পাহাড়ের আলো: অসদাচারণ ও দুর্নীতির অভিযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা,অসদাচারণ ও দুর্নীতির তদন্ত আগামী ৩০ জুলাই হতে শুরু হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজে তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অতুল সরকার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে।
উক্ত নোটিশ বলা হয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দায়িত্ব থেকে বিরত থাকা জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সকল সদস্য পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯ এর ১২ (২) ধারা মোতাবেক অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করা হয়েছে। অনাস্থা প্রস্তাবে তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে। বর্ণিত অভিযোগসমূহের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
এমতাবস্থায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাবের বর্ণিত স্বেচ্ছাচারিতা, অসদাচরণ ও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট সকলকে উপযুক্ত তথা প্রমানাদিসহ ৩০ জুলাই দুপুর ১২টা ও ৩১ জুলাই সকাল ১০ টায় খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করা হয়।
গত ৭ জুলাই অসদাচারণ ও দুর্নীতির অভিযোগে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরাকে পরিষদের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্দেশ দেন।
তার একদিন পর ৮ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন-এর ১৪ ধারায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শেফালিকা ত্রিপুরাকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
উল্লেখ, গত বছরের ৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসলীমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের অন্যতম দোসর জিরুনা ত্রিপুরাকে চেয়ারম্যান এবং আরও ১৪ জন সদস্য নিয়ে পুনর্গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন খাগড়াছড়ি পার্বত্য পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর তিনদিন পর ১০ নভেম্বর নবনিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা।
শুরু থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠে। বড়দিনের খাদ্যশস্য চাউল ও গম বিতরণ না করে আত্মসাতের চেষ্টা, শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণের নামে পরিষদ তহবিল থেকে ৩৫ লাখ উত্তোলন করে বিতরণ না করা, উন্নয়ন প্রকল্পের জামানত থেকে উৎকোচের জন্য ফাইল আটকিয়ে রাখা, পরিষদ সদস্যদের মতামত উপেক্ষা করে খেয়াল-খুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিজ দপ্তর ও হস্তান্তরিত ২৪ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুই-তারাক্কা ব্যবহার, যখন-তখন অফিস আদেশ জারি করে খোদ পরিষদ সদস্যদের হেনস্তা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কাজে যত্রতত্র গাড়ি ব্যবহার করে সরকারি অর্থ অপচয়, বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে অসংলগ্ন অসদাচরণ, স্বজনপ্রীতি ও সদস্যদের অবমূল্যায়ন, খারাপ আচরণ, হস্তান্তরিত বিভাগের বিভাগের প্রধান ও কর্মচারীদের সাথে অসদাচারণ, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতিসহ শিক্ষক বদলি-বানিজ্য, ঠিকাদার বিলের ফাইল আটকিয়ে রেখে ঘুষ বাণিজ্য ও চরম দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়।