কোটা পুনর্বহালের দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র উদ্যোগে সংহতি সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরীতে সংরক্ষিত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও মহানগর শাখা। ১২ অক্টোবর শুক্রবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রামের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে গিয়ে নন্দনকানন হয়ে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী মোড়ে এসে সংহতি সমাবেশ শুরু হয়। ছাত্রনেতা অমিত চাকমার সঞ্চালনায় পিসিপি মহানগর শাখার সভাপতি হ্লাচিংমং মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-তথ্য প্রচার সম্পাদক ত্রিরতœ চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নগর সিনিয়র সহ-সভাপতি উচিংশৈ চাক (শুভ) ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য রেশমী মারমা। এছাড়া সংহতি সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজ এর সংগঠক লাব্রেচাই মারমা, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের সংগঠক সামিউল আলম রিচি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সুইটি দেওয়ান।

বক্তারা বলেন, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক, বাস্তবতাবিবর্জিত ও সরকারের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’ পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, ‘দেশের পশ্চাদপদ সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে শিক্ষাদীক্ষা ও চাকুরীসহ উন্নয়ন সূচকে পেছনে রেখে আগমী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে রুপান্তরিত করার সরকারের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বরং দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক করতে হলে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে সবদিক দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে এবং এজন্য দরকার সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা।’

কোটা সংস্কার কমিটির সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও কোটা সংস্কার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও অনেক অগ্রসর হয়েছে। অথচ কোটা সংস্কার কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদনে গত ১০ বছরের বিসিএসের তথ্য তুলে ধরেন, যেখানে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর’ কোটা ৫% এর জায়গায় পূরণ হয়েছে মাত্র ১.১৭%। যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে তিনি (মন্ত্রীপরিষদ সচিব) বলেন যে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং তাদের জন্য আর কোটার দরকার নেই? তার দেয়া পরিসংখ্যানই তার ‘অগ্রসর হওয়ার’ দাবিকে নাকচ করে দেয়। বক্তারা আরো বলেন, পাহাড় ও সমতলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ব্যতিরেকে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে এবং এ সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানের ২৩ক, ১৯, ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।’

সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থার কল্যাণে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিগুলো স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে স্বীকার করে বক্তারা বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের এই অগ্রসরতা তাদেরকে দেশের অন্যান্য অগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে সমকক্ষ অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যাতে এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নেয়ার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়। বরং দেখা যায় কোন কোন জাতিগোষ্ঠী শিক্ষা, চাকুরী ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে, কোন কোন জাতিগোষ্ঠী বলা যায় কেবল ইদানিং আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগী ও আগ্রহী হয়েছে। তাই সরকারী চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হলে তাদের এই অগ্রগতি দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ হবে এবং এতে দেশের জনগণের একটি বড় অংশ চিরকাল পেছনে পড়ে থাকবে।’ বক্তারা অবিলম্বে পাহাড় ও সমতলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য চাকুরি ক্ষেত্রে সংরক্ষিত কোটা পুনর্বহালের জোর দাবী জানান।

Read Previous

পার্বত্যাবাসীর সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করছে বর্তমান সরকার- জুয়েল চাকমা

Read Next

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রাজিব রায়’র মৃত্যুতে ওয়াদুদ ভূইয়া’র শোক প্রকাশ