সেনাবাহিনীর উদ্যোগে চক্ষু শিবির: অপারেশনের পর সুরেশ চাকমা ‘আমি এখন সব দেখে’
মোবারক হোসেন: “সুস্থ্য চোখে দেখি সুন্দর পৃথিবী” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্যোগ নেয়া হয় বিনামূল্যে চক্ষু শিবির। গত ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি (বিজেএকেএস), কুমিল্লার এবং সেনাবাহিনীর ডাক্তারে তত্ত্বাবধানে চলে চক্ষু রোগী বাছাই। লক্ষ্মীছড়ি, মানিকছড়ি এবং ফটিকছড়ি উপজেলার অন্তত ৩৫০ জন পাহাড়ি-বাঙ্গালিকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। চোখের ছানি অপারেশন করা এবং উন্নত চিকিৎসার জন্যে ৫২জন চক্ষুরোগীকে বাছাই করা হয়।
২১ অক্টোবর প্রাথমিক পর্যায় ২৬জনকে অপারেশন করে নিজস্ব যানবাহনে লক্ষ্মীছড়িতে নিয়ে আসা হয়। চোখে ছানি পড়া অন্ধত নিয়ে বিষম অসহায় দিন যাপন করতেন। একা একা বসে থাকতে হতো ঘন্টার পর ঘন্টা। এ যেনো এক দুর্বিষহ জীবন যাপন। অবহেলার পাত্র হয়েছি। কথা শুনে হয়েছে ছেলে-মেয়ের ও পাড়া প্রতিবেশীর। জীবনের এমন করুন কাহিনী অনেক অন্ধ ব্যাক্তির জীবেন ঘটেছে। কিন্তু বর্মাছড়ি উপর বৈদ্য পাড়ার সুরেশ মোহন চাকমার কাহিনীটা এরকম “আমি তো আগে কিছু ‘ন’ দেখিতো এখন সব দেখে তোমারেও (সাংবাদিককে লক্ষ্য করে) দেখিতে পায়”। বয়স ৭০। ছেলে-মেয়েরা সবাই বড়। বিয়ে হয়েছে। ঘরে বিয়া আর আমি। স্ত্রী মিরন্তী চাকমা কিছুটা দেখতে পায়। আমি একে বারেই দেখতে পাই নি। অপারেশন করার পর সব কিছুই দেখতে পাচ্ছি। আর্মিকে ধন্যবাদ দেই, আর্শিবাদ করি। এ কথাগুলোই বলছিলেন কুমিল্লা থেকে ফিরে সুরেশ চাকমা। অপারেশনের পর কুমিল্লা থেকে উপজেলা মাঠে গাড়ি থেকে নামার পর সুরেশ মোহন চাকমা এই অনুভূতি প্রকাশ করেন। সুরেশ চাকমা বলেন, যাওয়ার সময় গাড়িতে গেছি রাস্তার কোনো কিছুই স্পষ্টভাবে দেখতে পাই নি। আসার পথে কত সুন্দর সুন্দর বিল্ডিং বড় বড় রাস্তা দেখে খুব ভালো লাগছে। তাকে এক প্রশ্ন করা হলে সাব জানিয়ে দেয় আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করে চক্ষু চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হতো না। একই ভাবে চোখের আলো ফিরে পাওয়া প্রমিলা চাকমা, মং মং মারমা, ইতালি চাকমা ও কমলা চাকমা খুশি হওয়ার অনুভতি প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যান সমিতি (বিজেএকেএস), কুমিল্লার ম্যানেজার স্পেশাল এ্যাফেয়ারস ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সহেেযাগী ডোনারের মাধ্যমে নামে মাত্র খরচে গরীব অসহায় ব্যাক্তিদের চোখের আলো ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই এ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চক্ষু অপারেশন করতে গেলে কমপক্ষে ১০/১২হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। একজন দরিদ্র লোকের পক্ষে তা কোনোভাবেই সম্ভব না। লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনাবাহিনীর উদ্যোগ নেয়ার কারণেই এ কাজটি অনেকটা সহজভাবে করা গেছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এখনো লক্ষ্মীছড়িতে ছানি অপারেশেনের রোগী আছে। লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল মো: মিজানুর রহমান জানান, রোগীদের উপস্থিতি অত্যাধিক হওয়ায় জানুয়ারী ২০১৯সালে আরেকটি চক্ষু শিবির করার পরিকল্পনা রয়েছে।