দীঘিনালায় সম্প্রীতি মেলার নামে অশ্লীল জুয়া-হাউজীর আসর
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা সদরে সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর আইনী ঝামেলাপূর্ন মাঠে সম্প্রীতি মেলা’র নামে ১১দিন ধরেই চলছে জুয়া-হাউজী এবং নানা ধরনের অশ্লীল-অপসংস্কৃতির কীতিকলাপ। চলমান উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ছাড়াও আশেপাশে বেশ কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক)-এ তোলা হলেও টনক নড়েনি কারোই। বরং স্থানীয় প্রশাসন ‘দেখি নাই, শুনি নাই, জানি নাই’ এমন ভান ধরে মেলা’র চিহ্নিত আয়োজকদের সাথে রাতের আঁধারে দহরম-মহরম করেই চলছিলেন।
এলাকাবাসীর চাপের মুখে অনেকটা অনেকটা বাধ্য হয়েই বৈশাখী মেলা’র নামে চলমান অপকর্ম বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা মো: জাহাঙ্গীর হোসেন। গত ১৭ এপ্রিল মেলার নামে অশ্লীলতা ও জুয়ার বন্ধের দাবি জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। কবাখালী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের নাম সম্বলিত পত্রে চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, গত ৯ এপ্রিল থেকে কবাখালী ইউনিয়নের অন্তর্গত সওজ’র মাঠে বৈসাবি ও বৈশাখী মেলার নামে দৈনিক তামান্না র্যাফেল ড্র, অশ্লীল নৃত্য ও হাউজি’র নামে অবাধে জুয়া এবং অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। এতে করে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা ও শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় এক প্রান্তে র্যাফেল ড্র’র বুথ, অন্য প্রান্তে হাউজি ঘরসহ বেশ কিছু বন্ধ ঘর এবং স্টল দেখা যায়। মেলা প্রাঙ্গণে দর্শণার্থীর উপস্থিতিও কম। কিন্তু সে চিত্র রাতের বেলায় পুরো ভিন্ন। হাউজি, র্যাফেল ড্র, জাদু ও অশ্লীল নাচগান দেখতে একশ্রেণীর দর্শক উপস্থিতি চোখে পড়ে। এছাড়া সকাল থেকে দীঘিনালা সহ পুরো জেলায় র্যাফেল ড্র বিক্রির মাইকবাহী গাড়ি চষে বেড়াচ্ছে। এসব কিছুর পরও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজ।
কবাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জুয়া ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কথা বলার সাহস করছে না। উপজেলা পরিষদ ও থানা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে বৈশাখী মেলার নামে অনুমতি ছাড়া সওজ’র জায়গায় জুয়া ও অশ্লীল কার্যকলাপ চললেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীরা রাতের পর রাত মেলায় কাটিয়ে দিচ্ছে। দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন সারাদিনের উপার্জিত অর্থ রাতের বেলায় মেলা প্রাঙ্গণে হারিয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরছেন। প্রতিনিয়ত সামাজিক ও পারিবারিক কলহ বাড়ছে। এটি বন্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান (প্রকাশ মুজিব মেম্বার)-এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অনুমতি আছে কিনা সেটি তিনিও জানেন না। দীপ্ত টিভি’র প্রতিনিধি নাজিম উদ্দিন নামের এক সাংবাদিক প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে মেলার সবকিছু দেখাশুনা করছেন। এই কথা বলেই তিনি ফোনটি আয়োজক কমিটির আরেক সদস্য ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলামকে ধরিয়ে দেন। তিনিও একই সুরে সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন সব জানেন বলে ফোন রেখে দেন।
সাংবাদিক নাজিম উদ্দিনের মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গার উপর মেলা চলছে বলে শুনেছি। মেলার অনুমতি কে দিয়েছেন সেটি আমার জানা নেই। যেহেতু জায়গাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে সেহেতু এই মাঠ কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়ার কথা নয়। কিভাবে মেলা চলছে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।
জেলার অন্যতম নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক), খাগড়াছড়ি বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক এবং খাগড়ছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলন-এর পক্ষ থেকেও জেলাজুড়ে কারণে-অকারণে কিছু চিহ্নিত ব্যক্তির মেলার নামে বাণিজ্যিক অপতৎপরতা, অপসংস্কৃতি এবং স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের সামাজিক মূল্যবোধ্য পরিপন্থী কর্মকান্ডের বিষয়ে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।
এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে মেলা-লটারী-হাউজী এবং নানামুখী অবৈধ কর্মকান্ডের নামে সাধারণ মানুষ থেকে হাতিয়ে নেয়া অর্থ উদ্ধার এবং রাজস্ব ও কর ফাঁকির মামলা দায়েরের প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব রয়েছে বলে মত প্রকাশ করা হয়। খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো: শহিদুল ইসলাম জানান, বৈসাবি ও বৈশাখী মেলা করার জন্য কিছু শর্তসাক্ষেপে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে শর্ত ভঙ্গ করে র্যাফেল ড্র, হাউজি ও অশ্লীল কিছু করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।