লক্ষ্মীছড়িতে বিকশিত ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম বন্ধ, গ্রাহকদের টাকা ফেরতের সিদ্ধান্ত
স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বিকশিত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে পরিচালিত আর্থিক ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে আগামী ২০ আগস্ট’র মধ্যে লক্ষ্মীছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান প্রবিল চাকমরা কাছে গ্রাহক ও কর্মচারীদের জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১১আগস্ট মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং উক্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে বিকশিত ফাউন্ডেশনের সহকারি জেনারেল ম্যানেজরা মো: রবিউল ইসলাম রানাসহ তাঁর পিতা লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা হাসপাতালের স্টাফ(অব:) মো: শাহজাহান আগামী ২০আগস্ট এর মধ্যে গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা এবং কর্মচারীদের জামানত ফেরত দিবে মর্মে লিখিত কাগজ করা হয়।
উল্লেখ্য বিকশিত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে এই প্রতিষ্ঠানটি গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি চালু করার শুরু থেকেই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সরকারি অনুমোদন কিংবা যাবতীয় কাগজ পত্র দেখাতে বলা হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার মো: রবিউল ইসলাম রানা বিষয়টি এরিয়ে যান। সময় গড়ানোর সাথে সাথে জনবল নিয়োগ ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেয়া শুরু করেন।
গত ১৯/০৭/২০২০ইং তারিখে গুইমারা উপজেলায় বিকশিত ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করতে চাইলে এলাকাবাসীর নানা প্রশ্নের সম্মুখিন হন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তুষার আহমেদ অভিযোগ পাওয়ার পর বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে না পারায় এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এর পর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয় বিকশিত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আত্ম-মানবিক সেবামূলক কার্যক্রম শুরু করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোতি প্রদানের কোনো সুযোগ নাই মর্মে জারিকৃত পত্র প্রচার হলে মাঠ কর্মী, অফিস স্টাফ ও গ্রাহকরা বিকশিত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ লক্ষ্মীছড়ি শাখায় জড়ো হয়। অধিক সংখ্যক মানুষ জড়ো হওয়ার কারণে বিষয়টি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সমাধানের নির্দেশনা দিলে কর্তৃপক্ষ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বৈঠক করে গ্রহণযোগ্য সমাধান করেন।
এসময় লক্ষ্মীছড়ি ওসি(তদন্ত) খাইরুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কালাম, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি সাংবাদিক মো: মোবারক হোসেন, বিকশিত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সিনিয়র সহকারি জেনারেল ম্যানেজার আবু নেছার, লক্ষ্মীছড়ি এরিয়া ম্যানেজার নাইম ও বিকশিত ফাউন্ডেশনের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার লক্ষ্মীছড়ি শাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রবিউল ইসলাম রানাসহ উক্ত শাখার কর্মচারী ও গ্রাহকরা উপস্থিত ছিলেন।
মাঠকর্মী মো: নাজমুল হোসেন, মো: মহসিন, দেবরানী চাকমা ও মংচেনু মারমাসহ অনেকেই অভিযোগ করেন, গ্রাহকদের থেকে ঋণ দেবে বলে ৩০% ডাউন পেমেন্ট নেয়া হয়। কিন্তু যথাসময়ে ঋণ দেয়া হয় না এবং জামাত নিয়েও কর্মচারীদের বেতনও নিয়মিত দেয়া হচ্ছে না। এ সংস্থার কার্যক্রমের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ওঠে যাচ্ছে বলেই আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি।
লক্ষ্ম§ীছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা বলেন, যেহেতু উক্ত সংস্থা এর কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে বৈধ কোনো কাগজ পত্র দেখাতে পারে নি, তাই এ উপজেলায় এর সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। যদি বিধিসম্মত কাগজপত্র প্রশাসনিক পর্যায়ে উপস্থাপন করতে পারে তাহলে সরকারি নিয়ম মানলে তো আর বাঁধা থাকার কথা নয়।
বিকশিত ফাউন্ডেশনের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার লক্ষ্মীছড়ি শাখার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: রবিউল ইসলাম রানা বলেন, আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল বৈধ কাগজপত্র প্রধান কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে হেড অফিস লকডাউন থাকায় অফিস পরিচালনায় সাময়িক কিছু সমস্যা হয়েছে স্বীকার করে নিয়ম মেনে খুব শিগ্রই এ প্রতিষ্ঠান চালু করা হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, সরাসরি ঋণ দেয়া হয় না, পণ্য স্যাল করার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বলে তিনি দাবি করেন।
লক্মীছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ূন কবির বলেন, কোন প্রতিষ্টান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সরকারের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে বৈধ কাগজ ছাড়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা বিধি সম্মত নয়, আর কেউ বিশৃঙ্খলা করবে তার কোন সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানান তিনি।