মনিকা চাকমা সম্পর্কে যা বললেন বোন রিতা চাকমা

 মনিকা চাকমা সম্পর্কে যা বললেন বোন রিতা চাকমা

                                                                       :: মোবারক হোসেন ::

মনিকারা ৫বোন। অনন্ত, মিতা, রিতা, অনিকা ও মনিকা চাকমা। পিতা বিন্দু কুার চাকমা। মার নাম রবিমালা চাকমা। মনিকা সবার ছোট। অনন্ত দেবি চাকমা সবার বড়। বলছি ফুটবলের স্বর্ণকন্যা মনিকা চাকমার কথা।  এ প্রতিনিধির কথা হয় মনিকার বড় বোন রিতা চাকমার সাথে। বিস্তারিত আলাপচারিতায় ওঠে আসে মনিকা চাকমার জীবনে ঘট যাওয়া অজানা কিছু তথ্য।

মনিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রিতা চাকমা বলেন, মনিকা চাকমা ক্লাশ ওয়ানে যখন পড়ে তখন মারাত্মক এক বিপদ ঘটে যায়। সামাজিকভাবে কথিত আছে জ্বীনের আচর বা ভূতের আচর। মা-বাবা চিন্তায় পরে যায়। কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। ৩দিন পর্যন্ত মনিকা অজ্ঞান অবস্থায় বিছনায় পরেছিল। আমরা ভেবেছি মনিকা আর বাঁচবে না। সৃষ্টি কর্তার কৃপায় দাদু বৈদ্য নিয়ে আসলেন। মানিকা সুস্থ্য হয়ে ওঠলেন। পড়া-লেখায় মেধাবী ছিল। তার বড় বোন হিসেবে তাকে আমি বেশি পড়াইছি কথনো মারতে হয়নি। নিজে নিজেই পড়তে বসতো। পায়ে হেঁটেই স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম। বঙ্গমাতা ফুটবল খেলায় অংশ নিয়ে মরাচেঙ্গী স্কুল চ্যাম্পিয়ন হলে রাঙ্গামাটির মগাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক বিরসেন চাকমা তাকে নিয়ে যায়। এর আগে শিক্ষক গোপাল দে সেও মনিকাকে ভালো ফুটবল উপহার দিতে তাকে তৈরী করেছেন। মনিকা পোশাক কিংবা খাবার দাবারে আলাদা কোনো কিছু নেই। মাছ মাংশ কম পছন্দ করে। ভর্তা, শাক শব্জি হলে চলে। বাঁশকড়োল তার পছন্দের তালিকায় আছে। ৫বোন একত্রে হয়ে কোথাও বেড়ানোর সুযোগ হয় নি। পরিবারে অভাব ছিল। ছুটির দিনে বাবার সাথে ধান রোপন করতাম। মনিকাও ধান লাগাতে পারে। তবে সে ছোট বলে সবার আদরের তাকে দিয়ে বেশি কষ্টের কাজ করানো হত না। বৈসাবি বা প্রবারণা পূর্ণিমার কোন উৎসব আসলে বাবা সাধ্যমত পোশাক কিনে দিতেন। প্রতি বছর যে দিতে পারতেন এমনটা আবার না। মনিকা বাবার কাছে আবদার করতনে কখনো পূরণ করতেন আবার কখনো পারতেন না। আবার নাই পাইলে যে রাগ করত তাও না। বাবা যখন যা দিতেইন সবাইকেই দিতেন। এমনো অনেকবার ঘটেছে কাউকেই কোনো কিছু দিতে পারেন নি। আমরা কখনো মন খারাব করিনি। আমরা বোনরা বাবার কষ্ট টা বুঝতাম। আমি ইন্টার শেষ করে ডিগ্রি ভর্তি হয়েছিলাম। মনিকা সম্পর্কে আর কি বলবেন? আসলে মনিকা অনেকটা লাজুক কথা কম বলে। ছেলেদের সাথে একেবারেই কথা কম বলে। তবে ঘরে স্বাভাবিক। ফুটবল খেলায় কোনো বাঁধা হয় নি। বাবা একটু কম পছন্দ করতেন। পাড়ার মানুষ অনেক ভালোভাবেই নিয়েছে।

বাবার আরো ৩ভাই রয়েছে। বোন ২জন। মার ১বোন এবং ৪ভাই রয়েছে। বাবা-মা লেখা পড়া করে নি। আসলে মা’র ইচ্ছাতেই সুমন্ত পাড়ায় থাকবো। এখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। ব্রিজ হবে রাস্তা হবে শুনে অনেক ভালো লাগলো। আমাদের এলাকায় এখানো বিদ্যুৎ আসেনি। বিদ্যুৎ আসলে এলাকা আলোকিত হতো। এলাকার মানুষের উপকার হবে। আমরা টিভি দেখতে পারি না। খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হই।

মনিকার উদ্দেশ্যে বলবো যে খেলাটুকু উপহার দিয়েছে, সে ভবিষ্যতে আরো ভালো খেলা উপহার দিবে। আদর্শ এবং নিয়ম-নীতি ও শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে তার চেষ্টা চালিয়ে যাবে এই প্রত্যাশাই করবো।

মনিকা ভালো রান্না করে। আমি তাঁর রান্না খেয়েছি অনেক স্বাদ। আজ মনিকা বাড়িতে আসছে কে রান্না করেছ। এমনটি জানতে চাইল রিতা বলেন, আজকের রান্না করেছে আমার বড় বোন মিতা চাকমা। সেই আমাদের বাড়িতেই থাকে। আামি যতটুকু জানি বাঁশকোড়ল, শবজি ও মরিচ ভর্তা করার কথা। কতজন আজকে অতিথি হবে সেটা এখন বলতে পারবো না। শেষ প্রশ্ন অনেক দিন পর মনিকাকে কাছে পেলেন। রাতটা কিভাবে কাটাবেন। আজকের রাতটা অনেক ভালো কাটবে। শুধু আমাদের এলাকাই না, বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত মুখ আমার বোন মনিকা চকমা। তাকে কাছে পেয়েছি। দুই বোন এক সাথেই থাকবো গল্প করে রাত কাটাবো। উপজেলা ত্রীড়া সংস্থা সংবর্ধনা দিবে শুনে ভালো লাগলো। হ্যা দেশবাসী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলবো যে ভালোবাসা আমার বোন মনিকা চাকমাকে দেখিয়েছে সত্যি আমরা কৃতজ্ঞ। রিতা চকামা আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভাই আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

বি: দ্র: অনেকটা আকষ্মিকভাবে মনিকা চাকমার বড় বোন রিতা চাকমাকে পেয়ে এই সাক্ষাৎকার। সময় স্বল্পতার কারণে লেখায় ভুলত্রæটি কিংবা শব্দচয়নে ভুল থাকতে পারে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ রইল।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post