খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরাদের ‘হারি বৈসু’-র শুভ সূচনা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: নদীতে শুদ্ধ বস্ত্র ও রকমারি ফুল বিসর্জনের মাধ্যমে খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরাদের তিন দিনব্যাপি ‘বেসু’ উৎসবের তিন দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। দেবীজ্ঞানে জলদাত্রী খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর এলাকায় শনিবার দুপুরে সম্মিলিতভাবে ঐতিহ্যবাহী পূজা-অর্”নার ‘হারি বৈসু’ শুরু হয়েছে। রোববার ত্রিপুরা জাতিসত্ত্বার সর্বসাধারণ সনাতনী নিয়মে গৃহসজ্জা ও সামর্থ্য অনুযায়ী অতিথি আপ্যায়নের মাধ্যমে ‘মূল বৈসু বা বৈসুমা’ পালন করবে।
সোমবার ত্রিপুরাব্দ অনুযায়ী ‘বিসিকাতাল (নববর্ষ)’ উদযাপন করবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ-এর কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক শ্রী অনন্ত ত্রিপুরা। শনিবার সকালে নদীতে ফুল ও বস্ত্র বিসর্জনের সময় সংসদ সদস্যের সহ-ধর্মিনী মল্লিকা ত্রিপুরা, নারীনেত্রী শেফালিকা ত্রিপুরা এবং ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’-খাগড়াছড়ি জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রতিভা ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
ত্রিপুরা লোকরীতির বিশ^াস অনুযায়ী পুরাতন বছরের দু:খ গ্লানি ও পাপাচার থেকে মুক্তির জন্য দেবতার উদ্দেশে ফুল বিসর্জনের মাধ্যমে পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছর সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা আসে। এর আগে শুক্রবার (১২ এপ্রিল ) খাগড়াছড়ির বটতলী এলাকায় চেঙ্গীতে ফুল দিতে ছুটে আসেন শহরের আশপাশের এলাকার চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষেরা।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) চাকমা সম্প্রদায়ের মূল বিজু বা নববর্ষ। এই দিনে ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। রোববার হলো চাকমা’দের বিজু’র শেষদিন বা চাকমা ভাষায় ‘গজ্জাপয্যা’। এদিন স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘দোচোয়ানি’ দোলাচল আর নাচে-গানে মুখর থাকবে চাকমা অধ্যুষিত এলাকাগুলো। আর চাকমাদের শেষ দিন থেকে শুরু হবে ‘মারমা’দের সাংগ্রাই। ত্রিপুরা ভাষায় বৈসু, মারমা ভাষায় সাংগ্রাই এবং চাকমা ভাষায় বিজুু’-র প্রথম অক্ষর মিলেই ‘বৈসাবি’ নামে এ উৎসব পালন হয়ে থাকে। তিন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষার নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়। বৈসাবি উৎসবকে ঘিরে পাহাড় এখন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে।
এদিকে রামগড় শহরে মারমা জাতিসত্ত্বার সাংবাৎসরিক ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ‘সাংগ্রাই’ উপলক্ষে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন, ‘মারমা উন্নয়ন সংসদ (মাউস)’-খাগড়াছড়ি’র কেন্দ্রীয় সা: সম্পাদক ও জেলা উন্নয়ন কমিটি’র আহ্বায়ক মংসুইপ্রু চৌধুরী। মাউস’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মংপ্রু চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী সভায় এসময় সদ্য নির্বাচিত রামগড় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ^ প্রদীপ ত্রিপুরা, রামগড় পৌরসভার কাউন্সিলর বাদশা মিয়া, প্রধান শিক্ষক রাম্প্রুচাই চৌধুরী এবং সাবেক ছাত্রনেতা মো: শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
মূলত: ভারতীয়, বাংলাদেশ ও মায়ানমার পঞ্জিকা অনুসরণ করার ফলে এই তিন সম্প্রদায়ের ‘বৈসাবি’ উৎসব অনেকটা দেশীয় সময়ের মধ্যে সীমিত থাকে না।