রাজস্ব বঞ্চিত সরকার: রাঙ্গুনিয়া ইছামতি খাল থেকে ইজারা ছাড়া বালু পাচার

শান্তি রঞ্জন চাকমা: রাঙ্গুনিয়া ইছামতি খালের একাধিক স্পট থেকে হাজার হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করে পাচার করা হচ্ছে। নিয়ম না মেনে ইছামতি ছড়ার তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করায় খালের দু’পাড়ের ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শতশত বাড়িঘর বিলীন হওয়ার পথে। কাউখালী-রানীরহাট-পারুয়া সড়কে ট্রাক ও জীপে অতিরিক্ত ওজনে বালু পরিবহন করায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো নাজুক হয়ে পড়েছে।

ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতায় ইছামতি খাল থেকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বালু তোলায় পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ইছামতি খালে প্রায় ১১টি স্পটে ইজারা ছাড়া বালু পাচার হওয়ায় প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বেপরোয়া বালু পাচারে ঘাগড়া ভূমি অফিসের নীরব ভূমিকায় এলাকার সাধারন মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করছেন।

উপজেলার ইসলামপুর, রাজানগর, দক্ষিণ রাজানগর, পারুয়া ইউনিয়নের ইছামতি খাল থেকে উত্তোলন করে পাহাড়সম বালু মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। মজুদ করা বালু পরিবহনের জন্য আবাদি জমি ও পাহাড় কেটে তৈরী করা হচ্ছে রাস্তা। খালের উৎস স্থল এবং পাহাড়ি ছড়াগুলোতে বালুর উৎসের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে পাচারকারী চক্র। বয়ে চলা দুর্গম পাহাড়ের উৎস স্থলগুলোতে তাদের হস্তক্ষেপে উত্তাল হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক ছড়া খালগুলো।

ইসলামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, ইছামতি খালের উৎস স্থলে বালু পাচারকারীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলনে খালের দু’পাড় তীব্র ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হতে চলেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে একাধিক সিন্ডিকেট ইছামতি খালে অবৈধভাবে বালু আহরনের উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। পারুয়া গ্রামের মো. আনছুর উদ্দিন বলেন, বালু উত্তোলনে বিপন্ন হতে চলেছে ইছামতি খালের অস্তিত্ব। অতিরিক্ত ওজনে বিনাবাঁধায় বালু পাচার হওয়ায় এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

ইসলামপুরের বালু পাচারকারী সিন্ডিকেটের নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এক সদস্য বলেন, ইছামতি খালের তলদেশ থেকে উচ্চসম্পন্ন যন্ত্র বসিয়ে শতশত ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়। ইছামতি খাল থেকে বালু উত্তোলনে সরকারী ভাবে ইজারা দেয়া হয়নি। বিনা পুঁজিতে এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক সিন্ডিকেট। ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু পাচার হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রতি বালু মহালে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে বালু তোলার যন্ত্র ও মেশিন নষ্ট করে দেয়া হয়। অভিযানে মুল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় বালু উত্তোলন ও পাচার বন্ধ হচ্ছে না। ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মোহাম্মদ হেলাল বলেন, ইছামতি খালের বিভিন্ন স্পটে বালু উত্তোলন বন্ধে সর্তক করা হলেও পাচার কার্যক্রম থেমে নেই।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাঙ্গুনিয়া ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী তহশীলদার মোহাম্মদ নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী চক্র রাজনৈতিক পরিচয়ে ইছামতি খাল থেকে বালু উত্তোলন করে চলেছে। ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করায় পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং সরকার এ খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে।

Read Previous

মোজাফফর রাজনীতিকে এতিম করে চলে গেলেন : মোমিন মেহেদী

Read Next

শিক্ষার্থীদেরকে সৎ নীতিবান ন্যায়নিষ্ঠা ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে হবে