ইউপিডিএফ’র হুমকিতে পালিয়ে আসা লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ
মহালছড়ি প্রতিনিধি: প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার দায়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি থেকে উচ্ছেদকৃত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করলেন মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসন। ২০ এপ্রিল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহালছড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে বসতভিটা ছেড়ে উপজেলার মুবাছড়ি ইউনিয়নের খুলারাম পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া অর্ধ শতাধিক পরিবারের মাঝে চাল,ডাল, তৈল, মশারী ও শুকনা খাবার বিতরণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না নাসরিন উর্মি, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাকলী খীসা, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল, মুবাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান বাপ্পী খীসা।
ত্রাণ বিতরণকালে বসতভিটা ছেড়ে আসা ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, ইউপিডিএফ এর লোকেরা অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে এসে তাদেরকে ভিটে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দেয়। বসত বাড়ি ছেড়ে না গেলে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়। ভিটেবাড়ি ছেড়ে যেতে না চাইলে কয়েকটা পরিবার মারধরেরও শিকার হন বলে জানান। বেতছড়ি গ্রামের পুরাতন পাড়ার বাসিন্দা মিন্টি চাকমা ও কতুকছড়ি থেকে আসা বিনতা চাকমা বলেন, প্রাণের ভয়ে তিনি এক কাপড়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে। তাদের এখন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এদিকে বেতছড়ি জেনারেল ওসমানী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী লিজা চাকমা জানান, তাঁর ২১ এপ্রিল মডেল টেষ্ট পরীক্ষা শুরু হবে। এ অবস্থায় সে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা মোটেও সম্ভব নয়। পরীক্ষা দিতে গেলে ইউপিডিএফ’র লোকেরা তাদের দেখা মাত্রই গুলি করবে। একইভাবে অভিযোগ করে ফরেস্ট অফিস এলাকার আদর্শী চাকমা বলেন, তাঁর ছেলে ওপেন চাকমা পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা দেবে। এ অবস্থায় থাকলে সময়মতো লেখাপড়া আর পরীক্ষা দিতে না পারলে তাঁর ছেলের ভবিষ্যত যে কি হবে তা তিনি ভেবে পাচ্ছেন না। তাই তারা এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা বলেন, এ ধরণের ঘটনা খুবই দুঃখ জনক। খুন, অপহরণ, হুমকি-ধামকি দিয়ে নিজ বসত বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া, এ ধরণের কাজ পৃথিবীর সবচাইতে জঘন্যতম কাজের চাইতে আর কি থাকতে পারে? পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের নামে যারা এ ধরণের ন্যাক্কারজনক সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে, তাদের অচিরেই জনসাধারণের সম্মূখে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল নানিয়ারচর উপজেলার ফরেস্ট অফিস এলাকায় ইউপিডিএফ’র সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর থেকে এম এন লারমা পন্থী জেএসএস ও প্রসীত পন্থী ইউপিডিএফ’র মধ্যে হামলা পাল্টা হামলার চরম আকার ধারণ করে। পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় পক্ষের ১০ জনের অধিক কর্মী ও সমর্থক নিহত হন। এরই রেশ ধরে বিভিন্ন এলাকায় কর্মী ও সমর্থক পরিবারগুলোর উচ্ছেদের ঘটনা ঘটতে থাকে।