সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাজেক থেকে ফিরলো সকল পর্যটক, ৩দিন সাজেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
স্টাফ রিপোর্টার: অনাকাংখিত পরিস্থিতি এড়াতে আগামী তিন দিন ২৪, ২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির পর্যটন নগরী সাজেক ভ্রমণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করেছে জেলা প্রশাসন। ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভায় এমন সিন্ধান্তের কথা জানান, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান।
এদিকে চারদিন ধরে সাজেকে আটকে পরা প্রায় দেড় হাজার পর্যটক মঙ্গলবার নিরাপদে খাগড়াছড়ি এসে পৌছেছেন। সাজেক জুমঘর ইকো রিসোর্টের ব্যবস্থাপক ইয়ারং ত্রিপুরা বলেন, মঙ্গলবার সকালে পর্যটকবাহী গাড়িগুলো সাজেক ছেড়ে গেছে। বর্তমানে সাজেকে আর কোনো পর্যটক নেই।
সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় পর্যটকদের গাড়ি সাজেক থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেছে। সব গাড়ি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।
উল্লেখ্য,খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা ৭২ ঘণ্টা অবরোধের কারণে শনিবার থেকে সাজেকে আটকা ছিলেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাজেক থেকে ফিরেছেন পর্যটশরা। ৭২ ঘণ্টারও বেশি সময় আটকা থাকার পর সাজেক পর্যটন কেন্দ্র থেকে তারা ফেরেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে বাঘাইহাট সেনা জোনের সহায়তায় সকাল ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি শহরে এসে পৌছেন পর্যটকরা। এ সময় পর্যটকদের উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। এ দিকে ৭২ ঘণ্টার সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শেষে খাগড়াছড়িতে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। হাঁট-বাজারগুলোতে পাহাড়ি-বাঙালির উপস্থিতি ফেরেছে অনেক।
জানা গেছে, ৭২ ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে পাহাড়ি ছাত্র ও স্থানীয় লোকজন মিলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে বাঘাইহাট-সাজেক সড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সড়কে ট্রাক রেখে এবং টায়ার পুড়িয়ে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী করে তোলে। সেনাবাহিনীর ও স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ও ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে রাস্তা যানবাহন চলাচলে উপযোগী করা হয়।
এর মধ্যে আটকে পড়া প্রায় অর্ধ শতাধিক পর্যটক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রাইভেট হেলিকপ্টার যোগে আকাশ পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে সাজেক ছেড়ে যান।
খাগড়াছড়ি ফিরে পর্যটকরা আটকে থাকা অবস্থায় তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, অবরোধের কারণে সাজেকে পানি ও খাবারের সংকট দেখা দেয়। গুজবের কারণে পর্যটকদের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক ছিল। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও স্থানীয়দের আন্তরিক সহযোগিতা ছিল। এর জন্য পর্যটকরা সেনাবাহিনীসহ সকলের কৃতজ্ঞকতা জানিয়েছেন। পর্যটকরা ফেরার পথে সড়কের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া প্রহরা ছিল।
উল্লেখ, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ৭টার দিকে মোটরসাইকেল খাগড়াছড়ি জেলা সদরে ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. মামুনকে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জেরে সহিংসতায় ছড়িয়ে পড়ে। দীঘিনালায় অর্ধশতাধিক দোকানপাটে আগুন, স্বণির্ভরে সেনাবাহিনীর উপর গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে। সহিংসতার ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়িতে ৩ জন ও রাঙামাটি একজনসহ ৪ জন নিহত হয়।
এ ঘটনা ঢাকার একটি সমাবেশ থেকে পাহাড়িরা শনিবার থেকে ৩ পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার সড়ক ও নৌ পথ অবরোধের ডাক দেয়। কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে অবরোধ পালনের ঘোষণা দেন আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। অবরোধ শেষে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে পাহাড়ের জনপদ।