রাঙামাটিতে ডাক্তার নার্সসহ শনাক্ত ১৪, করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপনের কথা জানালেন ডা. মোস্তফা কামাল

রাঙামাটি অফিস: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ঝুঁকির মধ্যে আছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। এমন পরিস্থিতিতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি করোনা ফোকাল পারসন সিভিল সার্জন অফিসের ডা. মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আইসিইউ নাই প্রয়োজন আছে কিন্তু আইসিইউ থেকে বেশী জরুরী প্রয়োজন হলো করোনা টেস্ট ল্যাব। যত দ্রুত টেস্ট হবে তত দ্রুত ফলাফল আসবে আর সর্বসাধারণের মনেও সচেতনতা আসবে।

তাছাড়া রাঙামাটি পার্বত্য জেলা দুর্গম হওয়ায় টেস্ট ল্যাব জেলা সদরে স্থাপন হলে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্যও অনেকগুন সুবিধা হবে। সে লক্ষ্যে জেলায় করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কথাবার্তা চলছে বলে জানান তিনি। ইতিমধ্যে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। জেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন মাস্ক পিপিই ইত্যাদি পর্যাপ্ত আছে। তবে জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল গুলিতে পরিচ্ছন্ন কর্মীর সংকট রয়েছে। হাসপাতালে আইসিইউ না থাকলেও পর্যাপ্ত রয়েছে অক্সিজেন নেবুলাইজেশন। করোনা টেস্ট ল্যাব স্থাপন বর্তমানে শুধু প্রয়োজনীয়তা নয় তা এখন তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাবাসীর জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে মনে করছেন জেলাবাসী। দ্রুত টেস্ট ল্যাব স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন সর্বসাধারণ।

তিনি আরো বলেন, চলতি মাসের ৬ তারিখ রাঙামাটিতে প্রথম ৪ জন করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পরপর এক সপ্তাহের মধ্যে আবার ১০ জন শনাক্ত হয়ে আজ ১৪ মে বৃহস্পতিবার বেলা ২ টা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ জন। তারমধ্যে ২ জন ডাক্তার ২ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সসহ ৭ জন পুরুষ ৭ জন মহিলা। দু’জন ডাক্তারের বয়স একজনের ৪২ অপর জনের ৩৭ বছর, নার্সদের বয়স একজনের ৫০ ও অপরজনের ৩৭ বছর। রাঙামাটি জেলায় প্রথম শনাক্তদের মধ্যে ৯ মাসের শিশুও রয়েছে। এ পর্যন্ত রাঙামাটি থেকে ২ মাস ১০ দিনে ৫১১টি নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে করোনা শনাক্তের জন্য পাঠানো হয়।

রিপোর্ট এসেছে ৩৭৩টি তার মধ্যে ১৪টি করোনা পজেটিভ। শঙ্কার বিষয় হলো রাঙামাটি সদর থেকে উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমন ছড়িয়ে পরেছে। এ সপ্তাহে বিলাইছড়ি উপজেলায় ২ জন আর রাজস্থলী উপজেলায় ১ জন করোনারোগী শনাক্ত হয়। জেলায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছে ৭১৯ জন এবং হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৫২৪ জন। জেলায় প্রাতিষ্ঠানক কোয়ারেন্টাইনের জন্য রাঙামাটি সরকারি কলেজের এনেক্স ভবন এবং চম্পক নগরে আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইন্সষ্টিটিউট (আরপিটিআই) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখনো জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেনি।

জেলায় করোনা দ্রুত সংক্রমণের কারণ নির্দিষ্ট করা না গেলেও রাঙামাটি হাসপাতালে কোন একজন করোনা রোগী হয়তো তথ্য গোপন করে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে সংক্রমন হচ্ছে। এছাড়া জেলায় ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকেও লোকজন আসছে। ঢাকা নারায়নগঞ্জ হলো করোনা ভাইরাসের হটস্পট। রাজস্থলীর আক্রান্ত ব্যাক্তি নারায়নগঞ্জ থেকে আগত বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনা সংক্রমন থাকায় বর্তমানে রাঙামাটি সদরের টিএন্ডটি এলাকা, টিটিসির ম্যাজিষ্ট্রেট কলোণী, কলেজ গেইট এলাকা ও তবলছড়ির মাঝের বস্তি এলাকা লকডাউন করা হয়েছে বলে জানান। জেলা শহরে গাড়ী চলাচল ও প্রায় ৫০ শতাংশ দোকানপাট খোলা রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের নির্দেশনা, আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা ৬ ফুট দূরত্বে অবস্থান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা ইত্যাদি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছি।

রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষসহ বেশকিছু ডাক্তার করোনার হটস্পট চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসা যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসায় বর্তমানে যাতায়াত বন্ধ করে রাঙামাটি অবস্থান করে রোষ্টার অনুযায়ী চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

এসময় করোনা ফোকাল পারসন সিভিল সার্জন অফিসের ডা. মোস্তফা কামাল রাঙামাটি জেলা বাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, করোনা ঝুঁকি এড়াতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। সাবান দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা সর্বোপরি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে করোনা ঝুঁকি অনেকাংশে কম হবে। ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।

Read Previous

দীঘিনালায় খদ্যশস্য চুরির অভিযোগে ইউপি সদস্য আটক

Read Next

খাগড়াছড়ি আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর করোনা পজিটিভ