গ্রেডেশন তালিকাকে চ্যালেঞ্জ করা রীটে সংক্ষুব্ধ শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বা রুলকে উপেক্ষা করে প্রাথমিক গণ-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৮.০০.০০০০.০০৮.১২.০৪১.১৮-৭২১,তারিখ-০৬-০৯-২০১৮ খ্রি. এর আলোকে খাগড়াছড়ি জেলার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াছমিন স্বাক্ষরিত স্মারক নং-জেপ্রাশিঅ/খাগড়া/৯৪৯, তারিখ ০৯-০৯-২০১৮ খ্রি. প্রধান শিক্ষক পদে সহকারি শিক্ষদের পদোন্নতি/চলতি দায়িত্ব পদায়নে অফিস আদেশ প্রদান করা হয়।

গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে প্রনয়ণ করা হয়নি মর্মে অভিযোগ তোলেন সংক্ষুব্ধ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকগণ। সংক্ষুব্ধ সহকারি শিক্ষকগণ ০১-০৪-২০১৮ খ্রি. তারিখে প্রনয়ণকৃত গ্রেডেশন তালিকা চ্যালেঞ্জ করে গত ০৮/০৫/২০১৮ খ্রি. তারিখ উচ্চ আদালতে ৬২০৬/২০১৮ নং রীট পিটিশন দায়ের করেন । সেই রীট পিটিশন উচ্চ আদালত আমলে নিয়ে গত ২৭/১১/২০১৮ খ্রি. তারিখে শুনানী শেষে রীটকারীদের জন্য ৪০টি প্রধান শিক্ষক পদ সংরক্ষন করে তা আদেশ প্রাপ্তির ০১ (এক) মাসের মধ্যে কার্যকর করার আদেশ দেন।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, বিগত ১৩ আগষ্ট ২০১৫ খ্রি. তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্বারক নং- প্রাশিঅ/৯টি/৪ বিদ্যা-ঢাকা/২০০৩/১৩৬/৬৪(৪৮৭),তারিখ-১৪/০৫/২০১৪ খ্রি. মোতাবেক রীট পিটিশনকারী উন্নয়ন খাতভূক্ত সহকারি শিক্ষকগনের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ থেকে গণনা পূর্বক গ্রেডেশন তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষা করা হয়েছে।

০১/০৪/২০১৮ তারিখে তৈরিকৃত গ্রেডেশন তালিকা দীঘিনালা উপজেলার সহকারি প্রাথমিক শিক্ষক মো. মারেফাতুল ইসলাম ভূঁইয়া,যাহার চাকুরিতে যোগদানের ১ম তারিখ-০৭/০৪/২০০৩ খ্রি., হিরোহিত দেওয়ান, যাহার ১ম যোগদানের তারিখ – ০৭/০৪/২০০৩ খ্রি. এদের মধ্যে আরো অন্তত ৯ জন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। অথচ জ্যেষ্ঠতার যথাযথ তালিকা প্রনয়ণ ছাড়াই প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব পেয়েছেন যারা তাদের মধ্যে দীঘিনালা উপজেলার সহকারি শিক্ষিকা নমিতা চাকমা, যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-৩০/০৬/২০০৩ খ্রি. ও ভূমিকা ত্রিপুরা,যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ ৩০/০৬/২০০৩ খ্রি., এদের মধ্যে আরো অন্তত ১৩ জন শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতা লংঘনের তালিকা নিয়ে সৃষ্ঠ জটিলতা নিরসন ব্যতিরেকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আবার মাটিরাঙ্গা উপজেলায়ও গ্রেডেশন তালিকা যথাযথভাবে প্রনয়ণ না করায় চলতি দায়িত্ব পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের মধ্যে মো. হারুনুর রশিদ,চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-০৭-০৪-২০০৩ খ্রি. ও মো. সহিদুল হক চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-০৮-০৪-২০০৩ খ্রি.। এদের মতো আরো অন্তত ১৪ জন শিক্ষক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আর জ্যেষ্ঠতার লংঙ্গন করে যাদের চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তাদের মধ্যে মো. মাসুদ পারভেজ যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-০১-০৭-২০০৩ খ্রি. ও কাজী মো. সাইফুল ইসলাম যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-০১-০৭-২০০৩খ্রি. ব্যতিরেকে আরো অন্তত ১৪ জন সহকারি শিক্ষককে অবৈধভাবে জ্যেষ্ঠতা দেখিয়ে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ক্যজসাই মারমা,যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ ০৭/০৪/২০০৩ খ্রি. ও পহেলিকা চাকমা,যাহার চাকুরিতে ১ম যোগদানের তারিখ-০৭-০৪-২০০৩ খ্রি. ছাড়াও আরো অন্তত ৮ জন জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রনয়ণ না হওয়ায় তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। চন্দ্রিকা চাকমা যাহার ১ম যোগদানের তারিখ-৩০-০৬-২০০৩ খ্রি.এর মতো আরো অন্তত ২ জন সহকারি শিক্ষক জ্যেষ্ঠতার লঙ্গন করে চলতি দায়িত্ব পেয়েছেন। অনুরুপ পানছড়ি, রামগড় উপজেলায়ও ০৭-০৪-২০০৩ খ্রি. থেকে ১১-০৪-২০০৩ খ্রি. পর্যন্ত নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের বঞ্চিত করে ৩০-০৬-২০০৩ খ্রি. থেকে ০২-০৭-২০০৩ খ্রি. তারিখে নিয়োগকৃত সহকারি শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, জ্যেষ্ঠতার তালিকা ০৪-১২-২০১৭ খ্রি.তারিখ পর্যন্ত ০৭-০৪-২০০৩ খ্রি. থেকে ১১-০৪-২০০৩ খ্রি. তারিখে নিয়োগ প্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের জেষ্ঠ্যতা প্রদানের মাধ্যমে গ্রেডেশন তালিকা প্রনয়ণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আরেকটি গ্রেডেশন তালিকা প্রনয়ণ করা হয় ০১-০৪-২০১৮ খ্রি. তারিখে। এতে দেখা যায় যে, জেষ্ঠ্যতার তালিকা থেকে ০৭-০৪-২০০৩ খ্রি. থেকে ১১-০৪-২০০৩ খ্রি. তারিখ নিয়োগ প্রাপ্তরা প্রাপ্য জ্যেষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত হন।

এ বিষয়ে বঞ্চিত সহকারি শিক্ষকদের পক্ষে রীট কারী মো: মারেফাতুল ইসলাম ভূঁইয়া উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রাথমিক ও গণ-শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং অধিদপ্তর রায় অনুযায়ী বঞ্চিত শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রদান করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষ্ণলাল দেবনাথ বলেন, নিয়ম মেনেই জেষ্ঠ্যতার তালিকা প্রনয়ণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে এডিপিইও মো: আ: হাই জানান, ২০১১ সালের নন ক্যাডার বিধি-২ শাখা অনুযায়ী করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা উপজেলা থেকে প্রনয়ন করে দেয়া হয়, আমরা শুধুমাত্র অগ্রগামী করি। মাটিরাঙ্গা উপজেলায় জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রনয়নে তার সম্পৃক্তার ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে যেভাবে বলা হয়েছে আমি সেভাবে তালিকা তৈরি করেছি। কে বলেছে তালিকা তৈরি করতে তার সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।

চলতি দায়িত্ব প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, এটা মন্ত্রনালয়ের আদেশ, আপনি মন্ত্রনালয়কে জিজ্ঞাসা করেন, মন্ত্রনালয় যেভাবে বলেছে আমরা সেভাবে দিয়েছি। সিনিয়রটি তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান এবং সব জানেন মন্তব্য করে বলেন, না জেনে কি আমরা কাজ করছি? এতো কাঁচা কাজ আমরা করি না।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post