স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে কিশোরীদের সচেতনতা বাড়াতে শাহনাজ সুলতানার প্রসংশনীয় উদ্যোগ
মোবারক হোসেন: শাহনাজ সুলতানা। পরিচয় পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা। খাগড়াছড়ি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কর্মরত। খবরের পেছনের গল্পটা শুনবো পরে।
ইমার্জেন্সি প্যাড কর্নার স্থাপন, ব্লাড গ্রুপিং এবং কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক অবহিতকরণ সভা। লক্ষ্মীছড়ির দুল্যাতলী জুনিয়র হাইস্কুলে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ কর্মশালার আয়োাজন করা হয় ২৭ মার্চ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাগড়াছড়ি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব বড়ুয়া। এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অংক্যাজাই মার্মা। বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সারওয়ার ইউসুফ জামাল, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিটোলমনি চাকমা, জেলা ফ্যাসিলেটর মশিউর আজম, স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক চাকমা, দুল্যাতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ত্রিলন চাকমা, খাগড়াছড়ি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শিকা শাহনাজ সুলতানা। এ প্রতিবেদককেও বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন কেবিডি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন কায়েশসহ সংগঠনের সহকর্মীরা। শতাধিক ছাত্রীদের নিয়ে চলে এই অনুষ্ঠান। ব্যতিক্রমধর্মী এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয় বেলা ২টার দিকে। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। দুল্যাতলী প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার্থীদে মাঝে সম্পূর্ণ নতুন এই সচেতনতামূলক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসহ মেয়েদের পিরিয়ডকালীন সময় নানা জটিলতা সম্পর্কে অবহিত করতে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেন বক্তারা। এসময় বিনামূলে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটারী প্যাড, রক্তের গ্রুপ নিণর্য় করা, কাগজ কলম, লিফলেট ইত্যাদি প্রদান করা হয়। এতো বললাম অনুষ্ঠানের কথা।
কিন্তু এ কার্যক্রমের আড়ালেও একজন মহৎ ব্যক্তির নিবেদিত নিরলস পরিশ্রম ও অবদানের কথা তুলে ধরছি এভাবেই- শাহনাজ সুলতানা, খাগড়াছড়ি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা। তিনি এক আলাপচারিতায় বলেন, শুরুটা ২০১৫ সাল থেকে। নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগেই। যেসব এলাকায় এখনো উন্নত হয়নি ভালো করে শিক্ষার আলো পৌঁছেনি, সেখানের কিশোরীদের নিয়ে আমার এ কাজ। আর সে জন্যই আমি লক্ষ্মীছড়ির প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে এসেছি। আর এ সুযোগটি তৈরী করে দিয়েছেন আমার স্যার খাগড়াছড়ি পরিবার পরিল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব বড়ুয়া। তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কিশোরীদের বিনামূলে স্যানিটারি প্যাড, স্কুল পোষাক, ছাতা, ক্যালকুলেটর, স্কুল ব্যাগ, কাগজ-কলম, ব্রাশ, টুথপেষ্ট, খাবার স্যালাইন কিংবা গরীব অসহায় যারা স্কুলের বেতন বকেয়া থাকে ইত্যাদি কার্যক্রমে সহযোগীতা করে আসছি। আমি নিজের চেতনাবোধ থেকেই এ কাজটি নিস্বার্থ ভাবে করে যাচ্ছি। আমি চাই এই অবুঝ শিশুরা যেন ঝরে না যায়, তাই আমার প্রচেষ্টা যেখানে বাল্য বিবাহ হয় সেখানে গিয়ে রোধ করবার চেষ্টা। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি বাল্য বিবাহ রোধ এসবের পাশে থাকতে পারলেই নিজেকে গর্বিত মনে করি। সরকার বড় বড় কাজ করে থাকে, তাই ছোট ছোট কাজগুলো যার যার অবস্থান থেকে যদি আমরা দায়িত্ব নিই তাহলে সোনার বাংলাদেশ গড়তে বেশি দিন সময় লাগবে না। আসুন আমরা একটু ভালবাসা দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়াই তাহলে ঝরে পড়া এবং কিশোর-কিশোরীদের বিপদগামীর হাত হতে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
কিশোরীদের উদ্দেশ্যে শাহনাজ সুলতানার পরামর্শ: স্কুল চলাকালীন সময়ে যদি কোন শিক্ষার্থীর পিরিয়ড জনিত সমস্যা হয় তাহলে সেই শিক্ষার্থী (আমি বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি) এই কর্ণার থেকে জরুরি ভাবে প্যাড নিয়ে ব্যবহার করতে পারবে এবং এতে করে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার বাড়বে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কাজ করছি এটা ভেবে আমাদের দেশে পিরিয়ড হওয়াকে কন্যা শিশুর বিয়ের জন্য উপযুক্ততা মনে করা হয়। কিন্তু পিরিয়ড হওয়া মানেই বিয়ের জন্য শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি নয়। কন্যা শিশুর বয়স আঠারো হওয়ার আগে কোন ভাবে বিয়ে নয়। আসুন আমাদের চারপাশের সকল কন্যা শিশুর সঠিক বেড়ে উঠা নিশ্চিত করি এবং বাল্য বিবাহ বন্ধে সচেতন হই। কৈশোর কালিন বিনিয়োগ জাতির জন্য সুবর্ন সুযোগ। বাল্য বিবাহ নারী স্বাধীনতার অন্তরায়, সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে বাল্য বিয়ে রুখবো, স্বপ্নের পথে হাঁটবো। ‘রাষ্ট্রের বড় বড় উন্নয়নমূলক কাজ করবে সরকার, সমাজের ছোট ছোট উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গের কাছে আকুল আবেদন আমাদের একটু মানসিকতার পরির্বতন দরকার, একটু সহযোগিতায় একটু ভালোবাসায় হয়ত কিশোর-কিশোরীরা বিপদ গামীর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে।