• December 9, 2024

লক্ষ্মীছড়ির স্বর্ণ কন্যা মনিকা চাকমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা ও ছড়ার উপর ব্রিজ নির্মাণ হয়নি এখনো, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায় শুভাকাংখিরা

 লক্ষ্মীছড়ির স্বর্ণ কন্যা মনিকা চাকমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা ও ছড়ার উপর ব্রিজ নির্মাণ হয়নি এখনো, প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চায় শুভাকাংখিরা

মোবারক হোসেন: ২০২২সালে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর বাংলাদেশ আলোচিত নারী ফুটবলার মনিকা চাকমার বাড়ি গিয়েছিলেন তৎকালীন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মনিকার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটি হবে। সরকারিভাবে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এমনকি ছড়ার উপর ব্রিজটিও নির্মাণ করাসহ সঞ্চয়পত্র করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবায়ন কি হয়েছে? এমন প্রশ্নের খোঁজে পাহাড়ের আলো। জীতলে সবাই আসে, কয়েকদিন খোঁজ খবর নেয়, প্রতিশ্রæতিও দেন, কিন্তু সেটা বেশিদিন নয়-কয়েকদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর আর কেউ খোঁজ রাখেনা মনিকাদের। এমনি জানা-অজানা কিছু তথ্য ওঠে এসেছে পাহাড়ের আলোর অনুসন্ধানে।

প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ যখন জিতলো: প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুর্গম সুমন্ত পাড়ায় জাতীয় দলের নারী ফুটবলার মনিকা চাকমাকে দেখতে যান খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস। ২২ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা সদর থেকে ৭ কি.মি. দূরে তার নিজবাড়ি সুমন্ত পাড়ায় গিয়ে মনিকা চাকমা ও তার পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নেন এবং তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় মনিকা চাকমা ও পরিবারের জন্য ঘর এবং তার জন্য দুই লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র করে দেবেন বলে ঘোষণা দেন। এছাড়া মনিকার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা এবং ছড়ার উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।

দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা অর্জন: দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মনিকা চাকমারা শিরোপা অর্জন করে গোটা দেশকে যখন অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, এই সাফল্যে পুরো দেশ যখন আনন্দে ভাসছে। তখন মনিকাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো হতাশার ছাপ। পাহাড়ের জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল পাহাড়ের আলোর সঙ্গে দর্শক নন্দিত বেসরকারি টিভি চ্যানেল বাংলাভিশন। কিছু দুর গাড়িতে যাওয়ার পর রাস্তা উচু-নিচু থাকার কারণে পাঁয়ে হেঁটে বর্মাছড়ির মেইন রাস্তা থেকে আনুমানিক ২০গজ যাওয়ার পরেই ছড়া। ছড়াটি পার হওয়ার জন্য কয়েকটি বাঁশ দিয়ে সাঁকো বানানো হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো মনিকার বাবা-মা,চাচাসহ কয়েকজন প্রতিবেশি। ধারনা করেছিলাম শত শত মানুষের উপস্থিত, গ্রামের মানুষ এসে মিষ্টি বিতরণ করবে, কিংবা হই-হল্লুরের দৃশ্য। কিন্তু না। বাস্তবে দেখা গেলো সবার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন হয়ে গেছে আরো ৫ কি: মি: আগে থেকেই। পতাকার বাঁশের আদলে রশি টাঙ্গিয়ে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে আকাশের দিকে রাউডার স্থাপন করতেই মনিকার বাবার মোবাইলে রিং বেজে ওঠলো ওপর প্রান্তে মনিকা। একটি সংবর্ধনায় যাবেন কিছুক্ষণ পরেই। যাওয়ার আগে কথা বলতে চান মা-বাবার সাথে কিন্তু সকাল থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছে মনিকা। কোনো ভাবেই সংযোগ পাচ্ছিল না। রাউডারের সাহার্যে কথা হলো বাবা বিন্দু কুমার চাকমার সাথে। কথার বলার সুযোগ হলো এই প্রতিবেদকের সাথেও ২বার সংযোগ কেটে গেলো। আবারো চেষ্টা কাংখিত সংযোগ পেয়ে জানতে চাইলাম কেমন আছো মনিকা? ভালো, আপনারা তো অনেক কষ্ট করে ছড়া পার হয়ে গেছেন আমাদের বাড়িতে, সেজন্য ধন্যবাদ। জানতে চাইলাম তুমি কি কিছু বলতে চাও মনিকা। মনিকা বললো আপনারা তো স্ব-চোখেই দেখলেন। আমি এতটুকুই বলবো ছড়ার কারণে আমার বাড়িতে মানুষজন যেতে পারে না, বর্ষা হলে তো আরো সমস্যায় পড়ে। রাস্তাটি করা প্রয়োজন, বিদ্যুৎ নেই এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। বের হওয়ার তাড়া তবুও শেষ কথা বললেন এভাবেই- আমি কি পাবো-আর পাবোনা, সেটা বড় কথা নয়- আমি দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলে বিজয় অর্জন করতে পেরেছি দেশের গৌরব অর্জন করতে পেরেছি আমার কাছে সেটাই বড় পাওনা। আমি ক্রীড়াঙ্গনকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যতে চাই, সবার কাছে আশির্বাদ কামনা করেন মনিকা।

মনিকার বাড়িতে নেই আনন্দ উল্লাস: প্রথমবার সাফ জয়ের পর যেভাবে মানুষ আনন্দ উৎসবে মেতে ছিলো এবার সেটা চোখে পড়ে নি। কারণ জেতার পর সবাই আসে, অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয় না। কথা হলো মনিকা চাকমার বাবা বিন্দু কমুরার চাকমার সাথে তিনি জানালেন, কই কিছুই তো হলো না-মেয়ের সাফল্যের অর্জনে ঘরে অনেক ক্রেষ্ট আছে, সার্টিফিকেট আছে, সাথে সান্তনাও আছে। তাই নিয়ে সময় পার করি। সরকার একটি ঘর দিয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে। সেই ঘরের পরিধি একটু বাড়িয়েছি সেখানেও অর্থ খরচ হয়েছে। ব্রিজ, রাস্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, জেলা প্রশাসক বলেছিলেন ব্রিজটি করে দিবে, রাস্তাটিও হবে, বিদ্যুৎ আসবে, মোবাইল নেটওয়ার্ক পাবো। কিন্তু কিছুই হয় নি।

প্রতিশ্রুতি নয়-বাস্তবায়ন দেখতে চায়: লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা বলেন, প্রতিশ্রুতির যদি বাস্তবায়ন না হয়, মানুষ তো হতাশায় ভোগবেন। আমি মনে করি সরকারের পক্ষ হতে যে সকল প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিলো তা বাস্তবায়ন করা হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, উপকৃত হবে মনিকার পরিববার। গ্রামবাসীরা চায় আর প্রতিশ্রুতি নয়- এবার বাস্তবায়ন হবে সেটাই দেখতে চায়। একই প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অংগ্য প্রু মারমা, মনিকার চাচা বিমল কান্তি চাকমা, সুশীল চাকমা, সঞ্জিতা চাকমা, মনিকার বোন অনন্ত দেবি ও অনিকা চাকমা। সবাই অনুভতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন মনিকা আমাদের লক্ষ্মীছড়ির গর্ব। প্রত্যন্ত ও দরিদ্র পরিবার থেকে ওঠে আসা দেশ সেরা এই খেলোয়াড়ের পাশে সবাইকে দাঁড়ানোর আহবান জানান শুভাকাংখি ও প্রতিবেশিরা।

লক্ষ্মীছড়ি ইউএনও যা বললেন : লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভা.প্রা.) ছেনমং রাখাইন মনিকার পরিবারে গিয়ে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যা যা করা দরকার তা করা হবে। মনিকার বাড়ির রাস্তা, ব্রিজ করা সহ এলাকার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করার প্রচেষ্টা আমার থাকবে।

পরিশেষে: ২০২২ সালের পর ২০২৪ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বাংলাদেশের মেয়েদের দল। নেপালকে ২-১ গোলে পরাস্ত করে তারা দ্বিতীয়বার ট্রফি ঘরে তুলল। ২ বছর আগে তারা নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল। এর আগে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের বছাইপর্বে মিয়ানমারকে ১-০ গোলে হারিয়ে এএফসি‘র চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। কঠিন প্রতিপক্ষ মিয়ানমারকে একমাত্র মনিকার গোলেই হারায়। দুর্দান্ত গোল করে মনিকা ফের আলোচনায় চলে আসেন। ছয় নম্বর জার্সি, সে খেলে মধ্যমাঠে। অনূর্ধ্ব-১৯ নারী আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে গোল করে পরিচিতি পান। ফিফা তার এ গোলকে ‘জাদুকরী গোল’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। নাম প্রচার পায় “ম্যাজিকেল মনিকা”।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post