• November 23, 2024

‘অপারেশন জ্যাকপট’ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ নৌ-কমান্ডোর

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নৌ-কমান্ডোর প্রথম অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ অবলম্বনে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন একাত্তরের নৌ কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী। অপারেশন জ্যাকপটের ৩০ কোটি টাকার ‘গরিবি বাজেট’ তবে তার অভিযোগ নাকচ করে নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্য নিয়েই চলচ্চিত্রটির গল্প সাজিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আবু মুসা গত ৯ মে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করেন, চলচ্চিত্রের কাহিনী ‘অতিরঞ্জিত’ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ ঘটানো হচ্ছে। একাত্তরের ১৪ অগাস্ট রাতে পরিচালিত ‘অপারেশন জ্যাকপটে’ চট্টগ্রাম বন্দওে কোনো জাহাজ ধ্বংস হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে জন্ম নেওয়া আবু মুসা চৌধুরী মাত্র ১৬ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বর্তমানে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন তিনি। তিনি বুধবার টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অপারেশন জ্যাকপটে ‘এমভি হরমুজ’ ও ‘এমভি আব্বাস’ নামে দুটি জাহাজ ধ্বংসের তথ্য ঠিক নয়। জাহাজগুলো ধ্বংস হয়নি। আমার এখনও মনে পড়ে। আমার চোখের সামনে জাহাজগুলো ভাসছে।”অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নেওয়া এই মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠানের টাকা খরচ করে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রে অসত্য তথ্য তুলে আনা হচ্ছে। “আমি নিজে যেখানে যুদ্ধ করেছি, সেখানে যখন ইতিহাস বিকৃতি দেখলাম, তখন আমি আর সহ্য করতে পারিনি। আমি যেটা জানি সেটার উপরই প্রতিবাদ শুরু করলাম।” ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট চট্টগ্রাম, মোংলা, চাঁদপুর ও নারায়ণগঞ্জ বন্দরে একযোগে বাংলাদেশের নৌ কমান্ডোদের প্রথম অভিযান ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’।

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বলেন, তখন চট্টগ্রামে যে জাহাজ ডুবানো হয়েছিল, সে বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য তিনি পেয়েছেন। “আমরা ন্যূনতম ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, যারা সরাসরি অপারেশনে ছিলেন। সবাই যা বলেছেন, ওটার উপর ভিত্তি করেই চিত্রনাট্য করেছি। এখন এই ভদ্রলোক কী বলেছেন, সেটা জানি না। “জাহাজ ড্বুবে না কেন? অপারেশন জ্যাকপটে চট্টগ্রামে তো জাহাজ ডুবেছে। নথিপত্রে, দলিলে আছে।” ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নিয়ে বাংলাপিডিয়ায় বলা আছে, “বন্দরে ‘এমভি হরমুজ’ এবং ‘এমভি আল-আববাস’ নামে দুটি পাকিস্তানি জাহাজসহ বেশ কয়েকটি বার্জ ও জাহাজ ধ্বংস হয়। এমভি হরমুজে ৯৯১০ টন এবং এমভি আল-আববাসে ১০,৪১৮ টন সমর সরঞ্জাম ছিল।” তবে বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণিত পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ নামের পাঠ্যবইয়ে ‘অপারেশন জ্যাকপটে’ কোনো জাহাজ ধ্বংসের তথ্য উল্লেখ নেই।

বন্দরের কর্ণফুলী নদীতে ওই অভিযানে নয়টি জাহাজ লিমপেট মাইন দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন নৌ কমান্ডোরা- এমন তথ্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রকাশনা বন্দর বার্তায় একটি প্রবন্ধ লিখেছেন ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চলচ্চিত্র গবেষণা দলের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, প্রাক্তন বন্দর কর্মকর্তা, সাংবাদিক আ ক ম রইসুল হক বাহার। তবে আবু মুসা চৌধুরীর দাবি, বাংলাপিডিয়ার তথ্যও ‘নির্ভরযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয়’। “আমি অপারেশন জ্যাকপটের সদস্য। আমি সত্য তথ্যটা জানব,” বলেন তিনি। তার মতে,  ‘অপারেশন জ্যাকপট’র মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে ব্যাপক মহড়া হয়েছিল। “এতে কোনো জাহাজ ধ্বংস না হলেও আমরা পাকবাহিনীর ভিত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

অপারেশন জ্যাকপটে পাকবাহিনী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।” চিত্রনাট্য না দেখে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলছেন কীভাবে- এই প্রশ্ন রেখেছেন নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। উত্তরে নৌ-কমান্ডো আবু মুসা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উনারা সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। ওখানে দুটি জাহাজের নাম উল্লেখ করেছেন;  ওখানে দেখেছি। ওখানে জাহাজের নাম এসেছে। নাহলে তো আমি জানতামই না।”চলচ্চিত্রটিতে তথ্যসূত্র হিসেবে বিভিন্ন নৌ-কমান্ডোদের সাক্ষাৎকার ও নৌ-কমান্ডো সাজিদুল হক চুন্নুর ‘মুক্তিযুদ্ধে নৌ-কমান্ডো পলাশী কর্ণফুলী ও কলকাতা’ শিরোনামে বইকে গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান নির্মাতা সেলিম। আবু মুসা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে ‘হাইলাইট’ করা হবে বলে তিনি জেনেছেন। “উনি (শাজাহান খান) নাকি তখন মাদারীপুরে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছিলেন, ওটা চলচ্চিত্রে তুলে আনা হবে।” তার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, “শাজাহান খান কেন অভিনয় করবেন? স্টোরি লাইন যা পাইছি, সে অনুযায়ী ফিকশন তৈরি হচ্ছে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে একটি সিনেমা। ওনাদের আবার অ্যাক্টিং করার সুযোগ আছে নাকি? একাত্তরে ওনার বয়স ছিল ১৮ বছর।” বিষয়টি নিয়ে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থায়নে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য সম্পন্ন হয়েছে।

১৬ সেপ্টেম্বর ছবির মহরতের আয়োজন করা হবে। তবে এখনও ছবিটির কাস্টিং বাকি আছে বলে জানান গিয়াস উদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, “শুটিংয়ের তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। ব্যাপারটা প্রক্রিয়াধীন আছে। সরকারের তরফ থেকে ইংগিত পেলেই শুটিং শুরু করব।”ছবির সংগীতায়োজনে ভারতের এ আর রহমানকে নেওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান সেলিম। সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post