মাটিরাঙ্গায় করোনা প্রতিরোধে যাদের অবদান স্মরণীয়
নুরনবী অন্তর মাহমুদ, মাটিরাঙ্গা: বাংলাদেশে বিভিন্ন জেলায় করোনা ভাইরাস ছড়ালেও পাহাড় ঘেরা নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যে ভরপুর পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাময়ী রুপসী খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা রয়েছে এখনো করোনামুক্ত। দেশজুড়ে ক্রমেই বৃদ্ধিপাচ্ছে আক্রান্ত উপজেলার নাম। যদিও এই উপজেলায় সরকার ঘোষিত করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন হটস্পট এলাকা থেকে ফিরেছে বিপুল পরিমাণ শ্রমজীবি মানুষ। এরমধ্যে রয়েছে নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পরপরই সরকার দেশের মানুষকে বাচাঁতে নানা নির্দেশনা ও আদেশ জারী করে। বন্ধ ঘোষনা করে গণ-পরিবহন, রেলপথ ও নদীপথে যাত্রী পরিবহন। বন্ধ ঘোষনা করেন বিভিন্ন ধরনের কলকারখানা, বিপনী বিতান ও বিদ্যাপীট সহ দেশের সকল ধরনের গণ-জমায়েত হয় এমন সব প্রতিষ্ঠান। নির্দেশনা দেয়া হয় জনসাধারণকে সামাজিক দুরত্ব বা শারিরীক দুরত্ব বজায় রাখতে। এমনকি প্রতিবেশীর বাড়ীতে এবং অযথা পাড়া মহল্লায়ও ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছে ।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকে যে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও খাদ্যসংকটে পড়ে যায়। সরকারি নির্দেশনা মানতে গিয়ে অনাহারে না খেয়ে মানুষ যাতে কষ্ট না পায় সে জন্যে সরকার নানামুখী খাদ্যসহায়তা কার্যক্রম চালু করেন। আহবান জানায় চরম এই দুর্যোগে রাজনৈতিক ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সামর্থানুযায়ী যার যার জায়গা থেকে সহায়তার হাত বাড়াতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে করোনা প্রতিরোধে দেয়া হয় নানা নির্দেশনা । যা জনগনকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে বলা হয়েছে। এতটুকু অবহেলা করলেই যে কোন মুহুর্তের করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ।
দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়া পর যখন সরকার কর্তৃক করোনা প্রতিরোধে কার্যত লগডাউন ঘোষনা করা হয় বিভিন্ন জেলাকে তখন থেকে শুরু করে দেওয়া হয় মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধী অভিযান। বিশেষ করে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা, জনসাধারণকে সচেতন করা, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা, জনসমাগম এড়াতে হাট বাজার বন্ধ করা, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ সর্বোপরি সরকারি নির্দেশনাগুলো যথাযথ ভাবে প্রয়োগের লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে চলেছেন উপজেলা প্রশাসন।
তাই করোনা প্রভাবে কর্মহীন হওয়া মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তা প্রদানসহ সরকারি যে সব নির্দেশনা, আইন প্রনয়ণ ও জারীকৃত সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে যারা অপরিসীম ভুমিকা রাখছেন এ পর্যন্ত তারা হলেন, উপজেরা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিভীষণ কান্তি দাশ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নিবাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিস ফারজানা আক্তার ববি, পৌর মেয়র মোঃ শামছুল হক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবাষক কর্মকর্তা, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রইচ উদ্দিন, মাটিরাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্য মোঃ সামছুদ্দীন, মাটিরাঙ্গা থানার ওসি তদন্ত মোঃ শাহনুর আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুবাস চাকমা, প্্েরসক্লাব সভাপতি এমএম জাহাঙ্গীর আলমসহ গণমাধ্যম কর্মীরা, মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী মোঃ সোহাগ মজুমদার, মাটিরাঙ্গা উপজেলা যুব রেড ক্রিসেন্ট, মাটিরাঙ্গা পৌর মানবাধিকার কমিশন সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের ডাকে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকান্ড শুরু থেকে এখন অবদি ছিল চোখে পড়ার মতো। মাটিরাঙ্গা জোনের সেনাবাহিনীকেও মাঠে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রচারনা চালাতে ও কর্মহীনদের খাদ্যসহায়তা প্রদান করতে দেখা গেছে।
তবে খাগড়াছড়িতে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সাধারন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ‘মাটিরাঙ্গাকে শেষ পর্যন্ত করোনামুক্ত’ রাখতে প্রশাসন-রাজনীতিক-গনমাধ্যমকর্মী, প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।