চাঁদাবাজি বন্ধে গুইমারা বাইল্যাছড়িতে নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ অভিযান
স্টাফ রিপোর্টার ও গুইমারা প্রতিনিধি: সদ্য সমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়িতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। নির্বাচন কালীন সময়ে প্রশাসন ও নিবাপত্তা বাহিনীর চাপে সন্ত্রাসীরা কোনঠাসা হয়ে অনেকটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম থেকে দূরে থাকলেও সম্প্রতি আবারও তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গুইমারা-মাটিরাঙ্গা এই দুই উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান বাইল্যাছড়ি এলাকায় তারা আধিপত্য বিস্তার করেছে। ইতিপূর্বেও বাইল্যাছড়ি এলাকায় হত্যা, গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি, গাড়ি ভাংচুর বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনোত্তর বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালী সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহলের অভিমত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে পাহাড়ের আঞ্চলিক স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন “ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমক্রেটিক ফন্ট” (ইউপিডিএফ) অনেকটা দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই সাধারণ মানুষের কাছে তারা নতুন করে চাঁদার হার ধায্য করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বাইল্যাছড়ি এলাকায় চট্টগ্রামের আমানত শাহ মাজারস্থ জননী বেকারীর পন্য সরবরাহকারী পিকআপ ভ্যানের গাড়ী নিয়ে যাওয়ার পথে কোম্পানির সেলম্যান মো: মোস্তফাকে বাইল্যাছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীরা তার গাড়ি গতিরোধ করে। এ সময় দুজন চাঁদাবাজ সন্ত্রাসী মোস্তফাকে জোরপূর্বক মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকায় আটকে রাখে। ঘটনার পর দোষীদের ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যহত রয়েছে। এঘটনায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুনরায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সেলম্যান মোস্তফা জানায়, চট্টগ্রাম শহরের জননী বেকারীর বিভিন্ন খাদ্যপন্য বাজারজাত করণের সরবরাহকারী পিকআপ ভ্যান নিয়ে পন্য পরিবেশনে প্রতিদিনের মত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা পন্য সরবরাহ করতে শুক্রবার সকালে গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি এলাকায় আসলে কয়েকজন সন্ত্রাসী তার গতিরোধ করে নগদ ১২হাজার টাকা ছিনতাই করে। এ সময় পিকআপ ভ্যান থেকে তাকে জোর পুর্বক মোটর সাইকেলে তুলে নিয়ে বাইল্যাছড়ি রাবার বাগান এলাকায় নিয়ে আটকে রাখে সন্ত্রাসীরা।
ঘটনার খবর পেয়ে ৩০ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের সদস্যরা ক্যাপ্টেন হাসিবুল হাসান শান্ত’র নেতৃত্বে মোস্তফাকে উদ্ধার অভিযানে নামে। একপর্যায়ে মোস্তফা’কে উদ্ধার করে নিরাপদে গুইমারা থানা পুলিশের হেফাজতে প্রেরণ করে।
এদিকে মোস্তফাকে উদ্ধারের পর অভিযুক্ত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের ধরতে পুরো এলাকা ঘিরে টানা ২৪ঘন্টা চিরুণী অভিযান চালানো হয়। টহল দলের সদস্যরা ১৯৯নং বাইল্যাছড়ি মৌজার হেডম্যান ত্রিদীপ নারায়ন ত্রিপুরা, পাইরো কারবারী, স্থানীয় ইউপি সদস্য জ্যোতি বসু ধামাইসহ পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশী চালায়। ছিনতাই ও অপহরণ ও আটকের ঘটনায় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়লেও নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানের ফলে জনমনে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মাটিরাঙ্গা সেনা জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল নওরোজ নিকোশিয়ার জানান, ঘটনার পর এলাকাজুড়ে যৌথ অভিযান অব্যহত রয়েছে। পাহাড়ের অশান্তি সৃষ্টিকারী একটি মহল নিরাপত্তা বাহিনীকে জড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা ভাবে অপপ্রচার চালিয়ে সাধারণ জনগনের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো চেষ্ট চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষায় ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতসহ অভিযুক্ত চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।