আরিফুল ইসলাম মহিন: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার রসুলপুর এলাকার পাহাড়ে মরুভূমির খেজুর চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন নূর আলম। একসময় আইটি সেক্টরের ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। কিন্তু শখের বশে পাহাড়ে জমি কিনে ফলের বাগান শুরু করেই আজ তিনি জেলার অন্যতম সফল ফলচাষি। ২০১৮ সালে ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। বর্তমানে তার খেজুর বাগানটি দেশের ভেতর বাণিজ্যিকভাবে মরুভূমির খেজুর চাষের অন্যতম অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে ইংল্যান্ড থেকে বারোহি জাতের ২৫টি খেজুর চারা এনে চাষ শুরু করেন তিনি। পরে সৌদি আরব থেকে আনেন আরও ৫০টি খেজুর চারা। এখন তার দুই একরের খেজুর বাগানে ১২৫টি খেজুর গাছ রয়েছে, যার মধ্যে বারোহি ও আমবার জাতের গাছ রয়েছে। অধিকাংশ গাছে ইতোমধ্যে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছে ৪ থেকে ৭টি কাঠিতে ঝুলছে সবুজ ও লাল রঙের সুমিষ্ট খেজুর।
নূর আলম জানান, খেজুর চাষে সাফল্যের পেছনে ইউটিউব ভিডিও ছিল প্রেরণা। মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে উপযোগীতা যাচাই করে চারা রোপণ শুরু করেন। তিন বছরের মাথায় ফল বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রথম বছরে খেজুর বিক্রি করে আয় করেন এক লাখ টাকার বেশি। গত বছর বিক্রি করেন ৩ লাখ টাকার। আর চলতি বছর ৭ লাখ টাকার বেশি বিক্রির আশা করছেন তিনি।
এছাড়া তিনি খেজুর চারা তৈরি করেও সাড়া পেয়েছেন। প্রতিটি চারা বিক্রি করছেন ১৫ হাজার টাকায়। তার বাগানে উৎপাদিত খেজুর পাইকাররা গাছ থেকেই কিনে নিচ্ছেন ৫৫০ টাকা কেজি দরে। খেজুরের স্বাদ ও আকার এমনকি মরুভূমির খেজুরকেও টক্কর দেবে বলে দাবি তার।
নূর আলম বলেন, “দেশে মরুভূমির খেজুরের বিপুল চাহিদা রয়েছে, অথচ আমরা প্রায় পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। তাই আমি ভাবলাম, দেশেই যদি চাষ করি তাহলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য এটি নতুন পথ খুলে দেবে।” তার মতে, খেজুর চাষে খরচও কম। বছরে মাত্র একবার জৈব ও একবার রাসায়নিক সার দিলেই যথেষ্ট। পরিচর্যার ঝামেলাও কম। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে বাজারজাত করাও সম্ভব।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম বলেন, “নূর আলম পরীক্ষামূলকভাবে খেজুর চাষ শুরু করেন এবং সফল হয়েছেন। খাগড়াছড়ির পাহাড়ি মাটি ও আবহাওয়া সৌদি খেজুর চাষের উপযোগী। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার এই সাফল্যে অন্যান্য কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।”
নূর আলমের এই প্রচেষ্টা পাহাড়ি জনপদে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে। তার এই সফলতা দেশের শিক্ষিত তরুণদের কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।