বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় শিক্ষার্থীদের মিছিল: হামলা-সংঘর্ষ, গুলি, আহত ৭
পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন ওয়াদুদ ভূইয়া
পাহাড়ের আলো: দীঘিনালায় শিক্ষার্থীদের মিছিলে হামলার ঘটনার জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ফাঁকাগুলি ও অর্ধ শতাধিক দোকানপাটে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। হামলায় অন্তত ৭ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর টহল জোড়দার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে মাইকিং করে উভয় পক্ষকে শান্ত হতে বার বার আহবান জানানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
লারমা স্কয়ারে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ চলাকালে একদল পাহাড়ি যুবক লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে ঘন্টা খানেক ধাওয়া-পাল্টা চলে। এ সময় পাহাড়িদের পক্ষ থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়।
এক পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পাহাড়িরা লারমা স্কয়ার এলাকায় অবস্থিত দোকাপাটে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনায় অর্ধ শতাধিক দোকানপাট পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনা নিয়ে ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় নিহতের গুজব ছড়ানো হলেও কোনো সত্যতা পাওয়া যায় নি। এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, কিভাবে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি কাজ করছে। আগুন নেভানো কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এই ঘটনায় ৫ জন আহত হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
আমাদের দীঘিনালা প্রতিনিধি মো: আল-আমিন এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সবশেষ খবর জানান, নিহত হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায় নি। আহত ৭জন থেকে ৩জনকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতোলে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। সেনাবাহিনী টহল রয়েছে।
উল্লেখ,ভোর রাতে (বুধবার) খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়াপাড়ায় চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ এনে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা কিছু পাহাড়ি। সে খাগড়াছড়ি সদরের শালবন মধ্যপাড়ার মৃত নুরনবীর ছেলে।
পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান
কেন্দ্রীয় বিএনপির কর্মসংস্থান বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়া বলেছেন, পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অতীতেও বিএনপি কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও কাজ করবে। পাহাড়ি বাঙালি ঐক্য ও একসাথে মিলেমিশে বসবাস করাই বিএনপির মূল আদর্শ বলে মন্তব্য করেন ওয়াদুদ ভূইয়া। কোন ধরণের চক্রান্তে বিএনপির কর্মীরা যাতে পা না দেয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের প্রতিরোধ করতেও আহ্বান জানান তিনি।
১৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড মহিলা দলের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াদুদ ভূইয়া এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকার পতনের আন্দোলন করাই মূল লক্ষ্য ছিলো বিএনপির। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এখন সকল জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করতে চায় বিএনপি।
ওয়াদুদ ভূইয়া বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি বজায় রাখতে জোরদার ভূমিকা রাখার জন্যেও নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোন ধরণের বিশৃঙ্খল কাজের সাথে সম্পৃক্ততা পেলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারি দেন তিনি সেজন্য নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও অনুরোধ জানিয়েছেন ওয়াদুদ ভূইয়া। এছাড়া মাঠ থেকে জেলা, সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরই সমানভাবে দলের কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানানো হয় সভা থেকে।
খাগড়াছড়ি পৌর মহিলা দলের সভাপতি সালেহা রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম সম্পাদক অনিমেষ চাকমা রিংকু, মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব রাজা, আবু তালেক জেলা মহিলা দলের সভাপতি কুহেলী, সাধারণ সম্পাদক শাহেনা আক্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক তাহমিনা সিরাজ সীমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দীঘিনালার ঘটনায় ইউপিডিএফ’র নিন্দা ও প্রতিবাদ
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ নিরন চাকমা স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেসবার্তায় দীঘিনালা সদরে পাহাড়িদের ওপর সেটলার বাঙালিদের হামলা, ঘরবাড়ি দোকানপাটে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হামলাকারী সেটলাররা নির্বিঘ্নে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ করছে। এ হামলা এখনো অব্যাহত রযেছে। ফলে কত সংখ্যক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তার বিস্তারিত জানা সম্ভব হয়নি। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে হামলা বন্ধে প্রয়োাজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং হামলাকারীদের আইনের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।