স্টাফ রিপোর্টার: খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় বার্মাছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হওয়া ১কোটি ২০লাখ টাকার কাঠ বন বিভাগের রহস্যজনক ভূমিকায় পাচারকারিরা সরিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শনাক্তকৃত অবৈধ কাঠ রাতের আঁধারে সরিয়ে ফেলেছে ইউপিডিএফ (প্রসিত) সন্ত্রাসী গ্রুপ ও কাঠ পাচারকারী চক্র এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনীর সূত্র।।
জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর লক্ষীছড়ি জোনের অধীন বার্মাছড়ি সেনা ক্যাম্প কর্তৃক পরিচালিত নিয়মিত টহল অভিযানে বর্মাছড়িমুখ সংলগ্ন দেওয়ানপাড়া এলাকায় বিপুল পরিমাণ অবৈধ কাঠের মজুদ শনাক্ত করা হয়, যা স্থানীয় কাঠ পাচারকারী চক্র কর্তৃক পাচারের প্রস্তুতি চলছিল।
অভিযান শেষে নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ কর্মকর্তাদের অবহিত করে। তবে পরবর্তী ৩/৪ দিন পর্যন্ত বন বিভাগ কর্তৃক অবৈধ কাঠ গুলি আহরণ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিলম্বিত হওয়ায়, রাতের আধারে গোপনে ইউপিডিএফ (প্রসিত) গ্রুপ ও কাঠ পাচারকারী চক্র অবৈধ কাঠগুলি অন্যত্র সরিয়ে ফেলে। ৩ নভেম্বর সোমবার বন বিভাগের একটি দল অবৈধ শনাক্তকৃত কাঠগুলি আহরণ ও সংরক্ষণ করতে গেলে দেখতে পায় অবৈধ কাঠ পাচারকারীরা ইতোমধ্যে শনাক্তকৃত কাঠ পাচার করে নিয়ে গেছে।
বন বিভাগের কর্মতৎপরতার অভাবে অপরাধী চক্রগুলো আরও উৎসাহিত হচ্ছে এবং বন সম্পদ ধ্বংসের সুযোগ পাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বার্মাছড়িমুখ ও সংলগ্ন এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে কাঠ পাচার ও ইউপিডিএফ (মূল) এর অবৈধ কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর সে কারণেই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রচেষ্টা করছে ইউপিডিএফ এবং কিছু অসাধু কাঠ পাচার চক্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীছড়ি ভারপ্রাপ্ত বন কর্মর্তা মো: জাহাঙ্গির আলম জানান, গত অক্টোবর কাঠ আটক হলেও আমাদের কাছে খবর আসে আরো দেরিতে। আমাদের প্রস্তুুতি নিতে বিলম্ব হওয়ার কারণেই কাঠ পাচারকারিীরা আটককৃত কাঠগুলো সরিয়ে ফেলে। কাঠগুলো হেফাজতে আনতে কেনো বিলম্ব করলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, জায়গাটি দুর্গম এলাকা হওয়ায় নিরাপত্তার সমস্যা থাকায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কোনো কাঠ সেখানে নেই। সবগুলো কাঠ দুস্কৃতিকারীরা নিয়ে গেছে।
পাচারকারী এবং বনবিভাগের সহায়তায় দীর্ঘ দিন ধরে হাজার হাজার ঘনফুট কাঠ অবৈধভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কখনই বনবিভােগ স্বপ্রণোদিত হয়ে কাঠ আটক করেছে এমন নজির খুবই কম। বর্মাছড়ি এলাকায় সেনাটহল যখন জোড়দার করা হয়, তখনিই থমকে যায় অবৈধভাবে কাঠ পাচার। গত ২৪ অক্টোবর থেকে বর্মাছড়ি এলাকায় গত ১২ দিনে অন্তত ১০হাজার ঘনফুট কাঠ মজুদ করা হলেও নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকায় উক্ত কাঠ পাচার করতে পারেনি অসাদু ব্যবসায়ীরা। সর্তাখালে বাঁশের চালির উপর শত শত কাঠের সারি নজরে পড়ে সেনাবাহিনীর। এরপরই অভিযানে নেমে প্রায় ৪হাজার ঘনফুট কাঠ জব্দ করে বনবিভাগকে অবহিত করে। যার বাজার মূল্য ১কোটি ২০লাখ টাকা। সরকারের এই বিশাল রাজস্ব আদায় নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু বনবিভাগের দায়িত্বহীনতা, অবহেলা এবং রহসজনক ভূমিকার কারণে তা ভেস্তে গেলো। সচেতন মহলের ধারনা বনবিভাগের নিরবতার কারণেই সরকার কোটি টাকার রাজস্ব প্রাপ্তী থেকে বঞ্চিত হলো। যে সকল কর্মকর্তাদের অবহেলায় এত বড় রাজস্ব বঞ্চিত হলো সরকার বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে এমনটি হয়ত আর ঘটবে না।