূমি খাদিজা তাহেরা বলেন, আমরা কাগজপত্র দেখবো, অন্য কারো জায়গা আছে কিনা, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে পরিচিহ্নিত করার পর পরবর্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ফটিকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ঊষাতন চাকমা বলেন, ক্যাম্প করার জন্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আমাদের একটু জিজ্ঞাসা করলে ভালো হতো। ক্যাম্প হলে ব্যারিকেড থাকবে। রাত বিরাতে ভান্তের খাওয়া দাওয়া আনানেওয়া করতে সমস্যা হয়। শিশুরা স্কুলে যেতে ভয় পায়। বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। বিহার কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল চাকমা বলেন, সেনাবাহিনীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সেনাবাহিনী সব সময় জনসাধারণের জন্য কাজ করে। এজন্য তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান।
লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল মো: তাজুল ইসলাম, পিএসসি,জি বলেন, এটি রিজার্ভ ফরেষ্টের জায়গা, বিহারের জায়গা নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সশস্ত্র গ্রুপ ইউপিডিএফ সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি মিছিল-সমাবেশ করে। এখানকার জনসাধারণ জিওসি মহোদয়ের বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে, জিওসি মহোদয় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়েছেন। জনগনের স্বার্থের বিষয়টি চিন্তা করে আমরা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানান।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ, গুম ও খুনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ(পিসিএনপি)। ইউপিডিএফের বাঁধার অভিযোগে বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংবাদ সম্মেলনে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনে ইউপিডিএফের বাধা এবং সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ, গুম ও খুনের ঘটনাবলীর প্রতিবাদে ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর কবির। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্মাছড়িতে সেনা ক্যাম্প স্থাপনকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যরা এলাকাবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। তারা ধর্মীয় উসকানি সৃষ্টি করে জায়গাটি বৌদ্ধ মন্দিরের দাবি করলেও তদন্তে পাওয়া গেছে, সংশ্লিষ্ট জমিটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত নয়।
গত শুক্রবার বর্মাছড়ি এলাকায় আর্যকল্যাণ বনবিহারের নিকটে সেনা ক্যাম্প নির্মাণের প্রতিবাদে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেন। তারা ক্যাম্প নির্মাণ কাজ বন্ধ ও সেখানে অবস্থান নেওয়া সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেয়ার দাবিতে চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির বরাবর স্মারকলিপি দেন।
পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সহযোগী সংগঠন ‘ছাত্র-জনতা সংগ্রাম পরিষদ’-এর সভাপতি ঊষাতন চাকমা সামাজিক মাধ্যমে সেনা ক্যাম্পের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে জনসংহতি সমিতিকে আহ্বান জানান। তার আহ্বানের পর থেকেই বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনায় আসে।
সবশেষে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সেনাবাহিনী উভয় পক্ষের সাথে আলোচনায় বসে জনগণের ক্ষতি হয় এমন কাজ না করার সিদ্ধান্তে বিকল্প জায়গায় ক্যাম্প স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনায় নেন।