মহামারিতে ‘করোনা’: ক্ষতিগ্রস্থ মানিকছড়ির দু’শতাধিক পোলট্রি খামার
আবদুল মান্নান: মরণব্যাধি‘করোনা’ভাইরাসের প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে চরম আঘাত লেগেছে। দেশে অর্থনীতির শীর্ষে থাকা গামের্ন্টস খাতের পরই পোলট্রি শিল্প। অথচ করোনার ছোবলে এ শিল্প চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে! খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় পোলট্রি শিল্পে জড়িত দুই শতাধিক খামারী ও বিক্রেতার ব্যবসায় এ মূহূর্ত্বে অকাল চলছে। হ্যাচারী, বয়লার বিডার ও লেয়ার খামারগুলোতে প্রতি মাসে ১০ লক্ষাধিক ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন হলেও বিক্রি না থাকায় ডিম ও বাচ্চা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে খামারীরা। অন্যদিকে সাধারণ খামার ও লেয়ারের উৎপাদন অব্যাহত থাকলৌ হাট-বাজার ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় খামারী মালিক ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের মূখে পড়ে স্মরণকালের সংকট মূর্হূত্ব অতিক্রম করছে। ইতোমধ্যে ব্যবসা গুঁটিয়ে ফেলেছে অনেক খামারী!
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও পোলট্রি ব্যবসায়ী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদর ও তৃণমুলে পোলট্রি শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাধিক পোলট্রি খামার। এর মধ্যে নাপ এগ্রো লিমিটেড, সততা এগ্রো ফার্ম ও মেসার্স রাজশী পোলট্রি (ফিউচার এগ্রো এন্ড হ্যাচারী) এ তিনটি বড় ফার্মে(হ্যাচারী, বয়লার বিডার,লেয়ার ও খামার) মধ্যে একটি’র (সততা) হ্যাচারীতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে! অপর দুইটি হ্যাচারীতে মাসে প্রায় ১০লক্ষ বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও বাচ্চার ক্রেতা না থাকায় বর্তমানে উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত ডিম নিয়ে মালিকরা পড়েছে বিপাকে! ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে অবিক্রিত বাচ্চা ও ডিম ধ্বংস করেছেন অনায়াসে!
সরজমিনে দেখা গেছে, মেসার্স রাজশী পোলট্রি’র ‘ফিউচার এগ্রো এন্ড হ্যাচারী’তে আগে মাসে ৭০/৮০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন হলেও বর্তমানে বাজারজাত না থাকায় উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে শতকরা ২৫-৩০ ভাগে। আর এ ফার্মের লেয়ারে দৈনিক ডিম উৎপাদন হচ্ছে (হ্যাচারীর ডিম ব্যতিত)১৫/১৬ হাজার। মাসে সাড়ে ৪ লক্ষাধিক। অন্যদিকে খামার সেডে সোনালী মুরগী রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। মালিক এস.এম. রবিউল ফারুক জানান, করোনা’র কবলে পড়ে দেশের পোলট্রি শিল্প আজ ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে। লেয়ারে ডিম উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। অথচ ডিম,বাচ্চা কোনটারই গ্রাহক নেই। ডিম মজুতের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় প্রতিদিন হাজারো ডিম নষ্ট করছি! এভাবে চলতে থাকলে পোলট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা পথে বসতে হবে। অন্যদিকে বাজারে দোকান-পাট ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী খামারীর অনেকে ব্যবসা গুঁটিয়ে ফেলার চিন্তা করছে। এখনই সরকারের উচিৎ পোলট্রি শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার। নচেৎ দেশে বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিবে।
আর উপজেলার সবচেয়ে বড় ‘নাপ এগ্রো লিমিটেডে’র ‘বয়লার বিডার ফার্মে বয়লার বিডার রয়েছে চব্বিশ হাজার। দৈনিক ডিম উৎপাদন ১৭-১৮ হাজার। মাসে প্রায় ৫ লক্ষ। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খরচ ৩৫ টাকা। উক্ত ফার্মের মালিক চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গাউছিয়া বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট পেয়ার মোহাম্মদ। এছাড়াও তাঁর চট্টগ্রামের সাকুরা ও ফটিকছড়ি’র ভূজপুর এলাকায় একাধিক পোলট্রি ফার্ম রযেছে। তিনি বলেন, আমি বহু বছর ধরে পোলট্রি ব্যবসায় জড়িত। আমার তিন তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইতোপূর্বে কখনো এ ধরণের সংকট মোকাবিলা করতে হয়নি। বয়লার বিডার ও হ্যাচারীর উৎপাদন নিয়ে চরম দুঃসময় অতিবাহিত করছি! লক্ষ লক্ষ অবিক্রিত বাচ্চা ও ডিম মহাসংকটে আছি। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষৎ অন্ধকার!
এছাড়া উপজেলার অপর ১০টি লেয়ার ফার্মে এ মূহূর্ত্বে পুরোদমে উৎপাদন চললেও ডিম বাজারজাত করতে পারছেনা কেউ। বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে খুচরা বাজারে ডিমের হালি ২৫-২৮ টাকা। পাইকার নেই। ফলে ডিম নিয়ে বিপাকে রয়েছে সাধারণ খামারীরা। আর মুরগী লালন-পালন এবং বাজারজাতকরণে জড়িত রয়েছে দুইশত ত্রিশটি খামারের (বয়লার ও সোনালী) সহ¯্রাধিক ব্যবসায়ী। সম্প্রতি বিশ্ব কাপানো করোনা’র ছোবলে আজ এ পোলট্রি শিল্পের সবই যেন লন্ডভন্ড! বাজারে দোকান-পাট ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় থমকে গেছে পোলট্রি খাত। এদিকে মানিকছড়ির উপজেলার চারটি পোলট্রি ডিলার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছোট-বড় মোট দুইশত চল্লিশটি পোলট্রি খামার রয়েছে। সকল খামারীরা ডিলার মাধ্যমে বাচ্চা কিনে লালন-পালন করেন এবং মুরগী বিক্রি করেন। মুরগী লালন-পালনে ওষুধ,খাবার সবই ডিলাররা সরবরাহ করেন। বর্তমানে ‘করোনা’র ক্রান্তিকালে সবই থমকে গেছে! প্রায় কোটি টাকার পূঁজি মাঠে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে বলা যাচ্ছেনা। রাজশী পোলট্রি’র অধীনে ৫০টি, সজীব পোলট্রি’র অধীনে ১১০টি, জলিল মেম্বার পোলট্রি’র অধীনে ৫০টি এবং শরীফ পোলট্রির অধীনে ৩০টি খামার রয়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুচয়ণ চৌধুরী বলেন, করোনা’র প্রাদূর্ভাবে এ মূহূর্ত্বে বাচ্চা ও ডিম উৎপাদিত খামারসহ সকল খামারীদের সংকটকাল যাচ্ছে। বাজারে দোকান-পাট ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি বন্ধ থাকায় খামারে বেচা-কেনাও নেই। ফলে অস্থিত্ব সংকটে রয়েছে উপজেলার পোলট্রি খামারীরা। অথচ মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মাছ,মাংস, ডিম,দুধ এ মূহূর্ত্বে বেশি বেশি খাবার প্রয়োজন।