ঢাকা সিটি নির্বাচন: নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

এ এইচ এম ফারুক, ঢাকা অফিস: শুক্রবার দিবাগত রাত পোহালে ভোট। শনিবার অনুষ্ঠিত এ ভোটকে ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিবি। পুলিশ-র‌্যাবের ৪০ হাজার সদস্যের সঙে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন ৬৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য। সেই সঙ্গে বেসামরিক পোশাকে কাজ করবে একাধিক বাহিনীর সদস্যও।

ভোট গ্রহণের আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রকার প্রচার-গণসংযোগের শেষ দিন। ওয়ার্ড-পাড়া মহলায় কাউন্সিলরপ্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচারের শেষ শোডাউন করেছেন। ফলে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলিতেও ছড়িয়ে পড়ে যানজট। নাকাল নগরবাসী ঘণ্টারপর ঘণ্টা আটকে থেকে পাহে হেটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

নির্বাচনকে ঘিরে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে নানা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। উৎকন্ঠিত নগরবাসীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে আশ^স্থ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচনে সব ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলিটফোর্স র‌্যাব প্রধান বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, ডগ স্কোয়াড, বোম ডিসপোজাল ইউনিট, হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজন হলে চলাফেরা করা নাগরিকদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। গুজব যেন কেউ ছড়াতে না পারে, সেজন্য সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের আগের দিন ঢাকা শহর শুধু ভোটারদের জন্যই। যারা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে সহযোগিতা করতে গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন, তাদের আর ঢাকায় থাকার প্রয়োজন নেই।

র‌্যাব প্রধান এই দুদিন ঢাকাবাসীকে পরিচয়পত্র বহনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, আমরা চাই, জরুরি বিষয় ছাড়া ঢাকাবাসিই শুধু ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবেন। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে অবাঞ্ছিত কেউ যেন না থাকে। নিয়ম বহির্ভূত কাজ যেই করবে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া নির্বাচনী সংঘাত পূর্বের কিছু নির্বাচনের তুলনায় সামান্য উল্লেখ করে বেনজীর বলেন, তবে আমরা এসব বিষয়ে নজরদারির মধ্যে রেখেছি। তিনি বলেন, আমরা চাই একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে। সেজন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, তা করা হচ্ছে।

অপরদিকে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বহিরাগতদের উপর নজরদারি রাখলেও গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ছড়াতে চান না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ভোটের দুদিন আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একুশে বই মেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে গেলে নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শফিকুল কে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বাহির থেকেও যে মানুষ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং নানাবিধ কাজের জন্য এসেছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা এসব লোকজন সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং কোন এলাকা থেকে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কোনো অভিযোগ আছে কি না, কোনো মামলা আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে জানিয়ে কমিশনার বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে সে সমস্ত জায়গায় অভিযান করব। কারণ গণ কোনো অভিযান করে মানুষের মনে ভীতি ছড়াতে চাই না। গত বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার দুই সিটির ভোটারদের এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা দিতে মাঠে ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য নেমেছে। দুই সিটির একাধিক কেন্দ্র ও ওয়ার্ডে বিজিবির গাড়ি টহলদিতেও দেখা গেছে। প্রতি প্লাটুনে ৩৩ থেকে ৩৫ জন সদস্য রয়েছে। বিজিবি ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানাগেছে, ভোটের আগে ও পরে মোট চারদিন দায়িত্ব পালন করবে বিজিবি। এছাড়াও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য। তারা নির্বাচন উপলক্ষে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন বলে ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মাঠে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিজিবির ৬৫ প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, প্রতি দুইটি সাধারণ ওয়ার্ডে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। বিজিবির প্রতিটি টিমের সঙ্গে মোতায়েনকালীন সময়ে অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি তারিখ থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৫৪ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭৬ জনসহ ১৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্বে থাকবেন।

বৃহস্পতিবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে নির্বাচনী এলাকায় মিছিল-শোডাউন নিয়ে নামেন কাউন্সিলরপ্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকরা। তারা রাজধানীর প্রধানসড়কসহ অলিগলিতে মিছিল শোডাউন করেন। এসময় সড়কে রাজধানীর সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের ঘণ্টারপর ঘণ্টা আটকে থেকে পরে পাঁয়ে হেটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post