খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে চলছে ইউপিডিএফ’র ৭২ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সহিংসতা ও হত্যার প্রতিবাদে ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌপথ অবরোধ চলছে। ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল থেকে এ সড়ক অবরোধ শুরু হয়। সড়ক অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন ছেড়ে যায়নি। শহরের ভেতর কিছু হালকা যান চলাচল করলেও তা ছিলো অনেকটাই সীমিত। গতকাল শুক্রবার লক্ষ্মীছড়িতে এক সমাবেশ থেকে ইউপিডিএফ এ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
এছাড়াও ঢাকার একটি সমাবেশ থেকে সড়ক ও নৌ পথ অবরোধের ডাক দেয়া হয়েছিল। কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
খবরে প্রকাশ, গত বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাকেল চুরির অভিযোগে মো. মামুনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে খাগড়াছড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ি সদরে অপ্রীতিকর ঘটনায় ৩ জন নিহত ও আরো কয়েকজন আহত হন। দীঘিনালায় পুড়িয়ে দেয়া হয় অর্ধশতাধিক দোকানপাট। বর্তমানে জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। জেলা জুড়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফের সড়ক অবরোধ চলছে
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) ডাকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোর ছয়টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত সড়ক ও নৌ-পথে তিন পার্বত্য জেলায় এ অবরোধের ডাক দেয় পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ। অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেন, ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গায় কোন ধরণের পিকেটিং বা সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এদিকে অবরোধে দূর পাল্লার কোন গাড়ি চলাচল চোখে পড়েনি। স্থানীয়ভাবে সিএনজি, মাহিন্দ্র, অটোরিকশা চলাচল করছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি ) কমল কৃষ্ণ ধর জানান, চলমান অবরোধে মাটিরাঙ্গায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় গণপিটুনিতে খাগড়াছড়ি সদরে মামুন নামে এক যুবক নিহত হয়। এ ঘটনায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ি – বাঙালির মাঝে সংঘর্ষ ,অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা, গুলি ও পাল্টা গুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার বিকালে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিদল খাগড়াছড়ি সফরে আসেন। প্রতিনিধি দলে আরো ছিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা হাসান আরিফ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।
প্রতিনিধি দলটি বিকাল ৩টায় খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন।