করোনায় এবারও প্রাণহীন খাগড়াছড়ির বৈসাবি উৎসব
এম সাইফুর রহমান: করোনার থাবায় এবারও প্রাণহীন পাহাড়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব বৈসাবি। লক ডাউন পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে হাট-বাজার চালু থাকলেও হচ্ছে না বৈসাবি উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা। অন্যান্য বছর এ সময় থেকে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠান থাকলেও এখন যেনো ব্যস্ততা নেই কারো। অলস পড়ে আছে খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়া পাড়া মারমা উন্নয়ন সংসদের জলকেলী ও গ্রামীণ খেলাধুলার জন্য মুখর থাকা মাঠগুলো। সরকারি আয়োজন না থাকায় শুনসান নীরবতা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। তারপরও সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৈসু, সাংগ্রাইং ও বিজু উদযাপনে প্রস্তুতি রয়েছে কারো কারো।
খাগড়াছড়িতে ফুল বিজুর মধ্যদিয়ে আজ শুরু হয়েছে বৈসাবি’র আনুষ্ঠানিকতা। ভোরে চেঙ্গী ও মাইনী নদীতে বাহারী ফুল দিয়ে জল দেবতার প্রার্থনা করেন চাকমা সম্প্রদায়। পুরানো বছরের দুঃখ, গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছর যেনো সুখ-শান্তির বার্তা নিয়ে আসে এ বিশ^াস থেকে যুগ যুগ সময় থেকে এটি পালিত হয়ে আসছে। ফুল বিজুর এ দিনে মহামারী করোনা থেকে মুক্তি লাভের আশায় সকাল থেকে বিহারে বিহারে চলছে প্রার্থনা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাংলা নববর্ষের শেষ দুই দিন ও প্রথম দিনকে ঘিরে বর্ণিল আনুষ্ঠানিকতা থাকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের পল্লী গুলোতে। চাকমা সম্প্রদায়রা ১২ এপ্রিল স্থানীয় নদী-ছড়ায় ফুল দিয়ে জল দেবতার উদ্দেশে পুরানো বছরকে বিদায় জানায়। ১৩ এপ্রিল মূল বিজু বা অতিথি অ্যাপায়ন পর্ব ও ১৪ এপ্রিল নতুন বছরকে বরণ ও গজ্জা পজ্জা অনুষ্ঠান পালন করে। ত্রিপুরারা ১৪ এপ্রিল থেকে বৈসু উৎসবের অনুষ্ঠান শুরু করে। এ দিন নানা বয়সীরা গ্রামে গ্রামে ঘোরা ফেরার পাশাপাশি চলে ঐতিহ্যবাহী গরিয়া নৃত্য। বাংলা নববর্ষের দিন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মারমা সম্প্রদায় শুরু করে সাংগ্রাইং উৎসব। জলকেলী, গ্রামীণ খেলাধুলাসহ নানা বর্ণিল অনুষ্ঠানে মুখর হয়ে উঠে পাহাড়ের একেকটি জনপদ।
তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে যেনো সবকিছু প্রাণহীন। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়গুলো প্রতিবছর বর্ণিল অনুষ্ঠান পালন করলেও এবার যেনো শুনসান নীরবতা পাহাড়ী পল্লী গুলোতে। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় বিধি নিষেধে এবারও রং নেই পাহাড়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব বৈসাবি পালনে। তবে ফুল বিজুর এই দিনে সার্বজনীন পার্থনায় প্রত্যশা একটাই। পুরানো বছরের গ্লানির সাথে মুছে যাক করোনার যত অভিশাপ। নতুন বছরের নতুন ভোরে ভরে উঠুক সুন্দর ও সুস্থ্য এক পৃথিবী এমনটা প্রত্যাশা সকলের।