লাখো ভক্তের আমিন ধ্বনিতে সাঙ্গ হলো মাঘের মেলা
এম এস আকাশ, ফটিকছড়ি: সাঙ্গ হলো মাঘের মেলা-দশের খেলা। লাখো-লাখো আশেক, ভক্ত, অনুরক্তের আমিন-আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হলো মাইজভান্ডার দরবার শরীফ। গতকাল মঙ্গলবার ছিল মাইজভান্ডার দরবার শরীফের আধ্যাতিœক সরাপতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল¬াহ মাইজভান্ডারী (ক.) ১১২তম বার্ষিক ওরশ শরীফ। তরিকতের প্রচার-প্রসার, আত্মসুদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানব কল্যাণে মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্ঠি অর্জন এবং দেশ-জাতি, মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত করেন রাত ১২.০১ মিনিটে গাউছিয়া আহমদিয়া মনজিলের শাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), দরবারে-গাউছিয়া আহমদীয়া মনজিলে শাজ্জাদানশীন আলহাজ্ব ডাঃ সৈয়দ দিদারুল হক মাউজভান্ডারী (ম.জি.আ), গাউছিয়া হক মনজিল শাহজাদা সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), বিশ্ব মোমেন মনজিলে হয়রত মাওলানা সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)। মুনাজাত শেষে তবারুক বিতরণের পর শুরু হয় মাইজভান্ডারী সেমা মাহফিল। এতে মরমী কন্ঠশিল্পী আহমদ নুর আমিরী, নাসির কাউয়াল, শিমুল শীল সহ বরেন্য শিল্পীরা মাইজভান্ডারী গান পরিবেশন করেন- ”মাইজভান্ডারে উঠেছে ঐ তৌহিদের নিশাণা-ঘুমাইঘোনা মায়া ঘুমে আখেরী জমানা/ কেন চিনলি নারে মন-গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী মাওলানা কেমন…./ চলরে মন ত্বরায় যায় বিলম্বের আর সময় নাই, গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারী স্কুল খুলেছে, এ স্কুলের এমনি ধারা বিচার নাই জোয়ান বুড়া, সিনায় সিনায় লেখাপড়া শিক্ষা দিতেছে……./দেখে যারে মাইজভাণ্ডারে আজব রঙ্গের ফুল, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে পড়ে আশেক অলি কুল………” কওয়ালী, মাইজভান্ডারী মরমী সঙ্গীত লাখো-লাখো ভক্তের নজর কাড়ে ।
মাইজভান্ডারী ঐশী প্রেমবাদই বিশ্ব শান্তি নিয়ামক -সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)
গাউছিয়া আহমদীয়া মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীন হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) বলেছেন, বিশ্ববাসীর ক্রান্তিলগ্নে পাপে নিমজ্জিত মানব সমাজকে উদ্ধারকল্পে মুক্তির দিশা দিতে, অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে এবং ধর্মীয় স্বরূপ পুনঃ প্রতিষ্ঠার জন্যে মাওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) গাউসুল আজম মাইজভান্ডারী রূপে আবির্ভূত হন। তিনি যুগের প্রয়োজন অনুসারে শরীয়তী বিধি নিষেধের সাথে সমন্বয় সাধনপূর্বক নৈতিকতার উপর কার্যকরী প্রভাব বিস্তারকারী ধর্মসাম্যের সমর্থক বেলায়তে মোতলাকায়ে আহমদী বা “অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ” প্রবর্তন করেন। এই ঐশী প্রেমবাদ ধর্মজগতের ও সমাজজীবনের অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটান, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই বিশ্ব শান্তির মুল নিয়ামক শক্তি। এ কারণে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ পরিণত হয়ে উঠে সকল ধর্মেও মানুষের মিলন কেন্দ্র হিসেবে। শতাব্দীকাল থেকে ১০ই মাঘ খোদা ও অলী প্রেমিকদের মিলন মেলা। তিনি গতকাল মঙ্গলবার ফটিকছড়ির মাইভান্ডারে সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) ১১২তম ওরশে আখেরী মুনাজাত পূর্বে লাখো ভক্ত-জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্যে রাখছিলেন। এসময় সাবেক বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জনাব আলহাজ্ব জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নায়েব সাজ্জাদানশীন জনাব আলহাজ্ব সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভা-ারী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব সৈয়দুল হক খান, ইন্টারপোর্ট শিপিং লিমিটেড এর পরিচালক জনাব ক্যাপ্টেন (অব:) আলহাজ্ব সৈয়দ সোহেল হাসনাত, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স লিমিটেড এর পরিচালক জনাব আলহাজ্ব জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট প্রকৌশলী জনাব সৈয়দ ফজলুল কাদের, আনজুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী শাহ এমদাদীয়া খেদমত কমিটির মহাসচিব সৈয়দ আবু তালেব, চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশন কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন, অধ্যাপক মেজবাহ উদ্দিন শৈবাল, মাষ্টার মো: আলমগীর, কামাল উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিতত ছিলেন।
প্রেমের প্রদীপ প্রজ্বলন করে মানব মুক্তির পথ দেখিয়েছেন গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (ক.) -ডা: সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)
দরবারে-গাউছিয়া আহমদীয়া মঞ্জিলের শাজ্জাদানশীন আলহাজ্ব শাহসূফী ডা: সৈয়দ দিদারুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) বলেছেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন মানব হৃদয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (দ.) প্রেমের প্রদীপ প্রজ্বলনপূর্বক পথভ্রষ্ট ও দিকভ্রান্ত মানবজাতিকে নানান কৌশল (তরিকা) সহকারে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথে আহ্বান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় উনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ‘মাইজভাণ্ডার’ গ্রামে প্রকাশ ঘটে সাম্যবাদী এক মহান সুফি সাধকের। তিনি বেলায়তে মোতলাকা বা উন্মুক্ত বেলায়তের প্রবর্তক, খাতেমুল অলদ, গাউসুল আযম, হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (কঃ)। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ-কর্ম-মানব-দানব ও জীবের প্রয়োজনীয়তার সাথে সমন্বয় করে প্রতবর্তন করেছেন মাইজভান্ডারী তরিকা। মাইজভান্ডার দরবার শরীফ অলিদের আঁতুরঘর। গাউসুল আজম মাইজভান্ডারীর (ক.) নজরে অসংখ্য অলি পৃথিবীতে বিরাজ করছে। অলিদের সান্নিধ্যে গেলে মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পায় এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে পরিণত হয়। আজ মহান উন্মুক্ত বেলায়তের অধিকারীর ওরশের দিনে আমরা তার বেলায়তি শক্তির আলোর প্রত্যাশী। তিনি মঙ্গলবার মাইজভান্ডারী দরবার শরীফে শাহসূফী সৈয়দ আহমদ উল¬াহ মাইজভান্ডারী (ক.) ১১২তম প্রধান ওরশে সমাপনি বক্তব্য রাখছিলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে সাজ্জাদানশীন আলহাজ্ব শাহসূফী সৈয়দ সহিদুল হক মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ), শাহজাদা সৈয়দ আহমদ হোসাইন শাহরিয়ার, শাহজাদা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল, শাহজাদা সৈয়দ হোসাইন রাইফ নুরুল ইসলাম রুবাব, শাহজাদা সৈয়দ আহমদ মাহিম হোসাইন, শাহজাদা সৈয়দ আহমদ নাভিদ হাসান, শাহজাদা সৈয়দ হোসাইন সাইফ নিহাদুল ইসলাম, মাওলানা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, এস এম জাকারিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জানে আলম বাবুল, নুরুল আলম চৌধুরী, কাজী জাহাংগীর হাফিজ, সৈয়দ মাহমুদুল হক, জাহেদ হোসাইন কাউছার, আকরাম হোসেন সবুজ, মোহাম্মদ হাসান, স্বপন প্রমুখ।
মজলুম অধিকারহারা বিপন্ন মানবতার ঠিকানা মাইজভান্ডার শরীফ -সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ)
মাইজভা-ার গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন সৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভান্ডারী (ম.জি.আ) বলেছেন, মজলুম অধিকারহারা বিপন্ন মানবতার ঠিকানা মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ। এখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ ও দূরত্বকে প্রশ্রয় দেয় না। সকল মানুষ মর্যাদা ও অধিকারের দিক দিয়ে সমান। কারো ওপর কারো কোনো প্রভুত্ব-শ্রেষ্ঠত্ব নেইÑ এটাই হচ্ছে মাইজভাণ্ডারী দর্শনের মূল সারবস্তু। তাই মজলুম অধিকারহারা বিপন্ন মানুষ মাইজভান্ডার দরবার শরীফকেই ঠিকানা হিসেবে খুজে নেয়। বিশ্ব শান্তি, মানবতা ও সভ্যতার বিকাশের গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী শাহসুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) এর শিক্ষা এবং জীবনাদর্শ আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে অনুসরণ-অনুকরণ আবশ্যিক। তিনি মঙ্গলবার রাতে ফটিকছড়ির মাইজভান্ডার দরবার শরীফে শাহছুফি সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক:) ১১২তম বার্ষিক ওরশ উপলক্ষ্যে আগত ভক্তগণের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। শাহজাদা সৈয়দ নরুল বশর মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাইজভান্ডারী আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, মাওলানা নিজাম উদ্দিন ভান্ডারী, মাওলানা হাসেম ভান্ডারী প্রমুখ।