পাহাড়ের আলো: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়টি বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষাক্রমের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের (HSC) সিলেবাসে প্রথম যুক্ত হয় ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে। এই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যেন উদ্বেগের শেষ নেই। প্রতিবছর বিপূল সংখ্যক শিক্ষার্থী এই বিষয়টিতে খারাপ করেন। – এখন প্রশ্ন হলো এই ২০২৫ সালেও কেনো শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে ভীতি কাজ করে? কেনো হাতে হাতে এন্ড্রয়েড ফোন থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারছে না। ঠিক এই প্রশ্নটাই করেছিলাম লক্ষ্মীছড়ি সরকারি কলেজের আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক অপু মজুমদার কে – যিনি দীর্ঘদিন প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি পড়াচ্ছেন এবং সম্প্রতি ‘আইসিটি এক্সপ্লোরার’ নামক সহায়ক বইসহ বেশ কয়েকটি একাডেমিক বই রচনা করেছেন।
অপু বলেন- দেখুন আমাদের এই বিষয়টা নিয়ে ভীতি ও ছাত্র-ছাত্রীদের খারাপ করার পিছনে আসলে কয়েকটা দিক আছে। যেমন : একটা দিক হলো রিসোর্চ কেন্দ্রীক, আরেকটা একটা তাদের নিজের সমস্যা। এখন, প্রথমে আসি রিসোর্স নিয়ে – দেখুন বাজারে এই বিষয় নিচে প্রচুর পরিমাণে বই আছে। আসলে এতো বই আছে যে শিক্ষার্থীরা ঠিক কোনটা রেখে কোনটা পড়বে এটা নিয়ে দ্বিধায় থাকে। একেক জনে একেকটা সাজেশন দিচ্ছে। আবার কয়েক বছর থেকে বোর্ড বইও আছে। সমস্যাটা হলো – এই বইগুলো প্রায় একই রকম। কোন কোনটার ক্ষেত্রে একটু আকটু এদিক সেদিক। আর সহায়ক বইগুলো এমনভাবে সাজানে যে এই সহায়ক বইগুলো পড়তে শিক্ষার্থীদের আবার শিক্ষকের সহায়তাও লাগে। এমন কেনো হবে -এই প্রশ্ন রাখেন তিনি। তিনি আরও বলেন একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমেই যে জিনিসটা শিখতে হবে যে, এই বইটা আমি এই বিষয়ের জন্য কিনবে ঠিক আছে। কিন্তু কেনো অন্য লেখকের বই আমি নিবে না। মানে এই বইটা কেনো অন্য বইয়ের চেয়ে আলাদা!! ঠিক কোন কোন দিক বিবেচনা করে আমি এই বইটা কিনছি।
এই প্রশ্নটা সবার আগে অভিভবাবকদের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করার আগে তাদের নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে। অনেকে আছে একাধিক বই কিনে – খুবই ভালো। কেনার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে অথবা যিনি যে বই কিনতে বলেন তাঁকে জিজ্ঞেস করতে হবে। অন্তত বিনয় ও শ্রদ্ধা নিয়ে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আপনার দেয়া সাজেশন বা সিলেকশন অনুযায়ী যে বইগুলো কিনতে বলছেন – এই বিষয়ে অন্যান্য অনেক প্রকাশনী বা লেখকের বই কেনো কেনা ঠিক হবে না তা যদি বুঝিয়ে বলেন -তাহলে ভালো বুঝতে পারতাম। এতে শিক্ষার্থীদের দুইটা উপকার হবে – ০১. বাজারের অন্য বইগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে। ০২. এর মাধমেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তিনি আরও যোগ করেন -আসলে এই বিষয়টির পরিপূর্ণ বইয়ের সত্যিই অভাব এবং এরবসাথে রয়েছে ডিসট্রাকশন এবং অনেক অনলাইন ও অফলাইন কোর্স সেলারদের ভুল প্রচারণা ও বিভ্রান্তি ছড়ানো। এবার তিনি ফলাফল খারাপ হিসেবে আরেকটা কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন তা অনেকটা এই রকম। কিছু শিক্ষার্থী অনলাইনে থাকে কিন্তু পড়াশোনার টপিকগুলোতে যুক্ত থাকে না – থাকলেও হয় পরীক্ষার আগে। তাদের ধারণাটা এমনই থাকে এ আর এমন কী!! সহজ সহজ… পরীক্ষার আগের দিন পড়লেই হবে। আরেক শ্রেণি আবার অনলাইন টিউটোরিয়াল ও শট ভিডিওতে ডুবে থাকে। তাদের ধারণা দুনিয়ার সব ভলো কিছুই এসব ভিডিওতে আছে। আর অতো বই পড়ে কি লাভ!! পিডিএফ নিয়ে নিলেই তো!! পিডিএফ শীট বই নিয়ে মোবাইল দিয়ে পড়ে নিচ্ছি ব্যাস হয়ে গেলো। এদের আগ্রহ আছে কিন্তু সিস্টেমেটিক্যালি তারা ভুল করে। কারণ দুনিয়ার যতো ট্রিকস, সংক্ষিপ্ত সাজেশন, আর যতো রংচংয়ে হেডিং দেয়া ভিডিও, পিডিএফ – এসব তোমার ঠিক তখনই কাজ দিবে যখন শিক্ষার্থীরা একটি পূর্ণাঙ্গ সহায়ক বই বা মেন বই ভালো করে শেষ করবে তখন। তিনি আরও বলেন – বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের ধারণা- রিল, ভিডিও তে যা যা দেখাও সব তো বইয়ের পড়াি পড়ায় – তাহলে তো একই কথা।
কিন্তু তারা এর মধ্য দিয়ে যে শেখার যে মূল মেথড স্কিপ করে যাচ্ছে এটা তারা টের পায় না। এরপরই জনাব অপু’র কাছে জানতে চাই – তাহলে আপনার প্রকাশিত বই নিয়ে কিছু জানতে চাই। তিনি বলেন -দেখুন আমাদের শিক্ষার্থীদের আমরা সৃজনশীল প্রশ্নে নিয়ে এসেছি। তাদের বলছি আর মুখস্থ নয় -বরং বুঝে তারপর উত্তর দাও। কমন আর পড়বে না! কিন্তু বাজারের বইগুলো শ’য়ে শ’য়ে সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও হাজার হাজার এমসিকিউ প্রশ্নের বইয়ের সমাহার। কোন বইতে এমন আছে যেখনে শিক্ষার্থীদের টপিক অনুযায়ী সৃজনশীল প্রশ্ন লেখা শিখিয়েছে – প্রশ্ন রাখেন তিনি। বিষয়টি এমন হয়েছে যে কোন অধ্যায়ের যতগুলো টপিক আছে তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি হলো ঐ অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর। একটা টপিক থেকে আসলে কয়টা সৃজনশীল শিখতে হয়? বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচলিত বইগুলোতে সৃজনশীলই মুখস্থ করানে হয়- কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্ন কিভাবে উত্তর করতে হয় এটা শেখানো হয় না।
এছাড়াও একটা কমন বিষয় রয়েছে কয় পৃষ্ঠা লিখতে হবে? বেশি লিখলে বেশি নম্বর পাওয়ার ধারণা -কয়েকদিন আগেও বিভিন্ন মিডিয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করা হচ্ছে কয় পৃষ্ঠায় উত্তর লিখেছো? তারা বলছে এতো পৃষ্ঠা। ভালো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর বেশি লেখায় নয় -বরং পরীক্ষা নম্বর দেন বিভিন্ন অংশের উত্তর ঠিকভাবে লেখা হয়েছে কি না তার উপর। যেমন কোন শিক্ষার্থী ৫ পৃষ্ঠা ব্যাপী প্রশ্নের উত্তর লিখলো কিন্তু গ) নং এর ৩ টা অংশের মধ্যে একটা অংশের উত্তর তার লেখায় আসে নি। আবার ঘ) নং এর চারটা অংশের মধ্যে দুটো অংশের উত্তর তার লেখায় আসে নি। তাহলে সে ৫ পৃষ্ঠা নয় ১০ পৃষ্ঠা ব্যাপী একটা প্রশ্নের উত্তর লিখলেও পুরো নম্বর পাবে না। ফলাফল, রেজাল্ট আসার পর আফসোস, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এর জন্য আসলে শুধু সে নয় বাজারের প্রচলিত বইগুলো ও দায়ী। যা তারা কখনোই জানতে পারে না। এবার আসি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন নিয়ে এক্ষেত্রে শুধু উত্তর ও ব্যাখা নয় কিন্তু এক্সাম এপ্রোচও দরকার। দরকার ক্যালকুলেটর হ্যাকস। কিন্তু বিগুলেতে এসব কৌশলে এভয়েড করা হয়েছে।
এছাড়াও অনেক টপিক আছে যেগুলো সরাসরি ঐ টপিক না শিখে আগে তার সাথে সম্পৃক্ত টপিকগুলো (যা সিলেবাসে নেই) বুঝে তারপর ঐ সিলেবাসের টপিক শিখতে খুব ভালো বুঝা যায় সেগুলো আমি বইতে যুক্ত করেছি। আসলে একজন শিক্ষার্থীর আইসটি বিষয়টি সহজ করে বুঝে শেখার জন্য যা যা করণীয় এবং উপরোক্ত সকল সমস্যার সমাধান হিসেবে আমি বইটিকে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেছি। এরপরই মি: অপু’র কাছে জানতে চাই- আপনি এর আগে যে শিক্ষার্থীদের খারাপ ফলাফলের যে কারণগুলোর কথা উল্লেখ করেছেন – তার সমাধান কী হতে পারে? তিনি বলেন -সহজ সমাধান শিক্ষার্থীর সবার আগে একটি ভালো বই থেকে পড়বে – তারপর বাকী সব। যতই অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা কিছুই দেখুক না কেনো এতে সময় নষ্ট করা যাবে না। তাদের মনে রাখতে হবে – মূলত শিখতে হবে ভালো বই থেকে তারপর পড়াশোনা স্কেলআপ করার জন্য বাকী সব। যে টপিক তুমি বই থেকে শেখোনি সেই টপিক কখনোই কোন ভিডিও, পিডিএফ থেকে পড়বে না। এর জন্য শিক্ষার্থীরা আমার রচিত ও প্রকাশিত আইসিটি এক্সপ্লোরার এবং আইসিটি প্র্যাকটিক্যাল নোট বুকগুলো থেকে সহায়তা নিতে পারে।
বইটি প্রাপ্তিস্থান: “লক্ষীছড়িতে বইগুলো পাওয়া যাচ্ছে ‘শ্রাবণী লাইব্রেরীতে’।