ছড়া কচু চাষ করে লাভবান সিন্দুকছড়ির সোনাধন চাকমা
মোবারক হোসেন: ছড়া কচু। পাহাড়ে এর আর এক নাম গুড়া কচু। দেশের অনেক জায়গায় এই কচুর নাম মুখী কচু। তবে কোথাও কোথাও কুড়ি কচু, দুলি কচু ও বন্নি কচু ইত্যাদি নামে ও পরিচিত। এটি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এবং ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ আছে। এই ছড়া কচু বা মুখীকচুর হজম ক্ষমতা বেশি, শিশু খাদ ̈হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এই কচু। মুখীকচু ক্ষারজাতীয় খাদ্য বিধায় অম্ল শুলেও এটি উপকারী। এটি সবজির অভাব পূরণে সাহায্য করে। পুরো খাগড়াছড়ি জেলায় এই ছড়া কচুর চাষ হচ্ছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম,ফেনী ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানী করা হচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত এই ছড়া কচু। পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া ছড়াকচু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এমনটাই জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
এই ছড়া কচু চাষ করে লাভবান হয়েছেন খাগড়াছড়ির সোনাধন চাকমা। সে গুইমারার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের গৈছড়ির এলাকার কৃষক। ৪/৫বছর ধরে এই কচু চাষ করেন তিনি। এ বছর ৫ কানী জায়গায় পাহাড়ের ঢালুতে চাষ করছেন। গত বছর সাড়ে ৩কানি জমিতে এ চাষ করছেন বলে জানান। চলতি বছর ৪০মণ বীজ রোপন করেছেন। এতে খরচ হয়েছে পৌনে ২লাখ টাকা। ফলন ভালো হয়েছে বলে আশাবাদী। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হতে তিনি ঋণ নিয়েছেন বলে জানান। পুজিঁ উঠিয়ে দেড় থেকে ২লাখ টাকা লাভের স্বপ্ন দেখছেন এই কৃষক। একই এলাকার উদ্দিপন চাকমা জানালেন ৩০হাজার টাকা খরচ করে ৫মণ কুচ বীজ রোপন করেছেন। তিনি প্রতিবছরই এই গুড়া কচু চাষ করে বেশ লাভবান।
গত এক দশকে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার হাত ধরে বিকশিত হয়েছে কচুমুখী বা ছড়া কচু। তারই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি জেলায় অনাবাদি পাহাড়ি পতিত জমিতে কচু চাষ করছেন বহু কৃষক।
লক্ষ্মীছড়ি কৃষি কর্মকর্তা (ভা.প্রা.) মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন ভূইয়া বলেন, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় প্রায় ৪৮ হেক্টর জায়গায় এ কচু চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি হেক্টরে ১৯ থেকে ২০মে: টন। এর বাইরেও অনেক কৃষকরা কচু চাষ করছেন। পারিবারিক পুষ্টিবাগান প্রকল্পের আওতায় আমাদের ৩টি প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। ফলন আসতে প্রায় ৬-৭ মাস সময় লাগে।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষ সম্প্রসরাণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো: মর্ত্তুজ আলী জানান, পুরো জেলায় ৮৫৮ হেক্টর জায়গায় এ কচু চাষ করা হচ্ছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯হাজার ২৭২ মে: টন। সারাদিন রোদ পায় এমন স্থানে মুখীকচু রোপন করলে ভালো হয়। দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি মুখীকচু চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। তবে জমিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব পদার্থ থাকা উচিত। এ ফসলের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একবার চাষ করলে জমির উর্বরতা কমে যায় এটা সঠিক, তবে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করে পরের বছর কচু চাষ উপযোগী করে তুলতে হবে। পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে ফাল্গুন মাস (ফেব্রুয়ারি) বীজ বপনের সবচেয়ে ভাল সময়। কিন্তু যদি সে সুযোগ না থাকে তাহলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং প্রথম বৃষ্টিপাতের পরপরই বীজ লাগিয়ে ফেলতে হবে। তবে বৈশাখের পর (এপ্রিলের পর) বীজ লাগালে ফলন খুব একটা ভালো হবে না। এই কচু শিশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়াও তরকারি,ভর্তা, ডাল হিসেবে রান্না হয়ে থাকে।