দীঘিনালায় কৃত্তিকা ত্রিপুরা হত্যার রহস্য উন্মোচন, বাঙ্গালি কেউ জড়িত নয়

স্টাফ রিপোর্টার: দীঘিনালায় স্কুলছাত্রী কৃত্তিকা ত্রিপুরা ধর্ষণ ও বিভৎস হত্যার রহস্য দীর্ঘদিন পর উন্মোচন হতে চলেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক জেএসএস এমএন লারমা সমর্থিত যুব সমিতির নেতা রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত(৩২) নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে উপজেলার লারমা স্কোয়ার থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্তকে। সে জেলার পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের পুদ্যানীছড়া গ্রামের পূণ্যাধন ত্রিপুরার ছেলে এবং এমএন লারমা সমর্থিত জনসংহতি সমিতির সহযোগী সংগঠন যুব সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি। এছাড়া রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত খাগড়ছড়ি সদর থানার হত্যা মামলার পলাতক আসামী।

এ ব্যাপারে পুলিশ জানায়, কৃত্তিকা ত্রিপুরা ধর্ষণ ও হত্যার আগে নয়মাইল এলাকার মৃত নরোত্তম ত্রিপুরার ঘরে বসেই চাঁদা উত্তোলন করতো শান্ত। কৃত্তিকা ত্রিপুরার মা অনুমতি ত্রিপুরা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে হত্যা করে এবং ঘটনা ঘটানোর পর কাউকে না জানানোর জন্যে হুমকি প্রদান করা হয়।

যার ফলে, গত ২৮ জুলাই শনিবার দুপুরে হত্যার পর নিজেদের দোষ ধামাচাপা দিতেই কয়েক বাঙ্গালি যুবকের নাম জড়িয়ে তাদেরকে ধর্ষণ ও হত্যার জন্য দায়ী করে সভা সমাবেশ করে জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন উপজাতীয় সংগঠন। রাজধানী ঢাকা ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলে এই ঘটনাকে পার্বত্য বাঙালী বিরোধী সেন্টিমেন্ট তৈরিতে ব্যাপকভাবে প্রচার করে।

তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় উপজেলার বড় মেরুং এলাকার মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে শাহ আলম(৩৩) এবং একই এলাকার জালাল উদ্দীনের ছেলে নজরুল ইসলাম ভান্ডারী(৩২) মধ্য বোয়ালখালী এলাকার ফজর আলীর ছেলে মাহেন্দ্র টেক্সি চালক মোঃ মনির হোসেন (৩৮) কে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষেও পুলিশ তাদের কাছ থেকে হত্যা রহস্য সম্পর্কে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি।

পুলিশ আরো জানায়, ঘটনার দিন দুপুর আড়াইটার দিকে টিফিন পিরিয়ডে বাড়ি যাওয়ার পর ৩টার দিকে ধর্ষণ ও পৈশাচিক হত্যার স্বীকার হয় কৃত্তিকা ত্রিপুরা। কিন্তু খাগড়ছড়িতে একটি সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায় ওইদিন দুপুর ২:৩৮ মিনিটে আটক তিন বাঙ্গালী যুবক জেলা সদর থেকে মোটরবাইক যোগে দীঘিনালার উদ্দেশ্য রওয়ানা দিয়েছেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এলাকায় গিয়ে ধর্ষণ এবং হত্যা কোন ভাবেই সম্ভব নয়।

এব্যাপারে দীঘিনালা থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সামাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আটক রবেন্দ্র ত্রিপুরা ওরফে শান্ত উপজেলার নয়মাইল এলাকার কৃত্তিকা ত্রিপুরার বাড়িতে থেকে জেএসএস সংস্কারের পক্ষে চাঁদা উত্তোলন করতো। কৃত্তিকা ত্রিপুরার মা তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে কৃত্তিকা ত্রিপুরাকে হত্যা করে। জিজ্ঞাসাদে শান্ত আরো জানায়, ধর্ষণ ও এ হত্যাকাণ্ডে তার দলের তিনজন সহযোগী ছিলো, তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।

জেএসএস (এম এন লারমা) দীঘিনালা উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি লোচন দেওয়ান জানান, কৃত্তিকা হত্যার সাথে জেএসএস জড়িত নয়। জেএসএসকে হয়রানি করার জন্য জেএসএসের যুব সংগঠন যুব সমিতির সদস্য শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে লোচন দেওয়ান দাবি করেছেন, ‘শান্ত কোনো চাঁদাবাজ নয়, সে শুধু যুব সমিতির সদস্য।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই শনিবার দুপুরে উপজেলার মেরুং ইউনিয়নের নয়মাইলএসকলসংগঠনগুলোনীএলাকায় স্কুলছাত্রীর কৃত্তিকা ত্রিপুরা(১২) কে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করে পাহাড়ী বিভিন্ন সংগঠন। সে মৃত নরোত্তম ত্রিপুরার মেয়ে এবং নয় মাইল ত্রিপুরা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। ঘটনার পর পুলিশ ও এলাকাবাসী পাশের বাগান থেকে রাত সাড়ে দশটায় নিহতের লাশ উদ্ধার করে।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post