মাহে রমজানের সওগাত-২৯
মুহম্মদ আলতাফ হোসেন
আজ ২৯ রমযান। আজ বা কালের মধ্যেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেবে রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমযান। কাজই কাল বা পরশু পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা।
রমজান মাসের রোযা পালনের পর ‘ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে যে সাদকা বা দান করতে হয়, তাকে ফিতরা বলা হয়। হাদীসের পরিভাষা হলো সাদাকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর। যেহেতু রমজান মাসের রোযা শেষে এ সাদকা আবশ্যক হয়, সেহেতু এটিকে সাদাকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর বলা হয়।
হাদীসে ফিতরাকে ফরজ হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। ইবন উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুসলমানদের দাস, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সকলের উপরই যাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং লোকদেরকে নামাজে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন । নবী করীম (সাঃ) মক্কার অলিতে গলিতে ঘোষণা দেওয়ার জন্য ঘোষক প্রেরণ করলেন এ ঘোষণা দেওয়ার জন্য যে, জেনে রেখো, পুরুষ-নারী, দাস-স্বাধীন, ছোট-বড় প্রতিটি মুসলমানের উপর সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব। আর তা হলো দুই মুদ (অর্থ সা’) গম এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য এক সা’’’ ।
মূলতঃ ফরজ এবং ওয়াজিবের মধ্যে পরিভাষাগত পার্থক্য থাকলেও ‘আমলের দিক দিয়ে এতদোভয়ের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং ফরজ বা ওয়াজিব যাই বলা হোক, ফিতরা দেয়া যে প্রত্যেকের উপর আবশ্যক এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ বা মতভেদ নেই।
দুটি উদ্দেশ্যে ফিতরাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একটি হলো রোযাকে ভুল-ত্রুটি হতে পবিত্র করা এবং অন্যটি হলো দুঃস্থ-দরিদ্রের খাদ্যের সংস্থান করা। ইবন ‘আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যাকাতুল ফিতরকে বাধ্যতামূলক করেছেন রোযাকে বেহুদা কাজ ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্রকরণ ও দরিদ্রদের খাবার সংস্থানের জন্য। সুতরাং যারা নামাযের পূর্বেই এটি আদায় করবে, তা যাকাত (ফিতরা) হিসেবে গৃহীত হবে। আর যারা নামাযের পর আদায় করবে, তা সাধারণ দান হিসেবে পরিগণিত হবে।
ইসলামের আনন্দ অনুষ্ঠানগুলোও নির্মল ও পবিত্র ভাবধারায় সমৃদ্ধ। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ উৎসব হলো ঈদ। ঈদের দিন উত্তম পোশাক, ভাল ভাল খাবার, সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলমানগণ আনন্দ উৎসব করে থাকেন। দরিদ্র, দুস্থ ও অনাথরাও যাতে আনন্দ উৎসবে শামিল হতে পারে, এ লক্ষ্যেই প্রতিটি সামর্থমান ব্যক্তির উপর ফিতরাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে দরিদ্রদের জন্য বোনাস বা উৎসব ভাতার ব্যবস্থা। এখানে একটি কথা স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, যাকাত, ফিতরা প্রভৃতি দরিদ্রদের প্রতি বিত্তবানদের অনুগ্রহের দান নয়। বরং এগুলো তাদের সম্পদে দরিদ্রদের সুনির্দিষ্ট অধিকার। কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের জন্য সুনির্দিষ্ট হক বা অধিকার রয়েছে
স্মর্তব্য যে, যে সকল লোক খুবই গরীব, অথচ আত্মমর্যাদার কারণে বা লজ্জার কারণে লোকদের নিকট কোন কিছু চায় না, সে সমস্ত দরিদ্র লোক যাকাত, ফিতরা প্রভৃতি বেশি হকদার এবং তাদেরকে এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।