প্রথম স্ত্রীর মামলায় কারাগারে চট্টগ্রাম ইপিজেডের প্রতারক হুজুরের জামিন নামঞ্জুর
চট্টগ্রাম অফিস: চট্টগ্রামের ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের পকেট গেইটের শিহাব মঞ্জিল থেকে গ্রেপ্তারকৃত ভন্ড হুজুরকে আজও জামিন দেয়নি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ইপিজেড থানা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত প্রতারক ভন্ড হুজুরের নাম মো. আবুল বাশার (৩৫)। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের পকেট গেইটস্থ এস. আলম কন্ট্রাক্টর জামে মসজিদের ইমাম। তিনি তার প্রথম স্ত্রী সানোয়ারা শাহিদা (৩০) কে নিয়ে শিহাব মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামী মো. আবুল বাশারের প্রথম স্ত্রী সানোয়ারা শাহিদা সিএমপি’র ইপিজেড থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে গত ০১.১০.২০১৯ইং তারিখ রাতেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় (সূত্র: ইপিজেড থানার মামলা নং-০৩), মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকায়, তার পিতার নাম- মৃত: আবিদ আলী। তিনি দীর্ঘদিন যাবত চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদের ইমাম পরিচয় দিয়ে নারীদের সাথে সর্ম্পক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে অ-বিবাহিত পরিচয় দিয়ে একাধিক নারীর সাথে বিবাহের নামে প্রতারণা, ভন্ডামি ও অর্থ আত্মসাত করে আসছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর নাম সানোয়ারা শাহিদা। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি বিগত ০৩.০১.২০০৭ইং তারিখে সামাজিক ভাবে সানোয়ারা শাহিদাকে বিবাহ করেন এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে দুইজন পূত্র সন্তানের জন্ম হয়। বিবাহের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন মামলার বাদী প্রথম স্ত্রী সানোয়ারা শাহিদা। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি বাদীর পিতার বাড়ি থেকে বিভিন্ন অজুহাতে তিন লক্ষ টাকা যৌতুক আদায় করেন।
পরবর্তীতে তার চাকুরির জন্য আরো দুই লক্ষ টাকা যৌতুক আনার জন্য স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করেন। স্বামীকে কাঙ্খিত যৌতুকের টাকা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করায় সর্বশেষ ১৯.০৭.২০১৯ইং তারিখে নির্মম শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পরনের এক কাপরে স্বামী তার বাসা হতে স্ত্রীকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। যৌতুক লোভী স্বামী কর্তৃক স্ত্রী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন মর্মে এজাহার সূত্রে জানা যায়। মামলার বাদী সানোয়ারা শাহিদা এ প্রতিবেদককে জানান, আমার স্বামী মাওলানা নামধারী একজন চরিত্রহীন নারী লোভী লম্পট। সে আমাাকে ছাড়াও আমার অজান্তে মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকার জাহানারা বেগম মজুমদার ও পতেঙ্গা থানার বিজয়নগর এলাকায় সালেহা বেগম নামক মহিলাকে বিবাহ করেছে, তাছাড়াও বিভিন্ন এলাকার একাধিক নারীর সাথে পরকিয়া করে আসছে, আমার স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চেক করলে বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাবে। আমি বিজ্ঞ আদালতের নিকট আমার স্বামীর কৃতকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রার্থনা করছি। মামলার এজাহার ও বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধানে গেলে ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেইটস্থ খালপাড়ের বাসিন্দা মো. মোস্তফা কামাল, মো. সরোয়ার আজম, মো. জাকির হোসেন ও মহিমা বেগমসহ আরো অনেকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা সকলেই জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত নিজেকে আলেম পরিচয় দিয়ে ভন্ডামি ও প্রতারণা করে আসছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত জামায়াত-শিবিরের সাংগঠনিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
আসামীর স্থায়ী ঠিকানা মানিকছড়ি উপজেলার গাড়িটানা এলাকার নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, গ্রেপ্তারকৃত মো. আবুল বাশারের স্বভাব চরিত্র মোটেই ভালো ছিল না, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। মামলার অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে ইপিজেড থানার উপ-পরিদর্শক (মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) নিদুল চন্দ্র কপালী এ প্রতিবেদকের নিকট অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামী বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, শিঘ্রই তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী মো. আবুল বাশার চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।