কেমন বাংলাদেশ চাই- “বিজয় অনুভূতি জানা ও ভবিষ্যত প্রস্তুতি” শীর্ষক সভা
স্টাফ রিপোর্টার: কেমন বাংলাদেশ চাই? ১৯৭১সালে মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের স্বপ্নে লালিত বাংলাদেশ অজিত হয়েছে কি? জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত দেশকে কেমন দেখতে চায় তারা। নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিতে ১৯৭১, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, আগামীর বাংলাদেশ কেমন হবে। নানা প্রশ্ন আর উত্তর খোজার চেষ্টা। ফিরে যাওয়া ৪৭বছর আগের কথায়, সর্বত্র শোষণ, নির্যাতন, একদেশে দুই শাসন ব্যবস্থা, শোষক ও শাসিতের ধারায় বিভক্ত জাতির স্বত্ত্বার মাঝে ত্রাণকর্তার মত মুক্তির মন্ত্র নিয়ে হাজির হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালার মত ৭মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত মুক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত দামাল ছেলেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীকার আন্দোলনে দেশমাতৃকার মুক্তির দৃপ্ত শপথে। কিছু পাওয়া আশা নয় দেশকে মুক্ত করারই ছিল যাদের একমাত্র লক্ষ্য। দীর্ঘ ৯মাস পর বিশ্বমানচিত্রে জন্মদিন এক নতুন দেশ। বিনম্রশ্রদ্ধা তাদের প্রতি যারা স্মরনীয় ও বরনীয় সর্বকালে।
৪৭তম বিজয় দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে জাতির “শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় অনুভুতি জানা ও কাংখিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভবিষ্যত প্রস্তুতি” শীর্ষক আলোচনা সভা ১৩ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে খাগড়াছড়ি’র গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি সদরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৪ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী সিন্দুকছড়ি জোন কর্তৃক আয়োজিত গুইমারা ও মানিকছড়ি উপজেলার শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি ও সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে “বিজয় অনুভুতি ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি” শীর্ষক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ২৪আর্টিলারী ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীনকার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল মুক্তিযোদ্ধা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলে আখ্যায়িত করে বলেন তাদের আত্মবলি দানের মধ্যদিয়ে অর্জিত দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান, নিরাপত্তা ও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী তথা বাংলাদেশ সরকার নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় ভাতা, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা সুবিধা, ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রকল্পের আওতায় সরকার নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এসুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি সহ মুক্তিযোদ্ধাকে কল্যাণে করণীয় সকল কিছু করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ রুবায়েত মাহমুদ হাসিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, মানিকছড়ি উপজেরা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া, মানিকছড়ি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহেদী, ৫আনসার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা, মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা পরিষদ সদস্য আবদুর রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, গুইমারা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নাজিম উদ্দিম, গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, গুইমারা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ম্রাসাথোয়াই মগ, মানিকছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সফিকুল আলম চৌধুরী, গুইমারা উপজেলা চেয়ারম্যান উশ্যেপ্রু মারমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঙ্কজ বড়ুয়া।
একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না দেশাত্ববোধক গানের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের
মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন অনুভুতি ও স্মৃতিচারণ করেন খাগড়াছড়ি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সভাপতি রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, তিনি খাগড়াছড়ি জেলা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীদের সাথে সংঘঠিত সম্মুখ গেরিলা যুদ্ধের অংশগ্রহণের স্মৃতি ব্যক্ত করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের বন্যায় জন্ম নেওয়া দেশে এখনও পাক বাহিনীদের প্রেত্বাত্মা স্বাধীনতা বিরোধীদের পদচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু কিছু মুক্তিযোদ্ধারা ঐসব দেশবিরোধীদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করছে বলে জানিয়ে দেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পক্ষে থাকার জন্য সকলকে আহবান জানান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রানবস্ত স্মৃতিচরণ উপস্থিত সকলে ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং সকলে যে কোন মুক্তি দেশের অখন্ডত্ব ও স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ নেন।
এসময় সিন্দুকছড়ি জোনের পক্ষ থেকে গুইমারা ও মানিকছড়ি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জন্য শুভেচ্ছা উপহার, সকল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার এবং শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই বিতরণ করা হয়।