• January 18, 2025

খাগড়াছড়িতে উৎসব মুখর ভাবে ‘ত্রিং উৎসব’ উদযাপন

 খাগড়াছড়িতে উৎসব মুখর ভাবে ‘ত্রিং উৎসব’ উদযাপন

দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ত্রিপুরাদের ‘ত্রিং উৎসব ১৪৩২ ত্রিপুরাব্দ’ উৎসব পালিত হয়েছে। গতকাল জেলা সদরের পানছড়ি রোডস্থ গাছবান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস), ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ), য়ামুক (একটি সাংস্কৃতি আন্দোলন), হলং ককবরক ব্যান্ড, ধীনা ড্যান্স একাডেমি, য়াকবাকসা ক্লাব-কুমারধন পাড়া, য়াকবাকসা সংঘ-বৃহত্তর নয় মাইলসহ স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় ‘‘ত্রিপুরাব্দ উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ উৎসবের নানা আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ত্রিং উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের খাগড়াছড়ি সদর আঞ্চলিক শাখার সভাপতি বিপ্লব কান্তি ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।

এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ (বিটিকেএস) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি সুরেশ মোহন ত্রিপুরা, নারী নেত্রী ও খাগড়াপুর মহিলা কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা, জেলা কার্বারী এসোসিয়েশন এর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পূর্ণ ভূষন ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরাব্দ বিষয়ে ধারণা পত্র পাঠ করেন য়ামুক (একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন) এর সভাপতি প্রমোদ বিকাশ ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে ‘ত্রিপুরাব্দ বিসিকাতাল’ সম্পর্কে আলোচনা করেন ‘‘বিশিষ্ট নাট্যকার, কবি ও লেখক অলিন্দ্র ত্রিপুরা (লিয়ন) ও যশোবর্ধন ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের খাগড়াছড়ি সদর আঞ্চলিক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ধনেশ্বর ত্রিপুরার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরামের খাগড়াছড়ি সদর শাখার সভাপতি খলেন জ্যোতি ত্রিপুরা।

প্রধান অতিথি নলেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, প্রথমে প্রদীপ প্রজ্বলন করে আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। তারপর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে ত্রিপুরা রীতি অনুযায়ী নতুন বছরকে স্বাগত জানান। এই সময় ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পোশাক পরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। শোভাযাত্রাটি কুমারধন পাড়ার যাত্রী ছাউনী থেকে শুরু হয়ে উৎসব অঙ্গনে গিয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।

পরে সন্ধ্যা থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত স্থানীয় আদিবাসী শিল্পী ও হলং ককবরক ব্যান্ডের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। উৎসব মুখর ভাবে প্রতিবছর ২২ ডিসেম্বরে ত্রিং উৎসব পালন করা হয়। এতে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ এ উৎসবে যোগ দেন।

ত্রিপুরা রাজ্যে রাজার আমলে ত্রিপুরাদের নিজস্ব ক্যালেন্ডার ছিল। একে বলা হতো ত্রিপুরাব্দ। সেই সময় রাজকার্য চালিত হতো এই নিজস্ব ক্যালেন্ডার মেনে। আর ককবরক ভাষায় নববর্ষকে বলা হয় ত্রিং।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় রাজ্য ত্রিপুরার রাজতন্ত্র ইতিহাসের পাতায় স্থান নিয়েছে। সেই সঙ্গে ইতিহাস হয়েছে রাজন্য আমলের বহু নিয়ম কানুন। তবে এখনো ত্রিপুরা রাজ্যের বহু আদিবাসী তাদের অনেক সামাজিক রীতি-নীতি মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকেন। এমন একটি উৎসব হলো ‘ত্রিং উৎসব’। এই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি এখন প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পালন করা হয়ে থাকে।

এদিকে উৎসবটি উপলক্ষে সোমবার (২১ ডিসেম্বর ২০২০) সন্ধ্যায় জেলা সদরের খাগড়াপুর এলাকার উইমেন রিসোর্স সেন্টারে বলংরায় ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ত্রিপুরাদের ক্যালেন্ডার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরামের খাগড়াছড়ি সদর শাখার সভাপতি খলেন জ্যোতি ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বলংরায় ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অলিন্দ্র ত্রিপুরা (লিয়ন) এর রোয়াজার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন শিক্ষা উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ক নবলেশ্বর দেওয়ান লায়ন, বলংরায় ফাউন্ডশনের সদস্য কোষাধ্যক্ষ ও য়ামুকের সম্পাদক যুগান্তর বিকাশ ত্রিপুরা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস্ ফোরাম, বাংলাদেশ (টিএসএফ)’ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দহেন বিকাশ ত্রিপুরা, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক যদুনাথ ত্রিপুরা প্রমুখ।

এছাড়াও দিনটি উপলক্ষে জেলা সদরের খাগড়াপুর হাদুক পাড়ায়সহ মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, গুইমারা উপজেলায় স্থানীয় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post