রাঙ্গুনিয়া মানবাধিকার সংস্থার সেমিনার ও গুণীজন সংবর্ধনা
শান্তি রঞ্জন চাকমা, রাঙ্গুনিয়া : বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের সেমিনারে চুয়েটের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, প্রজাতন্ত্রের সংবিধান মতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রশাসন জনসেবা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। তাই মেধাসম্পন্ন যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর জনপ্রশাসন গড়ে উঠা প্রয়োজন। কিন্তু রাষ্ট্রক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে দলীয় ব্যক্তি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ, রাজনৈতিক বিবেচনায় বদলি, পদোন্নতি, ওএসডি ইত্যাদির কারণে প্রশাসনে মেধাশূন্যতা সৃষ্টি হয়। এর উত্তরণে সৎ, যোগ্য, দক্ষ, মেধাবীদের নিয়োগ দান প্রয়োজন।
মানবাধিকার দিবস ২০২৪-এর প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ এখনই’-এর আলোকে গত ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা মডেল শাখা ও পৌরসভা শাখার যৌথ ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত সেমিনারে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটস্থ ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি-ইউসিটিসি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এর প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মডেল শাখার সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ জহুরুল আনোয়ার। উদ্বোধন করেন সংস্থার আজীবন সদস্য, কোষাধ্যক্ষ ও ইউসিটিসি ফাউন্ডার মুহাম্মদ ওসমান।
‘জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও করণীয়’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার আজীবন সদস্য ও অধিকার গবেষক মুহাম্মদ শওকত আলী নূর। প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন সংস্থার আজীবন সদস্য ড. মাওলানা মুহাম্মদ লিয়াকত আলী, প্রকৌশলী তোফাজ্জল আহমদ, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী, ডা. এস এম কামরুল হক, অ্যাডভোকেট কে আর এম খাইরুদ্দিন মাহমুদ চৌধুরী হিরু, অ্যাডভোকেট নিজামুল ইসলাম সরফী, সিএসকে সিদ্দিকী, মো. নূরুল আজিম।
দ্বিতীয় অধিবেশনে গুণীসংবর্ধনা পর্ব উদ্বোধন করেন সংস্থার চট্টগ্রাম জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমল হক। এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার পৌরসভা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। সঞ্চালন করেন মোহাম্মদ নূরুল আজিম ও প্যানেল মেডিয়েটর কে এম গিয়াস উদ্দিন শাহ্ জাহান।
প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্থার আজীবন সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী এম এন আলম। তিনি বলেন, নব্বই সালে রাঙ্গুনিয়ায় মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার শাখা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর সাংগঠনিক ও দাফতরিক কাজের পাশাপাশি গুণীজনের মূল্যায়নে ‘মানবাধিকার পুরস্কার’ সম্মাননা প্রদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা একটি অসাধারণ উদ্যোগ ও মহৎ কাজ। মানবাধিকার সুরক্ষা ও মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে এ সংস্থা দেশের শ্রেষ্ঠ শাখার স্বীকৃতি অর্জন ও মডেল শাখা আখ্যায়িত হওয়া সত্যই গর্বের। তিনি আরো বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব ও সুুষ্ঠু পরিচালনায় এ সংস্থা জাতি ধর্ম বর্ণ ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল মানুষের আস্থার প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছে।এবারের গুণীদের মধ্যে ১. ইসলামী আধ্যাত্মিকতায় : হযরত মাওলানা রফিক আহমদ আলক্বাদেরী (রাহ্)-মরিয়মনগর, ২. সাহিত্যে : শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহীম-বেতাগী, ৩. উচ্চতর শিক্ষায় : অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফেরদাউস চৌধুরী (মরণোত্তর)-বেতাগী, ৪. মাধ্যমিক শিক্ষায় : মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান (মরণোত্তর)-পোমরা, ৫. প্রাথমিক শিক্ষায় : ডা. হরি সাধন সাহা-স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, ৬. প্রশাসনে : কামরুন নাহার-পৌরসভা, ৭. সমাজসেবায় : মৌলভী কবির আহমদ (মরণোত্তর)-সরফভাটা, ৮. শিক্ষা প্রসারে : মোহাম্মদ কালু মিয়া সওদাগর (মরণোত্তর)-চন্দ্রঘোনা, ৯. মুক্তিযুদ্ধে : বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ছালে আহমদ- হোসনাবাদকে ‘মানবাধিকার পুরস্কার’ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সংস্থার প্যানেল লইয়ার অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রেজা অন্তর্বর্তী সরকারের ডেপুটি অ্যাটর্নী জেনারেল এবং চট্টগ্রাম জজ কোর্টে কর্মরত ২০ জন মানবাধিকার আইনজীবী সরকারের আইন কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ায় তাদেরকে ‘ধন্যবাদপত্র’ প্রদান করা হয়।
কর্মক্ষেত্রে কর্তব্যপরায়ন ও ন্যায়নিষ্ঠায় ১. ডা. হাফেজুর রহমান (মরণোত্তর)-পদুয়া, ২. ডা. রাখাল চন্দ্র চক্রবর্তী-স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, ৩. ডা. সুভাষ চন্দ্র সেন-পৌরসভা, ব্যক্তি উদ্যোগে ইসলামী ও আধুনিক কারিগরী শিক্ষায় : আবদুর রাজ্জাক দাখিল মাদরাসা, মীরেরখীল, সরফভাটা, ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ ও জনহিতকর কার্মে ভূমিকায় : নূরের আলো যুব একতা সংঘ, সৈয়দবাড়ি, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এবং সমাজের তৃণমূলে সংস্থার নীতি-আদর্শ প্রতিফলনে ভূমিকায় : সংস্থার পদুয়া শাখা ২০২৪ সালের শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন শাখা মনোনীত হওয়ায় ‘মানবাধিকার সনদ’ প্রদান করা হয়।
সমাপনী পর্বে উভয় শাখার বার্ষিক সাংগঠনিক ও আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন স্ব স্ব শাখার সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে নূরুল ইসলাম আজাদ ও মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম।
সব শেষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও বিশ্বের দেশে দেশে নির্বিচারে চলমান দমন-পীড়ন ও ধ্বংসযজ্ঞে শাহাদাত বরণকারীদের রূহের মাগফিরাত এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনয় মুনাজাত করা হয়।