মানিকছড়িতে রসালো ফলের বাম্পার ফলন, ব্যহত হচ্ছে বাজারজাত

আবদুল মান্নান: রসালো ফল লিচুর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে মানিকছড়িতে। ‘করোনা’র ছোবলে বাজারে পাইকার না থাকায় এখনো গাছে গাছেই ঝুলছে লিচুর বাহার। সফল চাষি মো. এয়াকুব আলী সাত একর বাগানের লিচু নিয়ে এখন দুঃশ্চিন্তায়!

সরজমিনে দেখা গেছে,উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পরতে পরতে সারি সারি গাছে ঝুঁলে আছে অসংখ্য চায়না-২,চায়না-৩,বোম্বাইসহ নানা জাতের রসালো ফল লিচু। পেঁকে লাল লাল হয়ে নিজের বাহারে রাঙ্গিয়ে তুলছে চাষী ও দর্শণার্থীর মন। অন্যান্য বছর গাছে লিচুর ফুল আসা মাত্রই দলে দলে পাইকার এসে পুরো বাগানে কিনে নেয়। ফল পুষ্টি হওয়ার আগেই চাষীর হাতে আসে টাকা আর টাকা। আনন্দে আত্মহারা চাষীরা পাহাড়ী লিচুর কদর দেখে শতশত একর পাহাড়ে লিচু চাষে উদ্ভুদ্ধ হয় কৃষক। এ বছরও চাষিরা যথারীতি বাগানে পরিচর্চা করেছে। গাছেও ফল এসেছে নয়ন জুড়িয়ে। ফুল আসা মাত্রই পাহাড়ের উচুঁতে পানি সেচের মাধ্যমে ফল নিশ্চিত করেছে সকলে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি‘করোনা’র ছোবলে সবই যেন ধুলায় মিশে একাকার! গাছের পরতে পরতে ফলের বাহার দেখে চাষী প্রথমে আনন্দে আত্মহারা হলেও ‘করোনা’ প্রতিরোধে সারা দেশে লকডাউনে গৃহবন্দি জনজীবনের অভিশাপে রসালো ফল লিচু তার কদর হারিয়েছে।

উপজেলার মরাডলু’র সফল চাষী ও সফল কৃষিবিদ ডা. এয়াকুব আলীর ৭একর টিলা ভূমির ৫শতাধিক গাছে গত ২/৩ বছর ধরে লিচুর ফল আসতে থাকলেও এবারই প্রথম বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগানের যে দিকে দু’নয়ন পড়বে সেদিকেই থোকায় থোকায় লিচুর রংয়ে রাঙ্গিয়ে তুলছে মন। বাহারী রং ধারণ করেছে রসালো ফল লিচু। কিন্তু বাগানের ৮০% ফল পেকে গেলেও পাইকার/ক্রেতা আসেনি! গণপরিবহন বন্ধ থাকায় হাট-বাজার লিচুর কদর নেই বললেই চলে।ফলে গাছে গাছে ঝুলছে বাহারী রংয়ের রসালো ফল লিচু। লিচুর ফলন এবং বাজার সর্ম্পকে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ডা. এয়াকুব আলী জানান, জীবনে সর্বশক্তি ও পুঁজি ব্যয় করে লিচুর বাগান সৃজন করেছিলাম। এ বছর পুরো বাগানের প্রায় ৫শ গাছে ফল ধরেছে। বর্তমান বৈশ্বিকমহামারি ‘করোনা’র কবলে পড়ে যেন সবই হারিয়েছি। গাছে গাছে লিচুর পেঁকে একাকার। গাছে ফুল আসার শুরু থেকে গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া আর এখন রাতে বাদুর তাড়িয়ে ফল রক্ষা করলেও বাজারে পাইকার নেই! ফলে এই ক্ষণস্থায়ী রসালো ফল নিয়ে কী করবো ভেবে কূল পাচ্ছিনা। গাছের পরতে পরতে লিচুর বাম্পার ফলন দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।

কিন্তু এখনো পর্যন্ত গ্রাহক না পেয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছি। স্থানীয় এবং ফটিকছড়ি’র কিছু ক্রেতা সম্প্রতি বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু জনপদে যে হারে লিচুর চাষ ও ফলন হয়েছে। তাতে এক বাগানের ফল এক সপ্তাহ ধরে কিনলেও শেষ হবে না। শত শত চাষী সকলে এখন ক্ষণস্থায়ী ফল বাজারজাত নিয়ে বিপাকে রয়েছে। গতকাল ভোরে উপজেলার সবচেয়ে বড় কাঁচা বাজার তিনটহরী গিয়ে দেখা গেল সকাল সাড়ে ৫টা থেকে ৭টার মধ্যে বাজারে প্রচুর লিচু উঠেছে। কিন্তু গ্রাহক নেই! চায়না-৩ একশ লিচু ২শ থেকে ২শ ২০ টাকা। চায়না-২ দেড়শ থেকে ১শ ৮০ টাকা। তাও আবার ক্রেতার চেয়ে লিচু হাজার গুন বেশি। মানিকছড়ি’র রসালো ফল লিচুর বর্তমান বাজারমূল্যের র্দূদশা আর চাষীর র্দূগতি দেখে মনে হচ্ছে প্রতিটি বাগান মালিকই এবার বড় ধরণের লোকসান গুণতে হবে।

সরকার ঘোষিত কৃষি প্রণোদনা না পেলে ভবিষতে এসব চাষীরা আর লিচু চাষে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, বৈশ্বিক মহামারি‘করোনা’র ছোবলে এবার উপজেলার লিচু,আম ও কাঁচা তরকারী চাষীরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। কৃষকের এই ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপণ করে যাতে সকলে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা বা কৃষি ঋণ সুবিধা পেতে পারে সে বিষয়ে কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের ।

Read Previous

লক্ষ্মীছড়ি ইউনিয়নে ঈদের আগে চাল না পাওয়ায় জনমনে ক্ষোভ

Read Next

মানিকছড়িতে‘করোনা’ উপসর্গ নিয়ে গার্মেন্টস কর্মীর মৃত্যু