তথ্য চাওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সাংবাদিককে হুমকি
স্টাফ রিপোর্টার: তথ্য আইনে খাদ্যশস্য পরিবহন সংক্রান্ত তথ্য চাওয়ায় দৈনিক মানবজমিনের খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি মো. আবদুর রউফ কে দেখে নেওয়া ও এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন। হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার সমস্যা কি? ডিসিকে দিয়ে ইউএনওকে দিয়ে আমাকে কল দেওয়ান! তাদের কাছে আমার নামে অভিযোগ দেন! আমি কি ডিসির চাকরি করি?’
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে তথ্যের জন্য গেলে তিনি এ হুমকি দেন। হুমকির রেকর্ড প্রতিবেদকের নিকট সংরক্ষিত আছে। এসময় ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি সমির মল্লিক উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে মো. আবদুর রউফ জানান, ‘তথ্য চাওয়ায় আমাকে দেখে নেওয়া সহ এলাকা ছাড়া করার হুমকি দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন। তিনি বলেন, ‘গত ফেব্রæয়ারী মাসে খাগড়াছড়িতে গুচ্ছগ্রামের খাদ্যশস্য বিতরণকালে জেলার পানছড়ি উপজেলায় খাদ্যশস্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। যা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে আরও বাড়তি কিছু তথ্যের জন্য পানছড়ি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কফিল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে উনি তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করতে বলেন। এরপর গত ২২ই ফেব্রæয়ারী তথ্য অধিকার আইনের ২০০৯ এর ৮ ধারা অনুযায়ী তথ্যের জন্য আবেদন করলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কফিল উদ্দিন বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে দিয়ে আমাকে ফোন দিয়ে তথ্য না নিতে অনুরোধ জানান। আমি অনুরোধ উপেক্ষা করে আমার তথ্য লাগবে অবস্থানে অটল থাকি। এমতাবস্থায়, গত ২১ই মার্চ নির্দিষ্ট ২০ কর্মদিবস শেষ হলে পানছড়ি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কফিল উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তথ্য দিচ্ছেন দিবেন বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এমতাবস্থায়, গত ২৯ মার্চ উনার অফিসে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। এসময় তার অফিসের কর্মচারী জানান যে আমাকে তথ্য দেওয়া হবে না। আমার এপ্লিকেশন তথ্য আইন অনুযায়ী হয়নি। এরপর এ বিষয়ে জানতে আমি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীনের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি এ বিষয়ে আমার সাথে ফোনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর আমি জেলা প্রশাসককে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। এরপর আজ (৩১ মার্চ) দুপুরে তথ্য না দেওয়ার বিষয়ে উনার অফিসে গেলে আমি কেন জেলা প্রশাসককে কল দিয়েছিলাম সেজন্য উনি জেলা প্রশাসককে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন এবং আমাকে দেখে নেওয়া সহ এলাকা ছাড়া করারও হুমকি দেন। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জীতেন বড়ুয়া বলেন, ‘খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাংবাদিকদের সাথে যে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে তা মোটেও ঠিক হয়নি। উনি সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘তথ্য অধিকার আইন একজন সাংবাদিকের খুঁটি। সাংবাদিক যখন তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইবে তখন তাকে অবশ্যই তথ্য দিতে হবে। তা না করে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাংবাদিককে এলাকাছাড়া করার যে হুমকি দিয়েছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা ঐ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিতে চাই। ঐ কর্মকর্তা সাংবাদিকের সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না।’
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন বলেন, ‘আমরা নাকি উনাকে অসহযোগিতা করছি। উনি ডিসিকে দিয়ে ইউএনওকে দিয়ে আমাকে কল দেওয়ান, আমার নামে অভিযোগ দেন। আমি কি ডিসির চাকরি করি?
প্রসঙ্গত প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর খাগড়াছড়ির প্রায় ২৬ হাজার গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ডধারীর মাঝে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে এ খাদ্যশস্য বিতরণে শুধু পানছড়ি উপজেলাতেই জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের যোগসাজশে ৩ মাস অন্তর অন্তর প্রায় কোটি টাকা কালোবাজারি হয়ে থাকে।