• December 9, 2024

খুনের রহস্য উদঘাটন: নারী ও মদ দিয়ে ফুর্তি করেও টাকা দিতে বাঁধা দেওয়ায় গেঞ্জি পেছিয়ে হত্যা করি

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: ”নারী ও মদ দিয়ে ফূর্তি করানোর পরও গরুর চামড়ার ব্যবসা করতে রক্ষিত টাকা দিতে বাঁধা দেওয়ায় গেঞ্জি পেছিয়ে মহিউদ্দিনকে হত্যা করি।” এমনি লোমহর্ষক বর্ননা দিয়ে ফটিকছড়ির নানুপুর বাজারের তরকারী ব্যবসায়ী মহিন উদ্দিন (৩১) হত্যার দায় স্বীকার করেছে ঘাতক রমজান আলী। ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় হত্যার রহস্য উম্মোচনকারী ফটিকছড়ি থানার এসআই আরিফ হোসাইন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আজ রবিবার ঘাতক রমজান আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসাইন জানান, নিহত ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সমিতিরহাট ইউনিয়নের নুরুল আলম পুত্র। গত ২১আগষ্ট রাতে নিখোঁজ হয় এবং ঐ দিন থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার ১১দিন পর গত ০১ সেপ্টেম্বর সকালে উত্তর নিচিন্তাপুর দীঘির পাড় নামক স্থানে শিশুরা লাকড়ি সংগ্রহ করতে গেলে মঈন উদ্দীনের লাশ দেখতে পায়। ফটিকছড়ি থানাকে জানালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে গলিত লাশের পাশে মানিব্যাগ, কাপড় ও সেন্ডেল পাওয়া যায়। ঐ দিনই মৃতের স্ত্রী রুজি আক্তার বাদী হয়ে ফটিকছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে নিশ্চিত হওয়া যায় ভিকটিম মহিন উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল সেট ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া থানা এলাকায় ব্যবহার হচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে ধোবাউড়া থানা এলাকায় স্থানীয় পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনদের সহায়তায় রমজান আলী (২৫) পিতা-মৃত আবদুল আজিজ, সাং-রনসিংহপুর, থানা-ধোবাউড়া, জেলা-ময়মনসিংহকে আটক করি। তার হেফাজত থেকে ভিকটিম মহিন উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল সেটটি উদ্ধার কওে তাকে সহ ময়মনসিংহ থেকে ফটিকছড়ি থানায় এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করি। সে মহিন উদ্দিন হত্যার সাথে জড়িত মর্মে ১৬১ ধারায় স্বীকার করেছে।

ঘটনার বর্ণনায় রমজান আলী জানান, মহিন উদ্দিন নানুপুর বাজারে তরকারী ব্যবসা করতেন। রমজান দিনমজুর হিসাবে মাঝে-মাঝে মহিন উদ্দিনের কাজ করত। তরকারী ব্যবসা করাকালীন আমির হোসেন (৪৭), পিতা-মৃত চুন্নু মিয়া, সাং-রোসাংগিরী, থানা-ফটিকছড়ি, জেলা-চট্টগ্রামসহ ৩/৪ জন সিএনজি চালকের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। তারা কাজ শেষে প্রায়দিন রাতে নির্জন স্থানে গিয়ে মদ ও ইয়াবা সেবন করত এবং মাঝে মাঝে শহর থেকে পতিতা মেয়ে এনে আমোদ ফুর্তি করত। কোরবানী ঈদে গুরুর চামড়ার ব্যবসা করার জন্য মহিন উদ্দিন ৪০/৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে। এই টাকার বিষয় মাদক বন্ধুরা জেনে যায় এবং এই টাকা নিয়ে নেয়ার জন্য মাদক বন্ধু আমির এর নেতৃত্বে রমজান ও আরো ৩ জন পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২১ আগষ্ট রাতে আমির শহর থেকে একটি পতিতা মেয়ে আনে আর রমজানসহ অন্য বন্ধুরা মদ ও ইয়াবা সংগ্রহ করে। রাত অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময়  মহিন, রমজান, আমির ও আরো ০৩ বন্ধু মিলে পতিতা মেয়ে নিয়ে নিশ্চিন্তপুর দীঘির পাড়ে পুরাতন কবরস্থানের জঙ্গলে যায়। সবাই মিলে মদ ও ইয়াবা সেবন করে এবং পতিতা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে। মহিনকে মাতাল করে একপর্যায় আমির রমজান ও বাকী ০৩ জন মিলে মহিনের কাছে থাকা চামড়ার ব্যবসার টাকা ছিনিয়ে নিতে চাহিলে মহিন প্রতিরোধ করে। তখন সবাই মিলে মহিনের গায়ের সেন্টু গেঞ্জি দিয়ে শ্বাসরোধ করে মহিনকে হত্যা করে লাশ ঐখানে জঙ্গলে ফেলে টাকা ও মোবাইল নিয়ে সবাই চলে যায়। মহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ও ৫০০/-টাকা রমজানের ভাগে পরে। বাকি টাকা অন্যরা নিয়ে যায়। রমজান পরের দিন ২২ আগষ্ট তার নিজ বাড়ী ময়মনসিংহ চলে যায়।

ফটিকছড়ি থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মো. দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া জানান, মহিউদ্দিনের গলিত লাশ উদ্ধারের দিন তার স্বজনের তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনায় জড়িত অপর আসামী আমির হোসেনকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনায় জড়িত অপর আসামীদেও ধরতে পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post