মানিকছড়িতে সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্রে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ বেড়েই চলছে
আবদুল মান্নান,মানিকছড়ি: পার্বত্য জনপদ মানিকছড়ির ২৩১ নং কালাপানি মৌজায় আবিস্কৃত সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডে ভূমির মালিকানা নিয়ে বাপেক্সের সাথে স্থানীয়দের বিরোধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। বাপেক্সের অপ্রয়োজনীয় সম্পত্তির লিজ বাতিলের জোর দাবী উঠছে তৃণমূলে। এছাড়া রের্কডীয় ও ভোগ-দখলীয় সম্পত্তি বেহাতের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাপেক্স, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির ২৩১ নং কালাপানি মৌজায় ১৯৬৭-১৯৭০ সালে আবিস্কার হয় সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র। স্বাধীনতার আগে গ্যাস আবিস্কার হলেও উত্তোলন প্রক্রিয়ার প্রথমার্ধে কূপে বোমা বিস্ফোরণ, প্রকৌশলী অপহরণসহ নানাবিধ বাধাবিপত্তিতে দীর্ঘ সময় পরিত্যক্তই থেকেছে গ্যাসক্ষেত্রটি! বিগত ১৯৯৭ সালে আবারও কূপ খনন শুরু করেন ‘কেয়ার্ন এনার্জি পিএলসি’ এবং বাপেক্স তাদের স্থায়ী অধিগ্রহনকৃত ৬.৪৭ একর ভূমিতে স্থাপনা (অফিস,নিরাপত্তা ক্যাম্প,আবাসিক) তৈরি করে ১৯৯৯ সালে পুরোদমে গ্যাস উত্তোলনে যায়। স্থায়ী ভূমির পাশাপাশি আরো ১০.৭১একর ভূমি লিজগ্রহন করেন। যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে।
আবিস্কারের পর দীর্ঘ সময় গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত থাকায় সেখানকার মূল্যবান সম্পদ একদিকে যেমন হরিলুট হয়েছে। তেমনি ১৯৮৩-৮৪ সালে এলাকার স্থায়ী অধিবাসীরা সরকার থেকে বন্দোবস্তী কবুলিয়তমূলে এবং ভোগ-দখলীয়ভাবে টিলাভূমির মালিকানা দাবীদার হয়। এতে গ্যাসক্ষেত্রের লিজকৃত প্রায় ১০.৭১ একরসহ বহু সম্পত্তি (ভূমি) ব্যক্তি মালিকানায় চলে যায়! বিষয়টি জানতে পেরে বাপেক্স ওই ১০.৭১ একর ভূমি উদ্ধার করতে সরকারের শরণাপন্ন হয় একাধিকবার।
সম্প্রতি বাপেক্স আবারও ওই ভূমির লিজ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং অবৈধ দাবীদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনসহ ভূমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়ে আবেদন করেন। ফলে একাধিকবার সরজমিনে তদন্ত করে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাপেক্স লীজকৃত সম্পত্তির ১০.৭১ একর ভূমি দখলমুক্ত করতে পারেনি! বিভিন্ন সময়ে উক্ত ভূমির রক্ষণা-বেক্ষণ প্রক্রিয়ায় বিরোধ চলে আসছে।
গত ৩১ মে ২০১৬ তারিখে তৎকালিন সহকারি কমিশনার (ভূমি) যুথিকা সরকার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বাপেক্সের ১০.৭১ একর ভূমির লীজ ২০১৯সাল পর্যন্ত বলবৎ আছে। অন্যদিকে স্থানীয়দের দাবীকৃত(রেকর্ডমূলে) ৩টি হোল্ডিং ৪২,৮১ এবং ৮৫(ক)হোল্ডিং এর নামজারি মামলা নং-৩১৫/মানিক/১১ রেজিঃ দঃ ১২৬৮/১২ এর বন্দোবস্তী মামলার নথি ও কবুলিয়ত সৃজিত হয়নি। যা ১৯৮৩-৮৪ সালের কবুলিয়তমূলে হোল্ডিং ও রেকর্ড করা হয়েছে।
সর্বশেষ আবারও উক্ত সম্পত্তি স্থানীয়রা দাবী করায় গত ৭ মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান ¤্রাগ্য মারমা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রুবাইয়া আফরোজ, ইউপি চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন, জনপ্রতিনিধি,মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ সরজমিন পরিদর্শনে যান।
এ সময় স্থানীয় বীর মুক্তিযুদ্ধা আবদুল করিম ও আবদুল মান্নানসহ উপস্থিত লোকজন রেকর্ডপত্র, দখল, বসতবাড়ী সৃজিত বাগ-বাগান দেখিয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এ ভূমিতে আমরা বসবাস করছি। ১৯৯৭ সালে বাপেক্স আমাদের অনেক সম্পত্তি বেদখল করে নিলেও আমরা বৃহত্তর স্বার্থে প্রতিবাদ করিনি। বাপেক্সের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাদেও রেকর্ডীয় ও ভোগ-দখলীয় ভূমিতে প্রবেশ অর্ধশত বছরের পুরানো কবরস্থান, ঘরবাড়ী দখলের চেষ্ঠা করছে। বাপেক্সের স্থায়ী অধিগ্রহনকৃত ভূমি থাকা স্বত্বেও অ-প্রয়োজনীয়ভাবে অধিবাসী লোকজনকে চিরতরে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নিয়ে লিজের মেয়াদ বাড়াতে তৎপরতা শুরু করেছে। আমরা বাপেক্সের ১০.৭১ একর সম্পত্তির লিজ বাতিলের জোর দাবী জানাচ্ছি।
এদিকে বাপেক্সের স্থানীয় অফিসের হিসাব রক্ষক মো. ইদ্রিসুর রহমান বলেন, এ গ্যাসক্ষেত্রের সম্পত্তি লিজমূলে বাপেক্স দাবীদার। ফলে এ সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশংকায় তা উদ্ধার এবং অবৈধ মালিকানা দাবীদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে বাপেক্স।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রুবাইয়া আফরোজ এ প্রতিনিধি’কে বলেন, বাপেক্সের লিজকৃত ভূমি ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তিরা কবুলিয়তমূলে প্রাপ্ত সম্পত্তি বন্দোবস্তীমূলে রেকর্ড করে নিয়েছে। বিষয়টি ইতোপূর্বেও তদন্ত হয়েছিল। এখন আবারও তদন্তসহ সার্বিক তথ্যাদি সর্ম্পকে জেলা প্রশাসক’কে অবহিত করা হবে।