মহালছড়িতে অগ্নিকান্ডের ঘটনার নৈপথ্যে আসলে কারা?
মহালছড়ি(খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টায় পাহাড়িদের নির্মিত ৪/৫টি জুম ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জন্য উক্ত এলাকায় বসবাসরত বাঙ্গালী ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করে পাহাড়িদের বেশ কিছু অনলাইন ভিত্তিক পত্রিকা ও নিউজ পোর্টাল এর পাশাপাশি বেশ কিছু ফেইসবুক পেইজে এ ঘটনাকে বিভিন্নভাবে বিবরণ দিয়ে প্রচার করা হয়। এ নিয়ে ঘটনার পর থেকেই ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এক ভিটায় পাহাড়িদের বাঁশ আর শন দিয়ে সম্প্রতি তৈরি করা ৫ টি ছোট ছোট মাচাং ঘর পুড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখা যায়। স্থানীয় পাহাড়িরা জানান, পার্শ্ববর্তী গ্রামের ওমর ফারুকের নেতৃত্বে ১৪ মার্চ রাত ১০ টার দিকে ১০/১৫ জন বাঙ্গালী এসে পাহাড়িরা বসবাসের জন্য নির্মিত ঘরগুলি আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। যেখানে পাহাড়িদের জমির বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্বেও বাঙ্গালীরা দীর্ঘদিন থেকেই ঐ জায়গাটি দাবি করে আসছে। পাহাড়িদের মধ্য থেকে জমির মালিক দাবিদার যতিশ চন্দ্র চাকমা জানান, পিতার নামীয় বৈধ খতিয়ানভুক্ত জায়গা জমির দীর্ঘদিন থেকেই তার ৫ একর জমির কর-খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। এদিকে বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে আগুন লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেন।
স্থানীয় বাঙ্গালীরা বলেন, কিছু দিন পূর্বে এই জমিটি কয়েকজন পাহাড়ী দখলের চেষ্টা করে। তারা উক্ত জমির বাঙালি মালিকদের উপর নির্যাতন করেন ও সূর্য ভানু নামক একজনের মাথা ফাটিয়ে দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা ভূমি কমিশনার, মহালছড়ি বরাবর সঠিক বিচারের জন্য আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। এরই প্রতিশোধ স্বরূপ পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা পরিস্থিতি ঘোলাটে করার উদ্দেশ্যে গত ১৪ মার্চ আনুমানিক রাত্র ১০ টায় অস্থায়ী ভাবে তাদের নির্মিত ঘরে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বাঙ্গালীদের উপর দোষ চাপিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে। তারা আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর মাধ্যমে প্রাপ্ত ফুটেজ এ দেখা যায় ভিডিওটি ১৪ মার্চ রাত ৯ টা ৪৫ মিনিট এ ধারন করা হয়েছে। এছাড়াও উক্ত ভিডিওতে কোনো বাঙালির অস্তিত্ব নেই বরং ভিডিও করতে ব্যস্ত পাহাড়ি কয়েকজন যুবককে দেখা যায় ও পাহাড়ি ভাষায় কথা বলতে শোনা যায়।
তারা আরো বলেন, এলাকার সার্বিক শান্তি এবং সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণ শান্তি প্রেমী পাহাড়ী ও বাঙ্গালীদের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে কতিপয় দূর্বৃত্ত কর্তৃক এই ঘটনা ঘটানো হয়। এটি সম্পূর্ণ রূপে তৃতীয় পক্ষের উস্কানিমূলক কার্যক্রম। এসব নাটকীয় ঘটনার জন্য তারা ইউপিডিএফ প্রসিত এর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাজ হতে পারে বলে মনে করেন। বাঙ্গালির পক্ষে জমির মালিক দাবিদার মোহর আলী বলেন, সরকারিভাবে বৈধ জমির একমাত্র দলিল আমার আছে হিসেবে আমি প্রকৃত জমির মালিক। আমার জমি নিয়ে পাহাড়িরা আমাকে অযথা হয়রানি করছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বিমল বিকাশ চাকমা বলেন, এ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে মূলত জায়গা জমি সংক্রান্ত সমস্যার কারণে। সরকারিভাবে জায়গা চিহ্নিত করে না দেয়া পর্যন্ত এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাজাই মারমা বলেন, ৫টি পাহাড়ি জুম ঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সত্য। তবে, কে বা কারা ঘটিয়েছে তা আমার জানা নেই। এলাকায় শান্তি বিনষ্ট করতে এসব ঘটনার নৈপথ্যে কারা জড়িত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করা দরকার।
এ ব্যাপারে মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবাইদা আক্তার বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। তবে। এ ব্যাপারে কেউই অভিযোগ করেনি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।