চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি চার লেইন সড়ক: ৪’শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার, ফটিকছড়ি(চট্টগ্রাম): চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি চার লেইন মহা সড়কের উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়-টিলা কাটা মাটি। ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না পাহাড়- টিলা কাটা। রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্র জানায়, দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পের আওতায় এ কাজ সম্পন্ন করা হবে। ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সরু সড়কটি চারলেনে উন্নীত করা হবে। বিদ্যমান সড়কের দ্বিগুণ করা হবে এ সড়ক। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ১৮ ফুট রয়েছে। সড়কের পাশাপাশি নির্মাণ করা হবে ৩০৮ মিটারের ৩৮টি আরসিসি কালভার্ট। সড়কবাঁধ প্রশস্ত করতে দেওয়া হবে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫০৫ দশমিক ৬ ঘনমিটার মাটি। রোড সাইন-সিগন্যাল, গাইড পোস্ট, রোড মার্কিংসহ নেয়া হবে সড়ক নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ১৮ ফুট প্রস্থের সড়কটিকে ৩৪ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। ইস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ইবিবিআইপি) এর আওতায় চলছে এ কাজ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩ শত ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয় সরকার। এতে চার ভাগে বিভক্ত করে দুইটি ঠিকাদারী প্রতিষ্টান কাজ শুরু করে। তৎমধ্যে ফটিকছড়ি অংশে কাজ করছে রেভ আরসি প্রাইভেট লিমিটেড। গত বছেরর ২১ সেপ্টেম্বর ৩৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়ক সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এতে হাটহাজারী থেকে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি পর্যন্ত ৩২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কটি চারলেনে উন্নীত হচ্ছে। এলাকাবাসির অভিযোগ করে জানান, সড়কে মাটি ভরাটে চলছে অনিয়ম। ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড় টিলা কেটে লাল মাটি। হালদা নদী, ধুরুং খালের চর কেটে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। ড্রেন নির্মাণে করা হচ্ছে নয়-ছয়। কোন কোন স্থানে সড়কের পূর্ব দিকে ড্রেন করার কথা থাকলেও পরে সেটি পশ্চিম দিকে করছে। অনেক স্থানে নিম্ম মানের পাথর ও ইটের খোয়া দিচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত মাটি ভরাট না করেই রাস্তার পাশে কুড়ে সেই মাটিই ব্যবহার করা হচ্ছে। তিন ফুট কুড়ার কথা থাকলেও তিন ফুট কুড়া হচ্ছে না। বালি দিয়ে ভরাট করা স্থানে রোরাল চাপা যথাযত ভাবে দেওয়া হচ্ছে না। বালু চেপে মুল সড়েকর সাথে মাত্র চার ইঞ্চি ব্যবধান রেখে এতে দেয়া হচ্ছে ইট বালুর খোয়া। বালুর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে মাটি। এ খোয়া দেয়ার পর আবার রুরাল চাপা হচ্ছে। পাইন্দং কারবালাটিলা, ভেড়াজালি, শ্বেতকুয়া, কাঞ্চন নগর, মানিকপুর এলাকায় পাহাড়ি টিলা কেটে ড্রাম ট্রাকে ভরে সড়কে ভরাট করা হচ্ছে। সিএনজি চালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, যে ভাবে রাস্তার কাজ করা হচ্ছে এতে বুঝা যাচ্ছে এ রাস্তা বেশী দিন টিকবে না। একেবারেই বাজে ধরণের কাজ করছেন ঠিকাদাররা। পরিবেশ সংগঠনের কর্মী ফুল মিয়া বলেন, হালদা নদীর পাইন্দং, যুগিনীঘাটা, ফকিরাচান, সুন্দরপুর, নারায়নহাটের পিলকানা, সাপমারা এলাকা থেকে বিধি ভঙ্গ করে নদীর চর কেটে রেভআরসি সড়কের কাজে ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রেভআরসি লি: এর প্রজেক্ট ম্যানেজার নুরুজ্জামান বলেন, আমরা পাহাড় কাটার মাটি সড়কে ব্যবহার করছি না। লাল মাটি কোথায় থেকে আসছে জানতে চাইলে তিনি চুপ থাকেন। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সায়েদুল আরেফিন বলেন, সড়ক নির্মাণে পাহাড়ি লাল মাটি ব্যবহারের জন্য রেভআরসি প্রাইভেট লি: কে এক লক্ষ টাকা জরিমানা এবং একটি স্কেবেটর জব্দ করে মামলা দেয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, রাস্তায় লাল মাটি কোন ভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। তবে রাস্তার কাজে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। কোন ধরণের অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেয়া হবে।