লামায় মাতামুহুরী সরকারি ডিগ্রী কলেজে ৭ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলেছে
প্রিয়দর্শী বড়ুয়া,লামা(বান্দরবান): বান্দরবানের লামায় মাতামুহুরী সরকারি ডিগ্রী কলেজে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্র¿ী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি পরপর ৩ বার দায়িত্ব পালনে সময়ে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যে কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রাবাসের প্রাচীর নির্মাণ, কলেজ জামে মসজিদ নির্মাণ ও পরবর্তীতে অধুনিকায়ন, ছাত্রাবাসের দ্বিতল নির্মাণ, ছাত্রী নিবাস, কনফারেন্স হল এবং শিক্ষক কোয়ার্টারসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রী নিবাস নির্মাণ, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কনফারেন্স হল নির্মাণ, ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গেইটসহ বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ, ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাঠ উন্নয়ণ এবং ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রাবাস ও অভ্যান্তরীন রাস্তার কাজ এবং ড্রেণ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোঃ ইয়াসির আরাফাত জানান, চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই চলমান উন্নয়ন কাজগুলো সমাপ্ত হবে।
সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করা এখন এলাকাবাসীর একমাত্র প্রানের দাবি। জানাযায়, পার্বত্য জনপদ লামা ও আলীকদম উপজেলার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান হাজ্বী মোঃ আলী মিয়া ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন হাজী মোঃ আলী মিয়া কলেজ। ১৯৮৭ সালে আলীকদম জোনের তৎকালীন জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল মোঃ শাহজান মিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় স্থানীয় গণ্যমান্য, ও সামরিক- বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সভায় আলহাজ্ব মোঃ আলী মিয়ার প্রস্তাবে ৬৯ পদাতিক ব্রিগ্রেডের সাবেক ব্রিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার সুবেদ আলী ভূঁঞা মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে মাতামুহুরী কলেজ নামে কলেজটির নামকরণ করেন। পরের বছর কলেজটি লামা গজালিয়া ইউনিনের ১ নং ওয়ার্ড বর্তমান পৌরসভার টিটিএন্ড ডিসি থেকে লাইনঝিরি এলাকায় স্থানান্তর করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরীর অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় এবং আলীকদম জোন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই কলেজটি মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি লাভ করে।
১৯৮৯- ৯০ সালে বিশেষ বিবেচনায় কলেজটি এমপিও ভূক্ত করা হয়। একই বছর একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পায়। ২০০৬-০৭ শিক্ষা বর্ষে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মুজিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় আলীকদম সেনা জোন, বান্দরবান জেলা পরিষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতায় কলেজ ডিগ্রি কোর্সে অধিভূক্তি লাভ করে। এদিকে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ঝরে পড়া ও কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্ঠায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে এইচ.এচ.সি প্রোগ্রাম এবং ২০১৫ সালে বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম চালু হয়। অবশেষে চলতি বছরের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে কলেজে আড়াই হাজারও বেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন রত আছে।কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজে ব্যপক উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদিত হচ্ছে। কলেজটি জাতীয়করণের পিছনেও সম্পূর্ণ অবদান পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীর।
এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষক- শিক্ষিকাবৃন্দ পার্বত্য প্রতিমন্ত্রীসহ প্রধান মন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ। বর্তমানে কলেজে মান সম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সকলে কাজ করছে। কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কলেজটি জাতীয়করণ করা এবং কলেজের ভৌত অবকাঠামোর যে উন্নয়ন সব কিছুই বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির অবদান। তিনি কলেজটিকে নিজের পরিবারের অংশ মনে করে আমাদের কিছু চাওয়ার আগেই কলেজের সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নে সচেষ্ট রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আগামি প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ সুগম হবে। স্থানীয় অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রত্যাশা কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর মাধ্যমে সবুজ পাহাড়ের কোল ঘেসে গড়ে উঠা কলেজের দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসটি পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের একটি আদর্শ ক্যাম্পাসে পরিণত হবে।